ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১২:১১:২৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

সক্রিয় সিন্ডিকেট, নিত্যপণ্যের বাজারে রোজার উত্তাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২১ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিত্যপণ্যের বাজারে এখনই রোজার উত্তাপ। ছোলা থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, গরু ও মুরগির মাংস, গুঁড়া দুধ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট গত দুমাসে ধাপে ধাপে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। একদিকে করোনায় কর্মসংকোচন, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেশি-সব মিলিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে।

প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। প্রতিবছরের মতো এবারও সক্রিয় অসাধু সিন্ডিকেট। রোজা সামনে রেখে তারা জানুয়ারি থেকেই রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে।

নিত্যপণ্যের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত দুমাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ১০ টাকা, মুগডাল ১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস দুমাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫ টাকা বেড়েছে।

গুঁড়া দুধ কোম্পানিভেদে কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার এ চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাসিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে।

এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও পণ্যটি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুমাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি ছোলা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন গত বছরের তুলনায় লিটারে দাম ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি খেজুর বছর ব্যবধানে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মুগডাল কেজিতে বছরে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪ দশমিক ৫৫ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়া দুধ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, রমজান এলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সরকারের এখন থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। কারণ, বাজারে পণ্যের দর নিয়ে যে কারসাজি শুরু হয়েছে, তা এখনই থামানো না গেলে ভোক্তারা রমজান মাসে আরও বিড়ম্বনায় পড়বে। তাই অযৌক্তিকভাবে কেউ পণ্যের দাম বাড়ালে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা দুমাস আগে বিক্রি হয় ৭০ টাকা। আর গত বছর এই সময় বিক্রি হয় ৭৫ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭০ টাকা, যা দুমাস আগেও ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর গত বছর এই সময় বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা।

বর্তমানে প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা, যা দুমাস আগে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। আর গত বছর এই সময় বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২১ টাকা, যা দুমাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০৯ টাকা। আর গত বছর এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ৯৩ টাকা। এ ছাড়া গুঁড়া দুধের মধ্যে ফ্রেশ বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, যা দুমাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৬০ টাকা। আর গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৫১০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. মাসুম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, রোজা আসতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। কিন্তু বিক্রেতারা এখনই একাধিক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়িয়েছে রমজানে ব্যবহৃত পণ্য। নীরবে দাম বাড়িয়ে বিক্রেতারা অতি মুনাফা লুটছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।

তিনি বলেন, এ কেমন দেশ? অন্যান্য দেশে রমজান এলে পণ্যের দাম কমে। তারা ইচ্ছ করেই ক্রেতার দিকে তাকিয়ে পণ্যের দাম ছাড় দিয়ে বিক্রি করে। এমনকি বিশেষ ডিসকাউন্টেরও ব্যবস্থা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে উলটো চিত্র। রমজান মাস এলেই চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন।

দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় নয়াবাজারের তুহিন স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. শাহিন বলেন, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক বছর ধরে রমজান মাস আসার দুমাস আগ থেকেই পাইকারি বাজারে রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দরে কিনি এবং বেশি দামে বিক্রি করি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে। তদারকি সংস্থা যদি দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে চায়, তাহলে মিল পর্যায়ে কঠোর তদারকি করতে হবে।

রমজান সামনে রেখে রাজধানীর বাদামতলীতে পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মানের খেজুরে ইতোমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে।

রাজধানীর খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। যে খেজুর এখন প্রতি কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, তা দুমাস বা এক মাস আগে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন যে খেজুর কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, তা আগে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীর পল্টন এলাকার খেজুর বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সব ধরনের খেজুরের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশি দামে কিনি বলেই বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। রোজা যত ঘনিয়ে আসছে পাইকার ও আমদানিকারকদের কারসাজি তত জোরালো হচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার রমজানে এই পণ্যটি ভোক্তাদের ভোগান্তিতে ফেলবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশেহারা করে তোলে। কারণ, বাজারে সরকারের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই তদারকি জোরদার করা দরকার।

গত দুমাস ধরে অসাধুরা নানা অজুহাতে মাংসের বাজার অস্থির করে তুলেছে। দুমাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১৫-২০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা বিক্রি করছে। দেশি মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৪২০-৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা বা তার বেশি বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজানের সময় পণ্যের দাম নিয়ে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য প্রস্তুতি রয়েছে। কয়েকটা আইটেম নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন: ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবির মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সবকিছু বুক করা হয়েছে। আশা করছি সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় আমাদের সমস্যা যেন না হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।’

‘এখন রমজানের আগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন’-এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, এ বিষয়ে আমিও একমত। তবে কৌশলের বাইরেও কিছু কথা আছে। যেমন পেনিক বায়িং। আমরা রোজা শুরুর আগেই একসঙ্গে সবাই বাজারে ঢুকে পড়ি। এতে বিক্রেতারা সুযোগ নেয়। আমরাই সে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আশা করি, রমজানে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে।

-জেডসি