ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১১:১৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

আমাদের বাড়ি

ফেরদৌস আরা রুমী | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০৪ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২৩ বুধবার

ফেরদৌস আরা রুমী

ফেরদৌস আরা রুমী

আমাদের বাড়িটা ছিল একটা মায়াবতী কিশোরী যেন
খলবলিয়ে হাসতো সারাক্ষণ
পাখ-পাখালী আর গাছ পাতারা পাখনা মেলে থাকতো ছোট্ট উঠানটায়
আমাদের সময় দেখার ঘড়ি ছিল উঠানটা
তখন কি আর অত ঘড়ি পরার চল ছিল!
উঠানের নানা স্থানে অদৃশ্য দাগ টানা ছিল আমাদের
রোদ কোন দাগটায় এলে স্কুলে যাওয়ার সময়
কোন দাগটায় এলে ভাতঘুম
কোন দাগটায় এলে খেলতে নামতে হয়
সব বলে দিত আমাদের উঠান ঘড়ি।
যেই ফলটা খেতে দারুণ মিষ্টি লাগতো
আম্মা অমনি তার বীজ পুঁতে দিতো উঠানের কোণে
অথচ বেলীর মিষ্টি গন্ধে সাপ আসতো বলে
আব্বাকে দিয়ে পুরো ঝোঁপটা উপড়ে দিলো একবারে।
রোদে-ঝড়ে-বৃষ্টিতে আমরা সাঁতার কাটতাম উঠানটায়
একবার ঠিক একঘন্টা কেঁদেছিলাম
সমস্ত ধুলো গায়ে মেখে
কেন ভাইজান আমার ঈদের জামার বর্ণনা দিয়েছিল পাশের বাড়ির ফারজানা আপুর কাছে
জামাটা পুরানো হয়ে গেলো না!
শরিফা গাছটা ফলের ভারে উঠান ছুঁয়ে ফেলতো
সেই ছোট্ট বেলা থেকে জেনে এসেছি
এই একটা গাছ আম্মা লাগায়নি
হয়তো কোন পাখি
বয়ে এনেছিল এর বীজ,
জোছনা রাতে চাঁদ হাঁটতো
আমাদের সাথে ভরা যৌবন নিয়ে
আমাদের তনু-মন স্নান করতো কুয়োর জলে
কত বাড়ি থেকে যে কত মানুষ আসতো
চেনা কি অচেনা
কুয়োর জলে একটু ভাগ বসাবে
একবার মনে হয় কারবালার তেষ্টা ভর করেছিল পাড়ায়
সবার কুয়োর জল শেষ
পানি আর কাঁকর উঠে আসছে বালতি ভরে
আমাদের কুয়োটা তখন
বুক নিংড়ে নিংড়ে অকুন্ঠ জলে ভাসিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে
আমরাও সবার তৃষ্ণা মেটানোর পরম সুখে সদর দরজা খুলে রেখেছিলাম।
আম্মার বাগান ছিল ফলের আর আমার ফুলের
উঠানটার দু'প্রান্তে দু'জনের রাজত্ব
কী ছিল না সেখানে
মানকচু গাছগুলো রাতের আবছায়ায়
বাচ্চা হাতির মতো দেখাতো
আর সে কচু খেতে গিয়ে
গলা ফুলে একসার তবু
একবারও মনে হতো না এদের নির্বংশ করা হোক!
সেবার-প্রথম ও শেষবার এই মায়াবতী বাড়ি ছেড়ে
বেশ খানিকটা দূরে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো আমাকে
সেই প্রথম আম্মাকে ছেড়ে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এতদূর যাত্রা
আমার উঠান, বাগান, কুয়োর জল
সবার কথা একে একে মনে ভেসে আসছে
কীভাবে থাকবো সবাইকে ছেড়ে!
একমাস পর আম্মাকে নিয়ে আব্বা এলেন আমাকে দেখতে
কিন্তুর আম্মার মুখটা ফ্যাকাশে-মলিন
ভাবলাম এমনিতেই ফর্সা মানুষ তারওপর একমাত্র মেয়ে বাড়ি ছাড়া, ঠিক হয়ে যাবে
নানা কথা বলি আমি, বোর্ডিং স্কুলের সবাই খুব ভালো
আমি ছোট বলে সবাই খুব আদর করে
এখানে বিকালে সাপের মতো বেঁকে ট্রেন আসে
আমরা দলবেঁধে তার আসা-যাওয়া দেখি
আম্মার কোনকিছুতে মনোযোগ নেই
আম্মা এবার বলতে শুরু করে-
তোর আব্বা বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছে
এখন আমরা একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি
আরো কী কী সব...
বিকালের ট্রেনটাও পাশ দিয়ে ছুটতে থাকে
আম্মার আর আমার সমস্ত কান্না যেন ট্রেনের তীব্র আওয়াজের সাথে মিশে যাচ্ছে
দু'জনই অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছি
অথচ কেউ কারো কান্না দেখতে পাচ্ছি না।