ঢাকা, শুক্রবার ০৩, মে ২০২৪ ১৫:০৫:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক: প্রধানমন্ত্রী সবজির বাজারে স্বস্তি নেই যুদ্ধকে ‘না’ বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছি ভারী বর্ষণে মহাসড়কে ধস, চীনে ২৪ প্রাণহানি রাজবাড়ীতে ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল যোগাযোগ বন্ধ

সবজি চাষে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে চরাঞ্চলীয় মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সবজি চাষে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে চরাঞ্চলীয় মানুষের। বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত প্রতিকুল অবস্থার সাথে মোকাবেলা করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠিকে। কড়ালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়ে প্রতিবছর গৃহহীন হয়ে পড়ে অসংখ্য পরিবার। বিভিন্ন সময় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বিনষ্ট হয় তাদের কৃষি ফসল। ফলে প্রায়ই কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোকে পড়তে হয় চরম সংকটে। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের শিকার চরাঞ্চলীয় ৭২০টি পরিবারকে ঘুরে দাড়াতে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ তাদের সহযোগীতা করে।সংস্থাটি দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে।এবং তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। 
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলাটি ব্রহ্মপুত্র,ধরলা,তিস্তাসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত জেলা। আর এসব নদীর বুক জুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শতাধিক চর। প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে নিঃস্ব হয় এসব চরের হাজার হাজার পরিবার। এই পরিবারগুলোর মধ্য থেকে জেলার চিলমারী উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসব্জির বীজ দেওয়া ছাড়াও বিনা মুল্যে ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা তো আছেই। বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে।সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। শনিবার উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় গয়নার পটল গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,ওই গ্রামের ৩০টি বন্যা কবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ড ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।

এ এলাকার বাসিন্দা মোঃ তাজুল ইসলাম ও মোঃ সুজন মিয়া জানান,আমাদের গ্রামে প্রবেশ করার রাস্তাটি বন্যায় ভেঙ্গে গিয়েছিল। চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত রাস্তাটি আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় মেরামত করেছি। আমাদের উৎপাদিত শাক-সবজি সহজে হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারি। আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারে। এই গ্রামের ফিরোজা বেগম জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ,পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা নেই এবং তারা আমাদেরকে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন।
একই গ্রামের আনিছুর রহমান ও রেজিয়া বেগম বলেন, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি। এই গ্রামের রিনা বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে ৩ হাজার ৬শ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে এবং সেটি থেকে ৩টি বাচ্চা হয়েছে। এখন তার চারটি ভেড়া রয়েছে যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০হাজার টাকা। 

রিনা বেগম আরো বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদন এবং কেঁচো সার তৈরীর প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২৫ হাজার টাকার সবজি এবং প্রতিমাসে ২ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করবো বলে আশা করছি। যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। রিনার মতো আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও পেঁপে উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা“ফ্রেন্ডশিপ”এর ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানান, ওই প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাতœক সহযোগিতা করবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারঃ) ডাঃ মোঃ শাহীন আলম জানান, চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।