ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১১, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৯:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার আজ সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি পুলিশি নিরাপত্তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা ‘নির্বাচনে পুলিশ সদস্যদের শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে’ বেআইনি ও অনুমোদনহীন সমাবেশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির মা-মেয়েকে হত্যার ‘কারণ জানাল` গৃহকর্মী আয়েশা

বাবুরহাটে জমজমাট ঈদ কেনাকাটা

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ২৯ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ‘বাবুরহাট’। প্রাচীনতম জনপদ নরসিংদীতে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট। এই কাপড়কে কেন্দ্র করে নরসিংদীর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে সারা দেশে। পাইকারি কাপড় মানেই যেন নরসিংদী। আর এই কাপড়ের বাজারের নামই হলো ‘বাবুরহাট’। বাবুরহাটে মোকাম করার জন্য দেশের বড় বড় কাপড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। এখানে মোকাম না করলে তাদের ব্যবসার অপূর্ণতা থেকে যায়।

 

হিন্দু সম্প্রদায়ের এক জমিদার বাবু এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তিনিই এর নাম দেন ‘বাবুরহাট’। নামে বোঝা যায় যেন অনেকটা বাবুদের হাট ছিল এটি। আসলেই এক সময় মেঘনা নদীর পাড়ঘেঁষা এই বাজারে বিভিন্ন এলাকার বাবুরা তাদের উৎপাদিত কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য মোকাম করতেন বলে জানান এখানকার প্রবীণরা। কিন্তু এখন আর বাবুরহাট বাবুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটি সার্বজনীন বাজারে রূপ নিয়েছে।

 

এই বাজারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় গড়ে উঠেছে লাখো তাঁতশিল্প। আর এসব তাঁতশিল্পে উৎপাদিত হয় বিভিন্ন ধরনের কাপড়। এসব কাপড় বাবুরহাটে নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা।

 

স্থানীয় জমিদার হলধর সাহা ১৯৩৪ সালে নিজের প্রায় ১১ একর জমিতে বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। এমন কোনো কাপড় নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। ৮৩ বছরের পুরনো পাইকারি এই কাপড়ের হাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি কোটি টাকার কাপড়। বছরের অন্যান্য সময় প্রতি সপ্তাহে বেঁচা-কেনা হয় ৫ থেকে ৭শ` কোটি টাকা।

 

আর ঈদ মৌসুমে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকার ঘর। বাড়তি কেনাবেচাকে নির্বিঘ্ন করতে এ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাজার কমিটি। নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাবুরহাট এক সময় শুধু রোববার বসত। চাহিদা ব্যাপক থাকায় বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন বসে এ বাজার।

 

তবে ঈদ এলে সপ্তাহজুড়েই চলে কেনাবেচা। বাবুরহাটে বিক্রি হওয়া থানকাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি, শাড়ি, থ্রি-পিস নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার তাঁতশিল্পে উৎপন্ন। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত নাইট কুইন, দেশি জর্জেট, লেজার জর্জেট, জাপানি সিল্ক, টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের সম্ভারে বাবুরহাট হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়।

 

এই হাট থেকে কাপড় কিনে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। বাবুরহাটকে ঘিরে শুধু নরসিংদীর আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে লাখো তাঁতকল। শুধু নরসিংদীতেই নয়, পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জেও গড়ে উঠেছে হাজার হাজার তাঁতকল। এখানে শুধু পাইকারি ব্যবসায়ীরাই কাপড় কেনেন তা নয়, এখানে সাধারণ ক্রেতারাও আসেন কাপড় কিনতে। বাবুরহাট মানে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে রঙের গন্ধ। বেশি ক্রেতা বেশি বিক্রি।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা ভিড় জমিয়েছেন বাবুরহাটে। ফলে হাটের সরু গলিগুলোতে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই রয়েছে। হাটের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রকারের কাপড়। পাইকারি ক্রেতারা রং ও ডিজাইন দেখে পছন্দমতো কাপড় আলাদাভাবে জড়ো করছেন। বাহারি রং ও ডিজাইনের কাপড় এখানে পাওয়া যায়।

 

বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। আর এসব গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয় কাপড়। দেখলে মনে হয় যেন কাপড়ের মেলা বসেছে। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপে সারা দিনই কাপড় ওঠানোর কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

 

এক যুগ ধরে বাবুরহাটে আসছেন হবিগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী সাজু মিয়া। তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ ও এক স্থানে সব কাপড় পাওয়ায় আমরা এই হাটে আসি। গাজীপুরের কাপাসিয়ার বড় কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, খুব কাছে এবং সবচেয়ে বড় মোকাম হল নরসিংদীর বাবুরহাট। এখানে মেয়েদের পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি, শাড়ি, ও থ্রি-পিস ভাল মানের পাওয়া যায় আবার দাম কম, বিক্রি করে ভাল লাভ করা যায়। আর এখানের কাপড় কাপাসিয়ার মেয়েরাও পছন্দ করে।

 

কাপড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে কাপড় কিনতে হাটে ভিড় করেন সাধারণ ক্রেতারাও। শিবপুরের লাখপুর গ্রামের মোফাজ্জল নাজির এসেছেন বাসার সবার কাপড় কিনতে। বলেন,আমার পরিবার যৌথ পরিবার, এখানে সব ধরনের কাপড়,বিশেষ করে মেয়েদের থান কাপড়, কামিজ সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। তাই একেবারে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। দামেও কম, মান কিন্তু খারাপ না।

 

ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা গৃহবধূ লাভলী বেগম বলেন, নিজের পরিবার ও স্বজনদের জন্য অনেক কাপড় লাগে। কয়েক বছর ধরে আমি বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনছি। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়। দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরাও কাপড়ে এনেছেন আধুনিকতার ছোঁয়া।

 

জে এম ক্লাসিক ফ্যাশনের ফ্যাশন ডিজাইনার শেখ সাদী বলেন, আমরা কাস্টমারদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন রঙের থ্রি-পিস ও শাড়িতে বৈচিত্র্য এনেছি। সব পোশাকে আমাদের নিজস্ব ফেব্রিক্স ব্যবহার করেছি যা গুণগতমান সমৃদ্ধ ও আরামদায়ক। পাইকারদের আনা গোনায় সরগরম থাকে বাবুরহাট। তবে ঈদের সময় পাইকারদের ভিড় থাকে বেশি।

 

ব্যবসায়ী অবিনাশ বলেন, পদ্মাবতী, জারা গোল্ড ও মাছরাঙা থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। এখানে এসে মনে হয় আসলেও যেন ঈদের আমেজ লেগেছে কেনাকাটায়।