ঢাকা, শুক্রবার ১৯, ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৩:২৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেছেন তারেক রহমান আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান ডিএমপি কমিশনারের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আবারো আগুন-ভাঙচুর প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর-আগুন

নলছিটিতে শোকের মাতম

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে তাঁর জন্মস্থান ঝালকাঠির নলছিটিতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে (রাত পৌনে ২ পর্যন্ত) নলছিটিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

হাদির মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকায় তাঁর বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা ছুটে আসেন। কান্না, আহাজারি আর শোকাবহ পরিবেশে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার রাতে হাদির পরিবারের সদস্যরা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ বা কথা বলেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকালে স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা কথা বলবেন বলে জানা গেছে।

হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবেশী, সহপাঠী ও শুভানুধ্যায়ীরা দ্রুত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। হাদীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, একাধিক সহপাঠী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিকে হাদি হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে নলছিটি পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সড়কের ওপর টায়ার ও খড় জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেত্রী লিমা আক্তার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও জড়িতদের গ্রেফতারে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

উল্লেখ্য, ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকার মৃত মাওলানা শরিফ আব্দুল হাদির ছেলে। তারা তিন ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে হাদি ছোট। বর্তমানে তাঁর বাসায় অবস্থান করছেন ছোট বোন মাছুমা সুলতানা বিন হাদি ও ভগ্নিপতি আমির হোসেন। শোকাহত পরিবারটির পাশে থাকতে আত্মীয়স্বজনেরা বাড়িতে জড়ো হচ্ছেন।

প্রতিবেশী রিয়াজ হোসেন বলেন, হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে এলাকাবাসী অত্যন্ত শোকাহত। হাদির হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। জুলাই বিপ্লবের পরে হাদির মতো একজন বীরযোদ্ধাকে কেন নিরাপত্তা দেওয়া হলো না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত দেড়টা) ওসমান হাদির হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে নলছিটিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

ওসমান হাদি তার বাবার মাদ্রাসা (যে মাদ্রাসায় তার বাবা উপাধ্যক্ষ ছিলেন) নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় তিন বছর পড়াশোনার পর ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ও বক্তৃতায় পারদর্শী ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

২০২৪ সনে সরকার পতনের আন্দোলন এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির কর্মকাণ্ড দেশ- বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। অল্প দিনের মধ্যেই ওসমান হাদি দেশের মানুষের কাছে একজন পরিচিত ও প্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন।

ওসমান হাদি ২০২০ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাবপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুবেদার সুলতান আহমেদের মেয়ে রাবেয়া শম্পাকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ২০২৪ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

প্রসঙ্গত এর আগে ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সম্মুখে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার শেষে খুলি খোলা রেখে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০ (দশটার) টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।