ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১১, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৬:২৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধার আজ সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি পুলিশি নিরাপত্তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা ‘নির্বাচনে পুলিশ সদস্যদের শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে’ বেআইনি ও অনুমোদনহীন সমাবেশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির মা-মেয়েকে হত্যার ‘কারণ জানাল` গৃহকর্মী আয়েশা

মিরপুর বেনারসি পল্লী ক্রেতাশূন্য

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৭:৪২ পিএম, ৩০ মে ২০১৮ বুধবার

গত বছর রোজার ঈদে ব্যবসা তেমন একটা ভালো যায়নি। তাই এবার আগে ভাগেই নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন রাজধানীর মিরপুর বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়িরা। ভেবেছিলেন গতবারের লোকসানটা এবার পুষিয়ে নিবেন। সে লক্ষ্যে এবারের ঈদে দেশি শাড়ির কালেকশন বাড়ানোর প্রতি সব ব্যবসায়িই মনোযোগ দিয়েছিলেন। তবে যে আশা নিয়ে তারা প্রহর গুণছিলেন তা যেন হতাশায় নিমগ্ন।

 

আজ সরেজমিনে মিরপুর বেনারসিপল্লিতে ঢুকে দেখা গেল দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা একেবারেই কম। বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। একেবারেই যেন অন্য চেহারা। অথচ প্রতিবছর শবেবরাতের পর থেকেই এখানে বিক্রির ধুম পড়ে যায়। রোজা শুরু হলে তো কথায় নেই, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। এবার বারো রোজা পেরিয়ে গেলেও বেনারসিপল্লি একরকম ক্রেতাশূন্য।

 

বিক্রেতারা বলছেন, বেচাকেনা নেই। লাভ তো দূরের কথা, দোকান চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ঘুরে দেখা যায়, বেনারসিপল্লির দুটি অ্যাভিনিউ এবং তিনটি লেনের রাস্তা ভাঙাচোরা। পয়োনালার পাইপ বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কোথাও পাইপ বসানোর কাজ চলছে, কোথাও শেষ হয়েছে। এসব গলিতে যান চলাচলের সুযোগ নেই। মেট্রোরেলের কাজের জন্য অনেকগুলো পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বেনারসিপল্লির ১ নম্বর গেটটি দিয়েও গাড়ি ঢুকতে পারে না। এখানে আসতে হলে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। সে কারণে এত ঝামেলা পেরিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির বাজারে ক্রেতা আসতে নিরুৎসাহ বোধ করে।



সিমি বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক রশিদুল খন্দকার বলেন, আগে রমজানের এ সময় দিনে দেড়-দুই লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন দিনে হাজার দশেক টাকার শাড়ি বিক্রি করাও কঠিন। বেশ কয়েকটি দোকানে কথা বলে জানা যায়, দিনে মাত্র চার-পাঁচটি শাড়ি বিক্রি হয়।

 

বেনারসি পালকি নামের দোকানে শাড়ি দেখছিলেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা সুইটি আহমেদ। বেশ কয়েকটি শাড়ি দেখে একটি লাল রঙের কাতান কিনলেন। তিনি বলেন, আগে উৎসবে কেনাকাটা করতে বেনারসিপল্লিতে আসতাম। এখন রাস্তা এত খারাপ আর যানজট থাকে যে আসাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসিপল্লিতে শাড়ির দোকান ১৬২টি। দোকানীরা জানান, প্রায় বছর দুই ধরে বেনারসিপল্লির ভেতরের রাস্তাগুলোয় উন্নয়ন ও পাইপ বসানোর কাজ চলছে। রাস্তা এমন করে কেটে রাখা হয়েছে যে অধিকাংশ সড়কে গাড়ি চলে না। রোজার আগেই কাজ শেষ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি।

 

বিক্রমপুর বেনারসি মিউজিয়ামে গিয়ে দেখা যায় বাহারি সব নাম, রঙ ও ডিজাইনের শাড়ির বিপুল সমাহার। দোকানের কর্মকর্তা মো. জসীম জানান, তার দোকানে মিরপুর কাতান পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। এছাড়া অপেরা কাতান ৬-৭ হাজার টাকা, কাঞ্জিভরন (পিয়র) ১৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা, মিরপুরের খাদি ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বিল্লু রানী ৯ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বিয়ের বেনারসি ৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, ভারতীয় পাটি লেহেঙ্গা ৫ থেকে ৫২ হাজার টাকা, ঢাকাই জামদানি ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি ৭শ থেকে ৪ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সফট সিল্ক আড়াই হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, ইন্ডিয়ান গাদোয়াল ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

 

নার্গিস ফ্যাশনের কর্মকর্তা এনামুল শাহী জানান, তাদের দোকানে নিজস্ব তৈরি কাতান শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া ঢাকাই জামদানি ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি ১১শ থেকে ৬ হাজার টাকা, টাঙ্গাইলের সিল্ক ১৩শ থেকে ৬ হাজার টাকা, মিরপুর বেনারসি ব্রাইডাল শাড়ি ৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা, শিপন দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, জর্জেট প্রিন্ট ১-৩ হাজার টাকা এবং কাঞ্জিভরন (কাতান) পাওয়া যাচ্ছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা।

 

নিউ বেনারসি বুননের মালিক রঞ্জু জানান, তার দোকানে শুধু মিরপুর কাতান শাড়ি বিক্রি হয়। এসব শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, এবার ঈদে অনেক ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি। কিন্তু সে অনুসারে সাড়া পাচ্ছিনা। বেনারসি পল্লীর বিগবাজার, রূপ সিঙ্গার, এশিয়া বাজার, পাবনা এম্পেরিয়াম, জারাসহ বিভিন্ন দোকানে রয়েছে বিশাল শাড়ির সমাহার।

 

এসব দোকানের কর্মকর্তারা জানান, সব কালেকশন এর মধ্যে এসে গেছে। এখন তারা খদ্দেরের অপেক্ষায়। তবে বেনারসি পল্লীর একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একদিকে পাইকারি শাড়ি পাঠিয়ে দেশের বাজার সয়লাব করে দিচ্ছেন।

 

অন্যদিকে ভিসা সহজ করায় খুচরা ক্রেতারাও ছুটে যাচ্ছেন কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য শহরে। ফলে আমরা দুই দিক থেকেই মার খাচ্ছি। সরকারের উচিত ব্যবসায়ী ও দেশের স্বার্থে এ বিষয়টির দিকে নজর দেয়া। তবে দিন আরো বাকি আছে। সে দিনগুলোতে বেচাবিক্রি করে বিগত দিনের লোকসান সামাল দিতে চান ঐতিহ্যবাহী মিরপুর বেনারসি পল্লীর ব্যবসায়ীরা।