ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৭:৫৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

টিউলিপ এখনো বাংলাদেশের ভোটার, আছে পাসপোর্ট, এনআইডিও

উইমেননিউজ ডেস্ক  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি, তিনি কেবলই যুক্তরাজ্যের নাগরিক। কিন্তু অনুসন্ধানে তাঁর বাংলাদেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ২৪০ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস-এর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকা যৌথভাবে কাজ করেছে। এ নিয়ে আজ দুই পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রভাবশালী এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দাবি করে আসছেন, তিনি কেবলই ব্রিটিশ নাগরিক। কিন্তু হাতে আসা নথিতে দেখা যাচ্ছে, টিউলিপের নামে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। তিনি এখানকার ভোটার। বাংলাদেশি পাসপোর্টও করেছিলেন তিনি।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত নথিগুলো নিয়ে বাংলাদেশের ওই দৈনিক পত্রিকা ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে যাচাই করে এসব নথির সত্যতা পাওয়া গেছে।

নথিপত্রে দেখা যায়, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হয় ২০১১ সালে। তাতে তিনি ঢাকার ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, সেটা তাঁর খালা শেখ হাসিনার বাসা সুধা সদন।

এনআইডির যেসব তথ্য ছাপা থাকে, তার বাইরে আরও কিছু তথ্য নিবন্ধনের সময় দিতে হয়। সেগুলো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এনআইডি তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত থাকে। এই তথ্যভান্ডারে টিউলিপের এনআইডি-সংক্রান্ত সব তথ্যও সংরক্ষিত আছে।

এনআইডিতে টিউলিপের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে ‘বেসরকারি চাকরি’। জন্মস্থান ঢাকা। ভোটার এলাকা ধানমন্ডি (সড়ক ৩-৫)। তাঁর এনআইডির তথ্যে ট্যাগ হিসেবে আছে, ‘মাইগ্রেটেড’ বা অভিবাসী। নির্বাচন কমিশনের অধীন এনআইডি সার্ভারে টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্টের নম্বরও উল্লেখ রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার পরিবারের ১০ সদস্যের এনআইডি ‘লক’ করে দেয় ইসি। এর মধ্যে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের এনআইডিও রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান ইসির সঙ্গে এনআইডি সেবার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ, তারা লক করা এনআইডির তথ্য দেখতে পায় না। ব্যাংক সেবা, মুঠোফোনের সিম কেনা, জমি নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কাজে এনআইডির সঠিকতা যাচাই করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এনআইডি লক থাকলে এ ধরনের সেবা পেতে সমস্যা হয়।

গত ১২ আগস্ট যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের এক মুখপাত্র বলেন, ‘টিউলিপ কখনো বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি এবং শৈশবের পর থেকে কোনো পাসপোর্টও রাখেননি।’

টিউলিপ অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছেন, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক নন। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে সাংবাদিকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কি বাংলাদেশে আটক এক ব্রিটিশ প্রশিক্ষিত আইনজীবীর মামলায় হস্তক্ষেপ করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? আমি ব্রিটিশ, সাবধানে বলুন, আমি ব্রিটিশ এমপি...আমি বাংলাদেশি নই।’

১৯ বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশি পাসপোর্ট

কিন্তু বাংলাদেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, টিউলিপের নামে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। ওই পাসপোর্ট ইস্যু করেছিল লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১১ সালে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পরবর্তী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন টিউলিপ। এরপর তাঁর নামে দ্বিতীয় পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় পাসপোর্টে আবেদনের ধরনে তিনি ‘নতুন আবেদনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। পাসপোর্টে নাম দেন টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। বাবার নাম ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক, মায়ের নাম রেহানা সিদ্দিক। স্থায়ী ঠিকানা দেন বাড়ি নম্বর ৫৪, সড়ক নম্বর ৫, সুধা সদন, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। জাতীয়তা বাংলাদেশি। জন্মস্থান লন্ডন।

পাসপোর্টের ফরমে জরুরি যোগাযোগের ঘরে মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম লেখা হয়েছে। তিনি টিউলিপের চাচা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।

২০১১ সালে টিউলিপের নামে যখন দ্বিতীয় পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, তখন তাঁর খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি।

তখন ঢাকায় ছিলেন টিউলিপ

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পাসপোর্টের নথি অনুযায়ী, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নবায়নকৃত বা দ্বিতীয় বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। সেই মাসেই টিউলিপ মা (শেখ রেহানা) ও খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে ঢাকায় সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

দ্য টাইম–এর অনুসন্ধান বলছে, সেই সময়কার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি টিউলিপ ঢাকায় এক সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। দুই দিন পর তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে মালয়েশিয়ার ফার্স্ট লেডির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাসপোর্ট ডেটাবেজ অনুযায়ী, তাঁর পাসপোর্ট ১৭ জানুয়ারি সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত ছিল।

টিউলিপ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যান। ২০১৩ সালে তিনি মস্কোয় যান খালার রাষ্ট্রীয় সফরে দেখা করতে। সেখানে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও ছবি তোলেন।

২০১৩ সালে মস্কো সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে হাসিনার সঙ্গে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক 
২০১৩ সালে মস্কো সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে হাসিনার সঙ্গে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকফাইল ছবি

চলতি বছরের শুরুর দিকে জানা যায়, টিউলিপ লন্ডনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির দেওয়া বাড়িতে থেকেছেন। প্রথমে তিনি দাবি করেছিলেন, লন্ডনের কিংস ক্রসে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাটটি তাঁর বাবা-মা দিয়েছেন। তবে পরে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে অর্থায়ন করেছিলেন আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফ।

গত মাসে গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিউলিপ সিদ্দিক জানান, তিনি সরকারের কাজে বিভ্রান্তি তৈরি না করতে পদত্যাগ করেছেন। তিনি মনে করেন, খালা শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বন্দ্বে তিনি এখন ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার’।

নাগরিকত্ব ত্যাগের প্রমাণ নেই

বাংলাদেশে যাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তাঁরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন। টিউলিপ যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর মা–বাবা উভয়েই বাংলাদেশে জন্মেছেন। তাই তিনি একই সঙ্গে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রাখতে পারেন, যেহেতু উভয় দেশই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশের নাগরিক হতে গেলে শপথ নেওয়ার আগে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়। তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিক হতে হলে শপথ নিতে হয় না, ফলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয় না। বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো নাগরিক বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব থাকবেন। কেউ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে চাইলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের মাধ্যমে সেটা করতে পারেন।

টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন কি না, সেটা জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নেওয়া হয়। সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক নাগরিকত্ব ত্যাগের কোনো আবেদন এখন পর্যন্ত করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি দুই দেশের নাগরিক হতে পারেন। এতে আইনি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি সেটা স্বীকার করছেন না। বোঝা যাচ্ছে টিউলিপ সিদ্দিক অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন।

টিউলিপের মুখপাত্র যা বললেন

টিউলিপ এখনো বাংলাদেশের ভোটার। তাঁর এনআইডি, পাসপোর্টসহ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্য জানতে তাঁর আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের কাছে গত ৩১ আগস্ট ই–মেইল করা হয়। এরপর দুই দফা তাগাদা দিয়ে ই–মেইল করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে এই বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টাইমসকে টিউলিপ সিদ্দিকের পক্ষ থেকে তাঁর একজন মুখপাত্র বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে বলা হয়, প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ টিউলিপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা রটাচ্ছে, যদিও একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণও হাজির করতে পারেনি।

লন্ডনে টিউলিপের ব্যবহৃত সেই ফ্ল্যাট কেনা হয় অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে
টিউলিপের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এখন তারা তথাকথিত বিচারপ্রক্রিয়াকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য জাল নথি ছড়াচ্ছে। টিউলিপ সিদ্দিক কখনো বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি, এবং শৈশবের পর থেকে কোনো পাসপোর্ট রাখেননি। এটি তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।’ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীদের নীতিমালাবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস সিবিই ইতিমধ্যে বিস্তারিত তদন্ত শেষে ঘোষণা দিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিক কোনো অনিয়ম করেননি।’

জন্মস্থান নিয়ে দুই রকম তথ্য

টিউলিপের এনআইডিতে জন্মস্থান ঢাকা এবং পাসপোর্টে জন্মস্থান লন্ডন লেখা। এর বাইরে বাকি ব্যক্তিগত তথ্য একই আছে।

এনআইডিতে টিউলিপের জন্মস্থানের তথ্য ভুল রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডি-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাগনির মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির এনআইডি ফরমে থাকা তথ্য যাচাই বা এ নিয়ে প্রশ্ন করার মতো অবস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের থাকে না। তা ছাড়া বাংলাদেশে এনআইডিতে নিজের নাম, মা-বাবার নাম, জন্মতারিখ, স্থান ইত্যাদি ভুল হরহামেশা থাকে। এসব ভুল সংশোধনের অসংখ্য আবেদন এখনো পড়ে আছে।

 সর্বশেষ ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের জারি করা এক পত্রে বলা হয়, এনআইডি সংশোধনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৯ লাখ ৭ হাজার ৬৬২টি এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই ছয় মাসে এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদন পড়েছিল ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৬টি।

টিউলিপের পাসপোর্ট ও এনআইডিতে ধানমন্ডির সুধা সদনের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। তাঁর আয়কর বিবরণীতে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশাপাশি গুলশানের ৪ নম্বর রোডের তাঁর বাবা শফিক সিদ্দিকের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে টিউলিপকে চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে এসব মামলা করা হয়েছে। টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট, এনআইডি ও ভোটার তালিকায় থাকা ঠিকানায় তাঁকে সমন পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ মামলা প্রমাণের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে।


দ্বৈত নাগরিকত্বের গোলকধাঁধা

দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে এর আগে কথা উঠেছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে (পুতুল) নিয়েও। তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডারও নাগরিক। যদিও তিনি বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হন। দুদক বলছে, ওই নির্বাচনে মনোনয়নকালে সায়মা ওয়াজেদ কানাডার নাগরিক ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রশ্নটি নৈতিকতার। সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়নই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। গত ১১ জুলাই সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সায়মা ওয়াজেদের পর আলোচনায় এল টিউলিপ সিদ্দিকের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি।

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লন্ডন ও বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। দুর্নীতির নানা অভিযোগ ও সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

দুদকের মামলায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও বিচার কার্যক্রম শুরু করেছেন। টিউলিপ বাংলাদেশের এসব মামলার বিষয়কে তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছেন। (সূত্র: গার্ডিয়ান, ১৪ এপ্রিল ২০২৫)

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) খান মো. মঈনুল হাসান (লিপন) বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার চালানো হচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সরকারি দপ্তরগুলোতে ব্রিটিশ এই এমপির নাগরিকত্বের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেলেও তিনি নিজেকে কেবলই ব্রিটিশ দাবি করে যাচ্ছেন। ফলে টিউলিপ সিদ্দিকের দ্বৈত নাগরিকত্বের এই গোলকধাঁধা বাংলাদেশের মতো যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনেও কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছে।