ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ২১:০৭:৪৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেন রিতু আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে হিটস্ট্রোকে একদিনে ১৭ মৃত্যুর রেকর্ড ঢাকাসহ ৫ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ আজ, প্রাথমিক খোলা বিপজ্জনক দাবদাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত

আল আকসা যেভাবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল

বিবিসি বাংলা অনলাইন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫৯ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ মঙ্গলবার

১৯৬৭ সালের ইসরায়েল তার আরব প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে মসজিদটি দখলে নেয়।

১৯৬৭ সালের ইসরায়েল তার আরব প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে মসজিদটি দখলে নেয়।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হামাস’ ইসরাইলের উপর তাদের আকস্মিক হামলাকে অপারেশন ‘আল আকসা স্টর্ম’ হিসাবে অভিহিত করেছিল। জেরুসালেমের এই আল আকসা মসজিদটি ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ঘনীভূত হওয়ার একটি কেন্দ্রবিন্দুকে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে মসজিদটি একটি শান্তি চুক্তির আওতায় জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশটির একটি ওয়াকফ ট্রাস্ট এটি পরিচালনা করে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে, আল আকসার মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় ইসরাইলি আগ্রাসনকে একটি বড় কারণ বলে মনে করেন।

যদিও এই দাবি অস্বীকার করে আসছে ইসরাইলি সরকার।

প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মূলত পশ্চিম তীর শাসন করেন এবং গাজার উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

চলতি বছর আরব এবং ইসরাইলিদের মধ্যে এই চলমান উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় যখন ইসরাইলি পুলিশ সহিংসভাবে এই মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং মুসুল্লিদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

ইসরাইলের দাবি, ‘সহিংস’ হিসাবে চিহ্নিত মুসলমানদের গ্রেফতার করার জন্যই পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিল।

ওই সংঘর্ষের অনেক ছবি ছড়িয়ে পড়লে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ঘটনাটি ঘটেছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে এবং ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব ‘জিউইশ পাসওভার’ ছুটির প্রাক্কালে।

এখানে আল আকসা মসজিদের ইতিহাস ব্যাখ্যা করা দরকার।

ইসরাইলে হামাসের আক্রমণ এবং গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণের পর থেকে এই বিষয়টি বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

একেশ্বরবাদী ধর্মের কেন্দ্র: ইসলাম ধর্ম মতে, ৬২০ খ্রিস্টাব্দে একই রাতে ইসলামের নবী মোহাম্মদকে মক্কা থেকে আল আকসা এবং সেখান থেকে বেহেস্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এছাড়া ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন থেকে জানা যায়, মুসলমানরা যাদের নবী বলে মনে করতেন, তারাও সেখানে প্রার্থনার জন্য গেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইব্রাহিম (আব্রাহাম), দাউদ (ডেভিড), সুলায়মান (সলোমন), ইলিয়াস (হিলিয়াহু) এবং ঈসা (আঃ) (জিসাস বা যীশু)।

পূর্ব জেরুসালেমের পুরাতন শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এই আল আকসা মসজিদ। এই মসজিদ মুসলমানদের কাছে আল হারাম আল শরীফ বা মুসলমানদের পবিত্র স্থান (নোবেল স্যাঙ্কচুয়ারি) নামে পরিচিত।

পুরো প্রাঙ্গণে মুসলমানদের দুটি পবিত্র স্থান রয়েছে। সেগুলো হল, সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট ডোম অফ দ্য রক এবং আল আকসা মসজিদ, যা কিবলি মসজিদ নামেও পরিচিত। এই সমজিদ ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।

প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই স্থানটি ইহুদিদের কাছে হার হা বায়িত বা টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত।

এই একই স্থান বা টেম্পল মাউন্ট ইহুদিদের কাছেও সবচেয়ে পবিত্র স্থান।

তারা বিশ্বাস করে যে, রাজা সলোমন তিন হাজার বছর আগে এখানে প্রথম উপাসনালয় নির্মাণ করেছিল। যেটি ধ্বংস করে দিয়েছিল ব্যাবিলনীয়রা।

ওই জায়গায় নির্মিত দ্বিতীয় উপাসনালয়টিও ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করে দেয়। এখানে একটি খ্রিস্টান ব্যাসিলিকাও ছিল যা একই সাথে ধ্বংস হয়।

সেই উপাসনালয়ের শুধুমাত্র পশ্চিম দিকের দেয়ালটিই এখনো টিকে আছে এবং এটিই ইহুদিদের প্রার্থনার স্থান।

বর্তমানে আকসা কে পরিচালনা করে?: ইসরাইলের সঙ্গে ১৯৬৭ সালে তাদের আরব প্রতিবেশীদের যুদ্ধ বাধে। ওই যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণটি দখল করে নেয়।

সেই সাথে পূর্ব জেরুজালেমের বাকি অংশ এবং পশ্চিম তীরের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এসব এলাকা তখন মিশর এবং জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং ইসরাইলের এই পদক্ষেপ কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেম ইসরাইলের দখলে থাকলেও আল-আকসা বা টেম্পল মাউন্ট এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে জর্ডান।

আল আকসার দুটি মুসলিম উপাসনালয়ের আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক হলেন জর্ডানের বাদশাহ। স্থানটি তদারকি করছে জর্ডানের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।

এই প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে, যেখানে ইসরাইলি সরকারের কেউ নেই।

অমুসলিমরাও আল আকসা পরিদর্শন করতে পারে, তবে শুধুমাত্র মুসুল্লিদেরই মসজিদ প্রাঙ্গণের ভিতরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

ইসরাইলের প্রধান র‍্যাবাই বা ইহুদিদের প্রধান ধর্মগুরু ইহুদিদের টেম্পল মাউন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ তারা মনে করেন এই স্থানটি এতোটাই পবিত্র যে এখানে পা ফেলা যায় না।

ইসরাইলের সরকার খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের শুধুমাত্র পর্যটক হিসাবে ওই পবিত্র স্থানটি দেখার অনুমতি দেয়। দিনে চার ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন এই উপাসনালয় পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়।

ইহুদিরা টেম্পল মাউন্টের নিচে ওয়েস্টার্ন ওয়ালে বা পশ্চিম দেয়ালে প্রার্থনা করে, যাকে সলোমনের নির্মিত উপাসনালয়ের শেষ অবশিষ্টাংশ বলে মনে করা হয়।

আল আকসায় কি সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে?: দুই হাজার সালে তৎকালীন ইসরাইলের প্রধান বিরোধী দলের নেতা আরিয়েল শ্যারন ডানপন্থী লিকুদ পার্টির আইন প্রণেতাদের একটি দলকে ওই স্থানে নিয়ে যান।

সেখানে তিনি তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘টেম্পল মাউন্ট আমাদের হাতে রয়েছে এবং আমাদের হাতেই থাকবে। এটি ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান এবং টেম্পল মাউন্টে যাওয়া প্রতিটি ইহুদির অধিকার।’

তার সেই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে ফিলিস্তিনিরা। এরপর বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হয়, যার ফলে শুরু হয় দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার। সেই সহিংসতার ঘটনাপ্রবাহ ‘আল আকসা ইন্তিফাদা’ নামেও পরিচিত।

ওই সংঘাতে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এবং প্রায় এক হাজার ইসরাইলি মারা যায়।

এরপর ২০২১ সালের মে মাসে, নিজেদের এলাকা থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করফিলিস্তিনিরা এবং আল আকসা প্রাঙ্গণে ইসরাইলি পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িত হয়।

যার ফলে অন্তত ১৬৩ জন ফিলিস্তিনি এবং ১৭ জন ইসরাইলি পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসলামপন্থী দল হামাস গাজা উপত্যকা থেকে জেরুসালেমের দিকে রকেট নিক্ষেপ করে। যার ফলে ইসরাইলের সাথে তাদের টানা ১১ দিন ধরে সংঘর্ষ চলে।

তিন দশকের মধ্যে গত বছর প্রথমবারের মতো, ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব পাসওভারের ছুটির মধ্যে ইসলামের পবিত্র রমজান মাস পড়ে।

একদিন ইসরাইলি পুলিশ পাসওভারকে সামনে রেখে ইহুদি দর্শনার্থীদের মসজিদ প্রাঙ্গণ ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

ইহুদি দর্শনার্থীদের কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার আগে ইসরাইলি পুলিশ যখন মসজিদ প্রাঙ্গণটি পরিষ্কার করছিল ঠিক সে সময় সংঘাত বেধে যায়।

পুলিশের দাবি বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা ওয়েস্টার্ন ওয়াল লক্ষ্য করেও পাথর ছুড়েছে।

এরপর এপ্রিল মাসে, পুলিশ আল আকসা মসজিদে অভিযান চালায়। তাদের দাবি ‘বিক্ষোভকারীরা’ মসজিদের ভিতরে প্রাথর্নাকারীদের সাথে নিয়ে স্থানটি অবরোধ করে রেখেছে।

ইহুদি চরমপন্থিরা পাসওভারের সময় টেম্পল মাউন্টে একটি ছাগল কুরবানি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এমন খবরকে ঘিরে প্রতিবাদ শুরু হয়।

রোমানরা এই উপাসনালয় ধ্বংস করার আগে বাইবেলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ওই স্থানে আগেও ছাগল বলি দেয়া যতো।

ইসরাইলি পুলিশ এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে যে তারা এমন কাজ করতে দেবে না।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন যে পুলিশকে অবশ্যই ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে...সব ধর্মের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং টেম্পল মাউন্টে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে।’

তবে মসজিদ পরিচালনাকারী ইসলামিক ওয়াকফের দাবি ইসরায়েলি পুলিশ এই অভিযানের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় বা মসজিদের পবিত্রতা ও সেখানকার নিয়মরীতিকে লঙ্ঘন করেছে।