ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ২:৩২:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, অনলাইনে ক্লাস দাবি হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪০ এএম, ৭ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

৭ই মার্চ‘ ১৯৭১! কেমন ছিলো দিনটি। এদিন সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছিল লোকে-লোকারণ্য। এ অবস্থা এর আগে থেকেই অবশ্য চলমান ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই সেখানে জমায়েত হতে থাকেন। জনসভার বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধু নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন।

এরপর তিনি সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে একটি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ.এই.এম. কামরুজ্জামান, মনসুর আলী, তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও ড. কামাল হোসেন।

বৈঠক শেষে শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বলেন যে, তারা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন – রেসকোর্সের জনসভায় চার দফা ঘোষণা দেয়া হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ছাত্র-জনতার দাবির প্রতি সংহতি রেখে এ ঘোষণা দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এরপর এই চার-দফার একটি খসড়া প্রস্তুত করে ড. কামাল হোসেন শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদন নেন। তার অনুমোদনের পর সেটি টাইপ করা হয়।

ড. ওয়াজেদ মিয়া লিখেছেন, টাইপ করা কপির সাথে হাতে লেখা খসড়া কপি মিলিয়ে দেখার দায়িত্ব শেখ মুজিব তাকে দিয়েছিলেন।

“এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাক কাকাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ইশতেহারে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিনা।”

“তিনি (খন্দকার মোশতাক) বলেন যে, সামরিক শাসনের ক্ষমতাবলে জারীকৃত আইনগত কাঠামো-এর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় বসে পাকিস্তানের অখণ্ডতা লঙ্ঘন সংক্রান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার ব্যাপারটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং এই ব্যাপারটা এই ইশতেহারে লেখা হয়নি,” লিখেছেন ড. ওয়াজেদ মিয়া।

সেদিন রেসকোর্স ময়দানে নৌকা আকৃতির মতো করে জনসভার মঞ্চ করা হয়েছিল। সকাল থেকেই লাখো মানুষ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের দিকে যেতে থাকে। পুরো রেসকোর্স ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা একবারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিকেল চারটার পর শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে আসেন। সে ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান অহিংস এবং অসহযোগ আন্দোলন আরও জোরদার করার আহবান জানান।

একই সাথে তিনি পাকিস্তান সরকারের প্রতি চারটি দাবি তুলে ধরেন।

১. অবিলম্বে মার্শাল ল প্রত্যাহার করতে হবে

২. জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে

৩. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে

৪. সেনাবাহিনীর গুলি বর্ষণ ও মানুষ হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে হবে

তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, "সামরিক শাসন তুলে নেয়া এবং সৈন্যদের ব্যারাকে ফেরত নেয়াসহ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি চারটি শর্তের ব্যাপারেই শুধু বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করেছিলেন।"

"ভাষণ দিতে বাসা থেকে বেরোনোর সময় শেখ মুজিবকে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেছিলেন - তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবে। ৭ই মার্চের সেই ভাষণ তিনি নিজের চিন্তা থেকেই দিয়েছিলেন। ভাষণটি লিখিত ছিলো না।''

রেসকোর্সে ৭ই মার্চের বহু প্রত্যাশিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ঘোষণা করলেন – “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

সে বিশাল সমাবেশ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনোভাব দেখে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় পাকিস্তান সরকার। একই সাথে তারা বুঝতে পারে শেখ মুজিবের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্চ রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ সে ভাষণ শোনার জন্য রেসকোর্স ময়দানে এসেছিলেন।

জাহানারা ইমামের বর্ণনায় - কত দূর-দূরান্তর থেকে যে লোক এসেছিল মিছিল করে, লাঠি আর রড ঘাড়ে করে – তার আর লেখাজোখা নেই। টঙ্গী, জয়দেবপুর ডেমরা – এসব জায়গা থেকে তো বটেই, চব্বিশ ঘণ্টার পায়ে হাঁটা পথ পেরিয়ে ঘোড়াশাল থেকেও বিরাট মিছিল এসেছিল গামছায় চিড়ে-গুড় বেঁধে। অন্ধ ছেলেদের মিছিল করে মিটিংয়ে যাওয়ার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। বহু মহিলা, ছাত্রী মিছিল করে মাঠে গিয়েছিল শেখের বক্তৃতা শুনতে।

সাতই মার্চ ভাষণের পর শেখ মুজিবুর রহমান আশঙ্কা করছিলেন যে তার ওপর যে কোন সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পদক্ষেপ আসতে আসতে পারে। এ বিষয়টি তিনি পারিবারিক মহলেও বলেছিলেন।

“৭ই মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, রেহানা, রাসেল, শেখ শহীদ, শাশুড়ি ও আমাকে নিয়ে খাওয়ার সময় গম্ভীর হয়ে বললেন, আমার যা বলার ছিল তা আজকের জনসভায় প্রকাশ্যে বলে ফেলেছি। সরকার এখন আমাকে যে কোন মুহূর্তে গ্রেফতার বা হত্যা করতে পারে। সেজন্য আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন দু’বেলা আমার সঙ্গে একত্রে খাবে,” লিখেছেন ওয়াজেদ মিয়া।

সিদ্দিক সালিকের বর্ণনায়, রেসকোর্স ময়দানে মানুষের যে জোয়ার এসেছিল সেটি জনসভা শেষে ভাটার মতো মিলিয়ে গেল। মানুষজনকে দেখে মনে হচ্ছিল, তারা যেন কোন মসজিদ বা চার্চের ধর্মীয় জমায়েত থেকে ফিরছে, যেখানে তারা সন্তুষ্টির বাণী শুনেছে।

শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চ ভাষণের পর তাঁর নির্দেশে শুরু হয় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন। এরপর থেকে শেখ মুজিবুর রহামনের নির্দেশে চলতে থাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান।