ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৮:৩৯:২৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

ঘাস রঙের বাঁশপাতি : আইরীন নিয়াজী মান্না

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১২ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঁশপাতি পাখি।  ছবি: সোমা দেব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঁশপাতি পাখি। ছবি: সোমা দেব।

ট্রি-ট্রি-ট্রি মিষ্টি শব্দে ওরা সারা আকাশ মাতিয়ে রাখে। শেষ বিকেলে দূর থেকে দেখে ওদের গায়ের রঙ বোঝা মুশকিল। কিন্তু লেজের নিচ দিয়ে ঝুলে থাকা লম্বা কাঠির মতো কাঁটাটি দেখে সহজেই চেনা যায়। এটি আসলে আমাদের অতি পরিচিত বাঁশপাতি পাখি। অনেকে ওকে সুঁইচোরা নামেও ডেকে থাকে।

প্রায় দুই যুগ আগে আমি প্রথম এই সুন্দর পাখিটি দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে। একটি ইউক্যালিপটাস গাছের ডালে আলতো ভঙ্গিতে বসে ছিলো পাখিটি। তারপর শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অনেকবার দেখেছি বাঁশপাতি পাখি।

এই সেদিন দেখে এলাম ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ায় বাংলার স্বাধীন সম্রাট সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহর সমাধিস্থলে। এই সমাধিস্থলের চারপাশের আম-কাঁঠাল আর শিল-কড়াইয়ের ডালে ডালে এবং মুক্ত আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে বাঁশপাতি এতো মিষ্টি সুরে ডাকছিলো যে, ওদের ডাক শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি।

লিকলিকে, ঘাস রঙের বাঁশপাতি পাখির আকৃতি চড়াই পাখির মতো। ওদের মাথায় আর ঘাড়ে লালচে বাদামির ছোপ আছে। চঞ্চু কালো এবং সরু, সামান্য বাঁকানো। চোখ ও গলায় কালো টারা দাগ রয়েছে। চিবুকের নিচের অংশের পালকের রঙ হালকা ফিরোজা। লেজের মাঝখানের লম্বা পালক দুটির প্রান্ত থেকে দুটি লম্বা কাঠির মতো কাঁটা নিচের দিকে নেমে গেছে।

ব্যস্ত রাজধানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে দেশের সব অঞ্চলেই বাঁশপাতি দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার ওপর টেলিফোন ও বৈদ্যুতিক তারের ওপর ওরা বসে থাকে দল বেঁধে। আবার জোড়ায় জোড়ায় এক দল পাখিকে দূরের প্রান্তরে, আবাদি জমিতে, ঘাসের চারণভূমিতে বা জঙ্গলের পরিষ্কার জায়গায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

বেড়ার খুঁটিতে অথবা ঝোপের মাথায় বসে বাঁশপাতি পাখি কোনো উড়ন্ত কীট-পতঙ্গ দেখতে পেলে সাবলীল ভঙ্গিতে উড়ে গিয়ে শিকার ধরে আবার আগের জায়গায় এসে বসে। সূর্যাস্তের সময় বাঁশপাতি পাখির দল দল বেঁধে আশ্রয় নেয় ঝাঁকরা পাতাওয়ালা গাছের ডালে। সেখানেই এক সঙ্গে রাত্রীযাপন করে সকলে।

বাঁশপাতি পাখির প্রিয় খাবার মৌমাছি। এছাড়াও ওরা ফড়িংসহ অন্যান্য কীট-পতঙ্গ খেয়ে থাকে। শীতের শেষে ঢালু ক্ষেতের আইলে কিংবা রাস্তার ধারে মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গের মতো বাসা বানায়। এই সুড়ঙ্গ দৈর্ঘ্যে কখনো কখনো এক মিটারের মতো হয়। গ্রীষ্মকালে এই বাসায় ৫ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে। গোলাকৃতির এই ডিমের রঙ সাদা। বাবা-মা মিলেই বাসা বানায় এবং বাচ্চাদের যত্ন নেয়।

বাঁশপাতি পাখির ইংরেজি নাম Green Bee Eater (গ্রিন বি ইটার)। বৈজ্ঞানিক নাম Merops Orientalis।

বাঁশপাতি আমাদের স্থানীয় পাখি। সবুজ বাঁশপাতি ছাড়াও আমাদের দেশে আরো দুই রকমের বাঁশপাতি পাখি রয়েছে। এরা হলো বড় পাহাড়ি বাঁশপাতি এবং হলদে মাথা বাঁশপাতি।

আইরীন নিয়াজী মান্না: আহবায়ক, বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটি (বিবিডব্লিউএস)।