ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ২:৫৮:০৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক: শুধু রঙ বদলায়

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৫১ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে লেখক আইরীন নিয়াজী মান্না।  ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।

ক্যাপ্টেন টিলি পার্কে লেখক আইরীন নিয়াজী মান্না। ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।

ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক! নিউ ইয়র্কের জামাইকা হিল সাইডের এ পার্কজুড়ে চলছে এখন রঙের খেলা। সবুজ-হলুদ-কমলা-লাল-খয়েরি রঙের পাতার পল্লবে নতুন রূপ ধারণ করেছে পার্কটি। 
শেষ বিকেলে সিঁদুর রঙা সূর্যটার আলো যখন এসে পার্কের পুকুরের পানিতে আছরে পরে তখন মন বলে ওঠে, তবে এই কি স্বর্গ! মাথার ওপর নীল আকাশজুড়ে শুভ্র মেঘের ভেলা, চারদিকে গাছগাছালি, পাহাড়ি পথ, পুকুর আর পাখ-পাখালির কলরবে এক মূখরিত পরিবেশ এখানে।
গ্রীষ্মে সবুজের চাদরে ঢাকা থাকে পার্কটি। শীতের ঠিক আগে আগে এই অক্টোবর-নভেম্বরে সবুজ পাতারা হয়ে যায় হলুদ আর কমলা রঙের। চারদিকে তাকিয়ে মনে হয় আগুণ লেগেছে। পাতা ঝরার বেলায় এই রঙের মেলা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আবার শীতে একেবারে ভিন্ন রূপ। শ্বেতশুভ্র তুষারে যখন ঢেকে যায়, তখন দেখতে খুব অচেনা লাগে। এ সময় পার্কজুড়ে চোখে পড়ে পত্রহীন গাছের কঙ্কাল।   ​
গতবার মার্চ মাসের শেষ দিকে আমি যখন নিউ ইয়র্ক পৌঁছাই তখনও শীতের তীব্রতা রয়ে গেছে বেশ। পার্কের ফুলহীন, সবুজপাতাহীন গাছগুলো আমার চোখে ধরা দেয় অন্য এক রূপে। তারপর মাত্র দু মাসেই আমার চোখের সামনে একটু একটু করে সবুজের অরণ্যে পরিণত হয় পার্কটি। আর এ বছর পহেলা অক্টোবর আমি যখন নিউ ইয়র্কে পা রাখি তখন সবুজ পাতারা হালকা পরিবর্তণ হচ্ছে। আজ নভেম্বরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে শুধু টিলি পার্ক নয় পুরো শহর যেন হলদু আর কমলা রঙে সেজেছে। দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। 
জামাইকায় আমার বোনের বাসা। বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তা পেড়িয়ে দু কদম হেঁটে গেলেই ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক। আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা পার্কটি আশেপাশের কাঠের তৈরি বাড়িগুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। 
প্রায় প্রতিদিন আমরা দু’বোন কোনো দিন সকালে, কখনো বা বিকেলে আবার কোনো সময় নির্জন দুপুরে পার্কে বসে কত যে গল্প করি। চারদিকের রূপ দেখে দেখে যেন আর শেষ হয় না! 
জামাইকা হিল সাইডের এই পার্কটিতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে। বাঙালিদের বেশ দেখা মেলে এখানে। গাছের ছাঁয়ায় দু‘দন্ড বসে ক্লান্তি দূর করে কত চেনা-অচেনা মানুষ। নির্জন দুপুরে অথবা বিষন্ন বিকেলে এ পার্কে সময় কাটায় অনেকেই। 
পার্কটি আয়তনে ৯ দশমিক ১৬ একর। সাজানো, পরিপাটি ছোট্ট একটি পার্ক। অসংখ্য গাছ-গাছালিতে ভরা। নাম না জানা পাখির নানা ডাক আর পাতা ঝরার শব্দে এখানে সময় কেটে যায় চমৎকার।  
এ পার্কে বাচ্চাদের খেলার জন্য চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে স্লিপার, দোলনা, ক্লাইমিং ওয়ালসহ নানা রকম খেলনা। প্রতিদিন বিকেলে আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শিশুর দল মা-বাবার হাত ধরে ভিড় জমায় টিলি পার্কে।
টিলি পার্কের প্রধান আকর্ষণ টলটলে স্বচ্ছ পানির একটি পুকুর। নাম ‘গুজ পন্ড’। এ পুকুরে মহানন্দে ভেসে বেড়ায় হাঁসের দল। সাদা বড় বকসহ আরো নানা রকম পাখি অবাধে বিচারণ করে এখানে। পুকুরের মাঝখানে জংলি ঘাসে ঘেরা এক টুকরো দ্বীপের মতো জায়গা রয়েছে। পাখিদের প্রধান আশ্রয়স্থল ওটি।
পার্কটির নামকরণ নিয়ে আছে এক অসাধারণ ইতিহাস। জামাইকা এলাকায় বসবাসকারী ধনাঢ্য এক পরিবারের সন্তান ক্যাপ্টেন টিলি। তার জন্ম হয় ১৮৬৩ সালের কোন একদিন। তারা পুরো নাম জর্জ এইচ টিলি (১৮৬৩-১৮৯৯)। ‘আর্মি সিগনাল’ গ্রুপের হয়ে ১৮৯৮ সালের স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। যুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন টিলি ফিলিপিন্স এবং প্যারিসে দায়িত্বপালণ করেন। সেই যুদ্ধে ১৮৯৯ সালে তিনি শহীদ হন। সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ৩৬। পরে তার স্মৃতি রক্ষার্থে পার্কটির নামকরণ করা হয় ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক।
পার্কের জায়গাটি একসময় টিলি পরিবারেরই ছিল। পরে মালিকানা দেওয়া হয় ‘হাই ল্যান্ড পার্ক সোসাইটি’র কাছে। ১৯০৮ সালে পার্ক কর্তৃপক্ষ মাত্র এক ডলারের বিনিময়ে এটিকে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। শর্ত ছিল, জায়গাটিকে কেবল পার্ক হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। এক সময় ‘হাই ল্যান্ড পার্ক’ বলা হলেও ১৯৩৫ সালে নাম বদলে করা হয় ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক।
এই পার্কে স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের বেশ কয়েকটি স্মৃতি স্মারক রয়েছে। বড় একটি স্ট্যান্ডে গৌরবে উড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। পার্কের প্রধান গেইটের পাশে লিখে রাখা হয়েছে পার্কটির ইতিহাস। 
স্থানীয় মানুষদের প্রিয় মিলনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে টিলি পার্ক। এমনকি বিভিন্ন মেলা ও পিকনিকসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয় এখানে।
ছোট এই পার্কটি বৈচিত্রে ভরপুর। রক্ষণাবেক্ষণও অসাধারণ। গুজ পন্ডকে ঘিরে রয়েছে একটি ওয়াকিং ট্রেইল। ঘূর্ণায়মান মসৃণ এই পথ ধরে প্রতিদিন সকাল-বিকেল মানুষ হেঁটে বেড়ায়। জগিং করে। শিশুরা ফুটবল খেলে। ছোট ছোট সাইকেল নিয়ে মেতে ওঠে খেলায়। সবুজ ঘাসকে বাঁচিয়ে কালো পিচঢালা মশ্রিণ পথ তৈরি করা হয়েছে পার্কের বিভিন্ন প্রান্তে হেঁটে যেতে।
পুকুরটির চারপাশে কাঠের বেঞ্চ ক্লান্ত কিংবা উদাস পথিককে আশ্রয় দেয়। বসে থাকতে ভালো লাগে বেশ। পার্কের মাঝামাঝি জায়গাতেও বেশ কিছু কাঠের বেঞ্চ রয়েছে আগতদের বসার জন্য। 
চারদিক দিয়েই পার্কটিতে প্রবেশ গেইট রয়েছে। পার্কটির এক পাশে রয়েছে এক খণ্ড পাহাড়ি পথ। সেই পথের দুই ধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজি যেন সবাইকে অভিবাদন জানায়। ক্যাপ্টেন টিলি পার্ক সারা বছরজুড়ে শুধু রূপ বদলায়। সবুজ-হলুদ-কমলা রঙ আর শুভ্র সাদা তুষারে সে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় পথিকের চোখে।
জামাইকা, নিউ ইয়র্ক 
১৬ নভেম্বর ২০২১