ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৬:১৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রাজধানীতে ফিরেছেন ২১ লাখেরও বেশি সিমধারী ভাসানটেকে আগুন: মায়ের পর মারা গেলেন মেয়েও ফরিদপুরে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১১ রাজধানীতে ফিরছে মানুষ লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে ১৫ জনের মৃত্যু

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, প্রধান আসামি বাদল গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু নির্যাতনকারীরা তার পোশাক কেড়ে নিয়ে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে সম্ভ্রম রক্ষার চেষ্টা করেন, হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন এবং তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং এক যুবক কয়েকবার ওই নারীর মুখে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। সে তার নগ্ন ছবি ধারণ করে। একজন হাত উঁচিয়ে তাকে ইন্ধন জোগায়। এ সময় ঘটনাটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেবে বলে উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেইসবুক’ ‘ফেইসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।

জানা যায, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে একদল যুবক ও কিশোর। ছেলের বয়সী ওইসব কিশোর-যুবকের পায়ে ধরেও রেহাই পাননি ৩৭ বছর বয়সী ওই নারী। ভয়ে ৩২ দিন আগের ঘটনাটি কাউকে জানাতেও পারেননি নির্যাতিতা কিংবা তার স্বজনরা। ২ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র রোববার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হলে তা জানাজানি হয়।পরে রাতেই থানায় পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নির্যাতিতা নারী।

রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত র‌্যাব-১১-এর সাঁড়াশি অভিযানে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।

তিনি জানান, দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আমাদের কাছে খবর আসে, জড়িত কয়েকজন গা ঢাকা দেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। ওই খবরে র‌্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। মধ্যরাতে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এলাকা থেকে এবং ভোরে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।নির্যাতিতা নারীকে উদ্ধার করে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা হেফাজতে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। এই সুযোগে স্থানীয় যুবক আবদুর রহিম ও রহমানসহ কয়েকজন তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে এবং অশালীন প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে সম্প্রতি তার স্বামী ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতেও স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে আবদুর রহিমসহ কয়েকজন রাত ১০টার দিকে তাদের ঘরে প্রবেশ করে ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ এনে ওই নারীকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতন ও তার ভিডিও ধারণ করে।

নির্যাতিতার বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেননি তারা। ওই যুবকদের ভয়ে ঘটনার পর তার মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।

একলাশপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তার স্বামী তার কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েক যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করে। ঘটনার দিন ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তার স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, বিকেলে একলাশপুরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ওই নারীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তার নাম আবদুর রহিম। তার বাড়ি জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তারা বিষয়টি জানতে পারেন এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। বিকেলে এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধ্যার আগে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, রাতে এই ঘটনায় জড়িত আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম আব্দুর রহমান। বাকিদের গ্রেপ্তারে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট কাজ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, অপরাধীরা যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন বা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

-জেডসি