ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:৪৭:১৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

৭ বছর আগে ঘর পালানো সেই সুরমা খুঁজে পেল তার মাকে

মনির হোসেন জীবন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:১৭ পিএম, ৭ জুন ২০২০ রবিবার

৭ বছর আগে ঘর পালানো সেই সুরমা খুঁজে পেল তার মাকে

৭ বছর আগে ঘর পালানো সেই সুরমা খুঁজে পেল তার মাকে

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি কিশোরী সুরমা। কিন্তু মা যখন আবার বিয়ে করে ঘর বাঁধলেন নতুন জায়গায়, এবার সুরমা কিন্তু বিদ্রোহ করলো। উত্তাল মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপে যার জন্ম-বেড়ে ওঠা, তাকেই তো বিদ্রোহী হওয়াই মানায়। প্রিয়জন বলতে বাবা ছিলেন, তিনি নেই। মা অপরিচিত একজনের স্ত্রী। সুরমার আপন বলতে কেউ রইলো না। সুতরাং, কাউকেই কিছু বলার প্রয়োজনও হয়নি তার। সেদিনই বাড়ি থেকে অজানার পথে পা বাড়ালো নদীর নামে নাম রাখা ১৪-১৫ বছরের অভিমানী মেয়েটি। নদীর নামে মিল বলে সুরমাও কি তবে নদীর মতো দিশেহারা, গতিহারা?

এতক্ষণ যে ভূমিকাটি পড়লেন সেটি ৬-৭ বছর আগের কাহিনী। চলুন সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো জেনে নেওয়া যাক।

দ্রোহ যার শিরায় শিরায়, তাঁকে বুঝানোর সাধ্য কার?---“পড়বি পড় মালির ঘাড়ে” ?

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার কিশোরী ঘর পালিয়ে কেমন করে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলো, সে কাহিনী আজ নাই বললাম। মেয়েটির ভাগ্য ভালো। সে ধানমন্ডির এক প্রবাসীর বাসাবাড়িতে কাজ পায়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও আশ্রয়ণ। কোন বেতন নেই। সুরমা এতেই খুশী।কিন্তু সম্প্রতি সুরমার সাথে গৃহকত্রীর মনোমালিন্য হয়। সুরমা ছোটখাটো বিদ্রোহ করে বসে যেটা মেনে নিতে পারেননি কত্রী। দুই চারটা চড়ও হয়তো দিয়ে বসেছেন সুরমার মুখের ওপর! এতে আরো বেঁকে বসেন বাড়ি পালানো সেই কিশোরী যিনি আজ বেশ পরিনত। টানা অর্ধযুগের বেশি ওই বাসায় কাজ করেও বেতন হিসেবে কোনদিন টাকা পয়সা নেননি। আসলে সুরমা কি জানতেন ঢাকা শহরে বাসায় কাজ করলে বিনিময়ে বেতনও দেওয়া হয়? নাকি খাবার-আশ্রয় পেয়ে চুপ থাকতেন? বিদ্রোহ যার ধমনীতে খেলা করে, তিনি আর কতই বা পেশাদার হতে পারেন?

এত ভালো একজন কাজের মেয়ে কেই বা হারাতে চান? গৃহকত্রী এক ফন্দী আঁটলেন। ধানমন্ডি থানায় গিয়ে সুরমার বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকা ও অর্থচুরির এক অভিযোগ জমা দিলেন। কত্রী ভাবলেন মামলার ভয়ে সুরমা এবার লক্ষী মেয়ের মতো বাসার কাজে মন দেবেন।

এদিকে, মামলা না নিয়ে ধানমন্ডির উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন ঘটনাটা তদন্ত করে দেখার। কিন্তু যার শিরায় শিরায় দ্রোহ, তাঁকে কি মামলার ভয় দেখিয়ে কাবু করা যাবে? তদন্ত যখন চলমান এর মধ্যে একদিন থানায় এসে হাজির উত্তাল মেঘনার বুকে জন্ম নেওয়া আজন্ম বিদ্রোহী সুরমা। সে পুলিশের কাছে জানতে চায় তাঁর নামে নাকি বাড়িওয়ালা মামলা করেছে! সে জানায়, চুরি ডাকাতি তাঁর চরিত্রে আগেও ছিলোনা, এখনো নেই। যার বিরুদ্ধে মোটা অংকের চুরির অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে, সেই ব্যক্তি যখন থানায় এসে এমন হুংকার দেন, পুলিশকে তো তখন নড়েচড়ে বসতেই হয়।দুই পক্ষকে থানায় ডাকা হলো। পুলিশের জেরার মুখে গৃহকর্ত্রী স্বীকার করলেন সুরমা নির্দোষ। এবার তো তাহলে গৃহকত্রীর নামে উল্টো মামলা হওয়ার মতো অবস্থা। এ যেন “পড়বি পড় মালির ঘাড়ে”র মতো অবস্থা। পুলিশের জেরায় গৃহকত্রী স্বীকার করলেন সুরমা থাকা খাওয়া বাদে গত ৬-৭ বছর কাজের বিনিময়ে কোন বেতন নেননি।ভাবা যায় ঢাকা শহরে ৬-৭ বছর একটা মেয়ে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন বিনিময়ে একটা টাকা বেতন ছাড়া!

কবি নজরুল বলেছিলেন, “দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।” পুলিশের চাপে নতি স্বীকার করে এবার গৃহকত্রীকে সুরমার সব পাওনা কড়ায় গন্ডায় পরিশোধ করতে হবে।

ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফি আজ গনমাধ্যমকে জানান, তাঁরা মাসে দুহাজার টাকার কিছু বেশি হিসেবে সাত বছরে সুরমার মোট বকেয়া বেতন নির্ধারন করলেন ১৮২,০০০ টাকা। এত টাকা সুরমা পায় বাড়ির মালিকের কাছে? তিনি জানান, দুদফায় সুরমার বকেয়া পুরো টাকা শোধ করেছেন গৃহকত্রী।

পাঠক, আন্দাজ করেন তো এই যে থানায় দুপক্ষ আপোসরফা করলো, এখানে সুরমার পক্ষে কে কে থাকতে পারেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন পুলিশ সুরমার পক্ষে দেনদরবার করেছে। কিন্তু না! সুরমার পক্ষে থানায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা-বাবা! হ্যা, যাদের সাথে বিদ্রোহ করে ভোলা থেকে পালিয়ে অর্ধযুগ আগে ঢাকায় এসেছিলো কিশোরী সুরমা। আজ তারা মেয়ের ডাকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন।

সুরমার মা কান্নাজড়িত কন্ঠে পুলিশকে জানান, তার মেয়ে সেই যে বাড়ি ছাড়লো এরপরে একটা বারের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করেন নি! “প্রথম দিকে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। পরে তার আশা ছেড়ে দেই।”, বলছিলেন সুরমার মা।

তিনি আরও বলেন, অবশেষে পুলিশের ডাকে থানায় এসে ওকে আমরা পেয়েছি।

গল্পটি বাংলা সিনেমার মতোই কিছুটা মিলনাত্মক ধাঁচের। সুরমার বাবা মা তাকে এতগুলো দিন পরে খুঁজে পেলেন, আর সুরমাও পেলেন পরিশ্রমের ন্যয্য মজুরী–প্রায় দুলাখ টাকা!

এদিকে, ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফি আজ গনমাধ্যমকে বলেন, তাঁরা সুরমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চেয়েছিলেন একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে। পুলিশ পকেট থেকে বাকি ১৮,০০০ টাকা উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন যাতে দুই লক্ষ টাকার একটা ডিপোজিট হয় কিন্তু প্রমত্তা মেঘনার ঠেউয়ে বেড়ে ওঠা সুরমা নামের এই আজন্ম বিদ্রোহী এই প্রস্তাবে রাজি নন।

দ্রোহ যার শিরায় শিরায়, তাঁকে বোঝানোর সাধ্য কার?
 

তথ্যসুত্র : ডিএমপি ''সংবাদ বিঞ্জপ্তি''