ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১১, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৫:২২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার আজ সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি পুলিশি নিরাপত্তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা ‘নির্বাচনে পুলিশ সদস্যদের শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে’ বেআইনি ও অনুমোদনহীন সমাবেশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির মা-মেয়েকে হত্যার ‘কারণ জানাল` গৃহকর্মী আয়েশা

ঈদ বাজার ভারত-পাকিস্তানের পোশাকে সয়লাব

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৮:০২ পিএম, ৬ জুন ২০১৮ বুধবার

ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন পোশাক বাজারে নিয়ে আসে বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলো। সারাবছরে বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা চললেও, এই সময়টাকে লক্ষ্য করেই চলে তাদের মূল আয়োজন। কিন্তু ফ্যাশন উদ্যোক্তারা বলছেন, যেখানে ঈদের সময় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা চলে, সেখানে দেশীয় পোশাক থেকে আসে মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। বাকি পুরোটাই চলে ভারতীয় এবং পাকিস্তানী পোশাকের আধিপত্য।


সেখানে কেন জায়গা করতে পারছে না দেশীয় পোশাক?


বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী এলাকার বাসিন্দা মিসেস অ্যানি। কি ধরনের কাপড় কিনছেন জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, পোশাকের জন্য তার প্রধান পছন্দ ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানী কাপড়।


তিনি বলেন, "আমি যেহেতু কটন নেবো, ভারতীয় থ্রি-পিসই খুঁজছি। বনানী সুপারমার্কেটে কটনের ভালো থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী কিনে বানিয়ে নেবো। দেশীয় বলতে আড়ং এ আসলে দেশীয় ভালো পোশাক পাওয়া যায়। আর তো দেশীয় আমি খুব একটা ভালো দেখতে পাইনা।"



কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক ফ্যাশন হাউজ। উদ্যোক্তারা বলছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। বড় বড় উৎসবকে সামনে রেখে সেসব ফ্যাশন হাউজ দেশের ডিজাইনারদের তৈরি নতুন নতুন ধরনের নকশার পোশাক নিয়ে আসে। যেমনটা এবারও ঈদকে সামনে রেখে এসেছে।


দেশীয় ফ্যাশন হাউজে কিনতে আসা ক্রেতাদের কথায় উঠে আসে সাধারণত্ব এবং আরামবোধের বিষয়টি। কিন্তু অনেক ক্রেতার কাছে পোশাক বাছাইয়ে এরচেয়ে বড় বিবেচ্য-পোশাকের চাকচিক্য ও নকশা।ফলে তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিদেশী কাপড়ের পোশাক।



তাদের কথা বিবেচনায় দোকানগুলোতের বিদেশী পোশাকের পসরা। রাজধানীর সানরাইজ প্লাজার কয়েকজন বিক্রেতা জানাচ্ছেন, তাদের শো-রুমে দেশীয় কোনও কাপড় নেই, সব ভারতীয়।


বসুন্ধরা সিটি, বনানী সুপার মার্কেট কিংবা পিংক সিটি সহ অনেক মার্কেটের বহু দোকান এখন ভারতীয় ড্রেসে সয়লাব। এরপরেই আছে পাকিস্তানের কাপড়। তাছাড়া চাইনিজ কাপড়ও বিক্রি কচ্ছে।


কয়েকজন ক্রেতা বলছিলেন, দেশীয় বুটিকের কাপড় তুলনামূলক `সিম্পল` বলে মনে হয় তাদের কাছে যা তাদের ভাষায় ততটা `গর্জিয়াস` নয়।


যদিও বাংলা বর্ষবরণ, কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদিকে সামনে রেখে দেশীয় কাপড় বা পোশাকের বাজারটি বেশ জমে ওঠে, কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট থাকে মূলত ঈদ উল ফিতরকে ঘিরে। সেখানে ভারতীয় বা পাকিস্তানী কাপড়ের প্রতি এই আগ্রহ দেশের বুটিক শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে, বলছেন বুটিক হাউজ বিবিয়ানার সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার।


"আমরা যেভাবে ডিজাইন করে যাচ্ছি সেগুলো দিয়েই কিন্তু তিনবছর আগে ভালো ব্যবসা করে গেছি। কিন্তু তখন কেন করতে পেরেছি? কারণ তখন এই মার্কেট এত ওপেন ছিলো না। প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে আমরা ডিজাইন নিয়ে তত কাজ করছি। আসলে মার্কেটটা এখন এত ওপেন হয়ে গেছে, এমনকি ওইসব দেশ থেকে বিশেষ করে ইন্ডিয়া থেকে লোকজন এসে হোটেল ভাড়া করে পুরোদমে বিজনেস করে, এই সিজনটাতে কাজে লাগিয়ে তারা চলে যাচ্ছে।"



তিনি বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। লিপি খন্দকার আরও বলেন, "ভারত থেকে এই পণ্যগুলো যদি যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আসে, তাহলে কিন্তু দামের বিষয়টা আমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় আসবে না।"


বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর সংগঠন ফ্যাশন উদ্যোগের এক জরিপের তথ্য অনুসারে ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সেখানে দেশের বুটিক হাউজগুলোর ব্যবসা মাত্র চার হাজার কোটি টাকার মতো। তার মানে বাকিটা বিদেশের কাপড় আর পোশাকের দখলে।


কিন্তু দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো কেন পিছিয়ে? এর কারণ পোশাকের মান নাকি ডিজাইনের অভাব?


এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ এর সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনাররা বিপ্লব সাহা বলেন, "যে কাপড়গুলোর সাথে আমাদের কাপড়ের তুলনা করা হয় আসলে আমাদের নিজস্ব ধরণ থাকে, আমরা রিসার্চমূলক কাজ করি। আমরা চাইলেই তো ইন্ডিয়ান নেটের কাপড় বানাবো না।এখন কথা হচ্ছে যদি বাংলাদেশের আরও ৭/৮টা উৎসব দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে ঈদে কেন পারবে না? ঈদ কি ভিনদেশী উৎসব?"


তিনি বলেন, "অজস্র কাপড় যেগুলো কর ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকছে। কেউ জানেনা, কারো অগোচরে ঢুকছে তাতো না। দায়িত্ব আসলে সরকারের-এটা দেশে কতটা দেশী কাপড় বিক্রি হবে, কতটা বিদেশী কাপড় বিক্রি হবে সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারে।" 


তিনি আরও বলেন, ``স্যাটেলাইটের যুগে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই টিভি-সিনেমা দেখে চাইছে ভিনদেশী কাপড়ে সাজতে। এটা ব্রেইনওয়াশ হওয়ার মতো।``


বিশ্বরঙ এর বিপ্লব সাহা বলেন, "অজস্র কাপড় যেগুলো কর ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকছে। কেউ জানেনা, কারো অগোচরে ঢুকছে তাতো না।"


বিপ্লব সাহা মনে করেন, বিদেশী পোশাকের সাথে পাল্লা দিয়ে নিত্য নতুন ডিজাইন তারাও আনছেন কিন্তু দেশীয় কাপড়ের স্বকীয়তা বজায় রেখে। সেখানে আপোষ করতে চান না তারা।


বিদেশী পোশাক বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় তারা ভারতীয় বা পাকিস্তানী পোশাক আনছেন। ক্রেতারা বিভিন্ন অনলাইন এবং টেলিভিশন দেখে এসবের খোজ করছেন।

 

আর দেশের ডিজাইনাররা বলছেন, ডিজাইন বা কাপড়ের মানের চেয়েও এখানে তারা মুখ্য মনে করছেন ক্রেতাদের মানসিকতাকে। যেভাবে দেশের দোকানগুলোতে দেদারসে অন্য দেশের পোশাক বিক্রি হচ্ছে সেখানে তারা অনেকটাই অসহায় বোধ করছেন-যেখানে তদারকির কেউ নেই।

সূত্র : বিবিসি বাংলা