ঢাকা, সোমবার ০৬, মে ২০২৪ ৩:৪৪:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বজ্রপাতে বসতঘরে আগুন, ঘুমের মধ্যে মা-ছেলের মৃত্যু এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আজ থেকে স্কুল কলেজ খোলা সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সিলেট ৬০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি, মাছ-মাংসে আগুন আরও ২ দিন দাবদাহের পূর্বাভাস

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন)   | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:১০ পিএম, ৮ জুন ২০২২ বুধবার

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

পর্ব- ১২ : দ্বিতীয় অধ্যায়- আদিম সাম্যবাদের বিলুপ্তি: প্রাচীন জার্মান এবং ইনকা সভ্যতা হয়ে ভারত, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিবরণ

(‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’-র ভূমিকা থেকে)

সম্পাদকের নথি: আমাদের বইয়ের এই অংশটুকু রোজা ল্যুক্সেমবার্গের ‘রাজনৈতিক অর্থনীতির ভূমিকা‘ অংশ হতে গৃহীত। এই বইটি একটি অসমাপ্ত বই যার কাজ তিনি ১৯০৮ সালের দিকে শুরু করেছিলেন এবং বইটি মূলত: বার্লিনে ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি‘র স্কুলে রোজার দেয়া কয়েকটি বক্তৃতার উপর ভিত্তি করে রচিত। ১৯১৬ সাল নাগাদ জেলখানা থেকে রোজা তাঁর প্রকাশক আই,এইচ,ডব্লু, ডিয়েটজের কাছে চিঠিতে জানান যে বই প্রকাশের জন্য তিনি তাঁর পান্ডুলিপিটি ঘষা-মাজা করছেন এবং তাতে নিচের অধ্যায়গুলো থাকবে: ১) রাজনৈতিক অর্থনীতি কি? ২) সামাজিক শ্রম, ৩) অর্থনৈতিক ইতিহাসের উপাদান: আদিম সাম্যবাদ, ৪) অর্থনৈতিক ইতিহাসের উপাদান: সামন্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, ৫) অর্থনৈতিক ইতিহাসের উপাদান: মধ্যযুগের শহর এবং কারুশিল্পীদের সঙ্ঘ, ৬) পণ্য উৎপাদন, ৭) মজুরী শ্রম, ৮) পুঁজিবাদী মুনাফা, ৯) সঙ্কট এবং ১০) পুঁজিবাদী উন্নয়নের ভূমিকাসমূহ। 
 
রোজাকে খুন করার পর তাঁর পান্ডুলিপির ভেতর থেকে এই বইটির শুধুমাত্র ১, ৩, ৬, ৭ ও ১০ নং অধ্যায় পাওয়া গেছে এবং পল লেভিই প্রথম সেই ১৯২৫ সালে এই অধ্যায়গুলো প্রকাশ করেছিলেন। এরপরে আর যা পাওয়া যাচ্ছে তা‘ হলো অধ্যায় ৩-এর দ্বিতীয় অংশ যা রোজারই রচিত ‘জেসাম্মেলটে  ওয়ের্কে‘ (বার্লিন: ডিয়েটস ভার্ল্যাগ, ১৯৭৫)-এর পঞ্চম অধ্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা এই সম্পাদনা কাজের সময় ‘রাজনৈতিক অর্থনীতির ভূমিকা‘-র খুবই মনোগ্রাহী ফরাসী অনুবাদটিও মিলিয়ে দেখেছি। আইরিন পতিত এই ফরাসী অনুবাদটি করেছেন (প্যারিস: এদিশিও এ্যানথ্রোপস, ১৯৭০)। যদি অন্যরকম কোন নির্দেশনা না থেকে থাকে, এই অধ্যায়ে প্রদত্ত পাদটীকাগুলো ‘জেসাম্মেলটে ওয়ের্কে‘তে দেওয়া পাদটীকাগুলোর ভিত্তিতেই এই বইয়ের দুই সম্পাদক তৈরি করেছেন। বর্তমান অনুবাদটি এ্যাশলে পাসমোর এবং কেভিন বি.এ্যান্ডারসনের করা। প্রেক্ষাপটের তথ্যাদির জন্য আমরা আরো ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছি ওলগা আভেদেয়েভা, এ.জেড.হিলালি, ওয়াহিদ খান এবং আলবার্ট রেসিসকে। এই অধ্যায়ের শিরোনাম এবং উপ-শিরোনামগুলো সম্পাদকরা সরবরাহ করেছেন)।

প্রাচীন জার্মানদের ভেতরে মার্ক সংগঠন: 
আসুন, আমরা মার্ক নামের গ্রামীণ সংগঠনের দিকে একবার দৃষ্টি দেই যে সম্প্রদায়কে কিনা তার অভ্যন্তরীণ কাঠামোর প্রেক্ষিতে সবচেয়ে অনুপুঙ্খ ভাবে গবেষণা করা হয়েছে। মূলত: প্রাচীন জার্মান জন-গোষ্ঠির গ্রামীণ সংগঠন হিসেবেই ‘মার্ক‘-এর আত্ম-প্রকাশ।  আমরা জানি যে জার্মানরা বিভিন্ন উপ-জাতি এবং গোত্র হিসেবে বসতি গেঁড়েছিল। এই প্রতিটি গোত্রেরই পুরুষ প্রধান ঘর ও খামার গড়ে তোলার জন্য এক টুকরো নির্দিষ্ট জমি বরাদ্দ পেত। এই নির্দিষ্ট জমিটুকুর একটি অংশ কৃষি কাজ করার জন্য বরাদ্দ থাকতো যেখানে উপাদিত ফসলে গোত্রের সব পরিবারেরই কিছু ভাগ বা অধিকার থাকবে। সীজারের মতে, খ্রিষ্টীয় যুগ শুরু হবার সময়, জার্মানদের একটি গোত্র (সুয়েবি অথব সোয়াবিয়ান) প্রথমে পরিবারগুলোর ভেতরে জমি ভাগ না করে একসাথেই চাষবাস করতো। বরঞ্চ দ্বিতীয় শতকে রোমক ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাসের সময় নাগাদই উৎপাদিত

ফসলের পুনর্বিভাজন একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে উঠেছিল। এমনকি সতেরো বা আঠারো শতক পর্যন্ত নাসসাউয়ের ফ্রিকহোফেনের মত বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোয় বাতসরিক এই ফসলের পুনর্বন্টণ প্রথা প্রচলিত ছিল। এমনকি উনিশ শতকেও ব্যাভারিয়ান ভূ-স্বামীদের এলাকায় অথবা রাইন নদীর উপরে খামারজমি পুনর্বণ্টনের প্রথা চালু ছিল। তবে এমন পুনর্বণ্টন বহু দিন পর পর করা হতো: প্রতি তিন, চার, নয়, বারো, চোদ্দ অথবা আঠারো বছর পর। এই যৌথ খামারবাড়িগুলোই অবশ্য গত শতকের মাঝামাঝি নাগাদ অতি আবশ্যিক ভাবেই ব্যক্তি সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। এমনকি এই সেদিন পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের অল্প কিছু এলাকায় খামারজমি পুনর্বণ্টনের প্রথা চালু ছিল। এই খামারজমিগুলো আয়তনে প্রায়ই থাকতো সমপরিমাণ এবং যে কোন একটি পরিবারের মাথাপিছু চাহিদা মেটানোর মত ফসল মাটি থেকে পাওয়া যেত। বিভিন্ন এলাকার মৃত্তিকার গুণগত মানের তারতম্য অনুযায়ী, জমির পরিমাণ হতো পনেরো, ত্রিশ, চল্লিশ অথবা আরো বেশি একর জমি। তবে ইউরোপের অধিকাংশ এলাকায় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতক নাগাদ সময়েই জমি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে একক পরিবারের বংশধরদের ভেতরেই বাহিত হওয়া শুরু করলো এবং জমিতে সমঅধিকার একরকম রহিত হতে থাকে। ইউরোপের অধিকাংশ এলাকাতেই একটি জন-গোষ্ঠির ভেতর জমির সমান পুনর্বণ্টণ দেখতে দেখতে বিরল  হয়ে ওঠে। তবে, খামারের ক্ষেত্রে এই প্রথা চালু ছিল। ব্যক্তিগত জমি ছাড়া অন্য যত জমি- যেমন, অরণ্য, তৃণভূমি, জলাশয় এবং অব্যবহৃত জমি- মার্কের অভগ্ন, সমষ্টিগত সম্পত্তি হিসেবে বিরাজ করতো। যেমন, বন থেকে পাওয়া ফল-মূল গোটা সম্প্রদায়ের প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হতো এবং সবার খাওয়ার পরেও যা থাকত, সেটা অন্য সবার ভেতর বিলিয়ে দেয়া হতো।

পশুদের চারণভূমিগুলো অবশ্য গণ প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হতো। মার্ক-এ   এই অভগ্ন জমি অথবা সর্বজন ব্যবহারযোগ্য জমি একটি বিশেষ সময়পর্ব জুড়ে বিরাজ করেছে এবং আজো সুইজারল্যান্ডের ব্যাভারিয়ান আল্পস অঞ্চল, টাইরল এবং ফ্রান্সের ‘ভেন্দি‘ অঞ্চল আর নরওয়ে ও সুইডেনে এই প্রথা চালু আছে।

তবে খামারজমি পুনর্বণ্টনের সময় পরিপূর্ণ সমতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট জমি জমির গুণগত উপাদান এবং শর্তাবলী অনুযায়ী কয়েকটি জমিতে ভাগ করা হতো এবং তারপর প্রতিটি জমি আবার ঐ মার্ক জন-গোষ্ঠি বা গোত্রের সব সদস্যের সমান সংখ্যক ভাগে বিতরণ করা হতো। যদি এই মার্কের কোন সদস্যের মনে সন্দেহ দেখা দিত যে হয়তো তাকে জমির সমান ভাগ দেওয়া হয়নি, তবে সে জমির আয়তন পুনরায় মাপার ডাক দিতে পারতো। একাজে তাকে কেউ মাথা দিলে বাঁধা প্রদানকারীর শাস্তি প্রাপ্য ছিল।

পাদটীকা: ১. ‘মার্ক‘ ছিল প্রাচীন যুগের জার্মানদের ভেতর প্রচলিত গ্রাম সংগঠনের একটি বিশেষ পদ্ধতি যা আধুনিক যুগ অবধি পরিবর্তিত বা সংশোধিত রূপে বজায় ছিল। রোজা এই শব্দটি আরো ব্যপকতর বা সর্বজনীন অর্থে ব্যবহার করেছেন যা তিনি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা একই রকম সংগঠন বোঝাতে নির্দেশ করেছেন।
(চলবে)