সেবা সদনের যন্ত্রণাকাতর মুখগুলো মনে পড়ে: ডা. হালিদা হানুম
বনশ্রী ডলি | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৫:২৩ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২১ শুক্রবার
ডা. হালিদা হানুম। ছবি তুলেছেন: বনশ্রী ডলি।
ডা. হালিদা হানুম। প্রজনন ও নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনা দ্বারা ধর্ষণের শিকার গর্ভবতী মেয়েদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ‘সেবা সদন’-এ কাজ করার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। সে দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছেন একজন অকুতভয় দেশপ্রেমিক সৈনিকের মতোই। সেবা সদনে আসা সেই অপমানিত ও নির্যাতিত নারীদের মুখগুলো আজও তাকে স্মৃতিকাতর করে। সেই সব দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আলাপচারিতায়। উইমেননিউজ২৪.কম-এর পক্ষে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বনশ্রী ডলি।
উইমেননিউজ২৪.কম: আপনার প্রথম কর্মজীবন প্রসঙ্গ, মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন?
ডা. হালিদা হানুম: ১৯৬৮ সালে ডাক্তারি পাশ করে ’৬৯ এর পহেলা মে সে সময়ের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে যোগ দিই। কিছুদিন পর আমাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয় মাসের ট্রেনিং এ পাঠায় আমেরিকায়। আমার প্রথম সন্তান মেয়ে। ওর বয়স তখন দেড় বছর। মেয়েকে দেশে রেখে গিয়েছি। বাংলাদেশ থেকে তিনজন, পাকিস্তান থেকে ছয়জন, অন্যান্য দেশেরও বেশ ক’জন গিয়েছিলাম প্রশিক্ষণে। আমেরিকায় গিয়ে পৌঁছাই ১৯৭০ এর ২০ অক্টোবর। সেখানে ‘জনহপকিংস’ প্রতিষ্ঠানে কিছু কোর্স করা, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা, জেন্ডার সর্ম্পর্কিত ট্রেনিং নেওয়া এবং আরও কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল সেন্ট পা তে। এগুলো শেষ করে আমাদের বের হওয়ার কথা ১৯৭১ সালের এপ্রিলে। মার্চ মাসে একদিন ক্লাস শেষ করে ফিরছি, ট্রেনে উঠবো আমরা তিনজন। আমাদের উঠিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের স্যার আতিকুর রহমান এসেছেন। তিনিও ওখানে পিএইচডি করছিলেন। স্যার বললেন, তোমরা হয়তো জানো না, দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলি হয়েছে। দিনটা ছিল মার্চের ২৩ বা ২৪ তারিখ। আমি তো দেড় বছরের কন্যাকে দেশে রেখে গেছি। আমার সঙ্গে আরও দু’জন ছিলেন তারাও স্বামী ও সন্তান রেখে গেছেন। যুদ্ধের কথা শুনেই তো আমাদের কান্নাকাটি শুরু হলো। কী হবে এবার!
তখন সেখানে আমাদের কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতিটা আমাদের বুঝিয়ে বলেন, ‘তোমরা থাকো, এই যুদ্ধের মধ্যে তো তোমাদের পাঠাতে পারি না। দেখি কী হয়।’ শুরু হয় আমাদের উৎকন্ঠা আর অস্থিরতার দিনযাপন। সে বড় কষ্টের সময় পার করেছি! ছোট সন্তান রেখে গেছি। তখন যোগাযোগ বলতে আমার স্বামী এয়ারপোর্টে গিয়ে আমেরিকাগামী কোন ব্যক্তিকে চিঠিটা দিয়ে অনুরোধ করতেন তিনি যেন আমেরিকায় পৌঁছে আমার ঠিকানায় চিঠিটা পাঠান। সেভাবেই দেশের সব খবরাখরর পেতাম, তাও কম। কয়েক মাসে অনেক ওজন কমে গিয়েছিল আমার। মন খারাপ করে থাকতাম, কান্নাকাটি করতাম, কখনো চেনা-জানা বাঙালিদের বাসায় যেতাম। এভাবে বাধ্য হয়েই ছয়মাস বেশি থাকতে হয়েছে।
উইমেননিউজ২৪.কম: আপনারা কি তখন যুদ্ধের পক্ষে ওখানে কাজ করেছেন? কী করলেন? বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
ডা. হালিদা: মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অর্ধেক হয়ে গিয়েছি। যুদ্ধে যে যেতে পারি তা ভাবনায় আসেনি, আসার জন্য ছটফট করছিলাম। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকের কথা, একটা ঘটনার মনে পড়ছে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চলছে এটা শোনার পরপরই প্রশিক্ষণে আমাদের সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সদস্যরা আলাদা হয়ে যায়। কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল আমাদের মধ্যে। কয়েকদিন পর বাল্টিমোর শহরে এক বাসায় আমরা দাওয়াত খেতে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানের ক’জন সাংবাদিক যাচ্ছিলেন ট্রেনে। ওরা উর্দুতে বলাবলি করছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে, পূর্ব বাংলার কিছু মানুষকে মেরে ফেললেই সব ঠিক হয়ে যাবে। শুনে কী যে অবস্থাা আমার! এখনো মনে হলে খারাপ লাগে, রাগ হয়।
ওখানে পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। সেখানে বাঙালি কমকর্তা তখনো ছিলেন বেশ ক’জন। কিছুদিন পর দেখলাম তাদের অনেকেই দূতাবসের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। বাইরে এসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক অন্যরকম লড়াই শুরু করেন। এদিকে দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, আমেরিকায় তখন হোয়াইট হাউজের সামনে বাঙালিদের পক্ষে, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে বিভিন্ন বয়সের আমেরিকান নাগরিকরাও যোগ দিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ সমর্থনে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ফেস্টুন হাতে আমাদের সাহস দিয়েছেন। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবিতে কাজ করতেন আমেরিকার ড. ক্লিনো ও তার স্ত্রী। তারাও সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। আমরা তিনজনও সমাবেশে যোগ দিয়েছি কয়েকবার। চিন্তা হতো সবসময়, কীভাবে দেশে ফিরবো। সেখানের আমার অবিভাবক ড. আতিকুর রহমানের বাসায় দেখা করতে যেতাম। বাঙালি ভাইবোনদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আমেরিকান কতৃৃপক্ষ আমাদের একটা হোস্টেলে থাকতে দিয়েছিল। একটাই ভাবনা ছিল কবে ফিরবো দেশে। দেশে কী হচ্ছে ঠিকঠাক জানতে পারছি না। তখন ভীষণ কষ্টে সময় কেটেছে।
উইমেননিউজ২৪.কম: দেশে ফিরলেন কবে? এসে কী দেখলেন?
ডা. হালিদা: বছর ঘুরে অক্টোবর আসার পর ওরা জানায়, আর তোমাদের রাখতে পারছি না। এবার দেশে ফিরে যাও। টিকিট তো আমাদের ছিলই। আমরা বাঙালি তিনজনই দেশে ফিরে আসি ২১ অক্টোবর। ঢাকায় আমাদের বাসা ছিল তেজগাঁও এলাকায়। সেখানে মাসখানেক থাকার পর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা ছাড়তে হলো আমাদের। সে আরেক অনিশ্চিত ভয়ের যাত্রা। ঘরের জিনিসপত্র কিছু নিয়েছি, বেশিরভাগ ফেলে গেছি। যতটা সম্ভব চাল-ডাল, আটা আর কিছু কাপড় নিয়ে গরুর গাড়িতে করে রওয়ানা হলাম কুমিল্লার নবীনগরের দিকে। রুটি বেলার চাকতিটার ওজন বেশি তাই টিনের থালা হালকা বলে সেটা নিলাম তাতে খাওয়াও যাবে, রুটি বেলতে পারবো, বেলুনটাও সঙ্গে নিলাম। হাটতে হবে, কত আর বোঝা নেবো। সঙ্গে আমার বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন ও আমার স্বামীর আত্মীয় মিলে প্রায় ৩০ জনের মতো হবে। সঙ্গে এক আত্মীয় গর্ভবতী নারীও ছিলেন। পথে রাত হওয়ায় একটা স্কুলঘরে খরের গাদায় চাদর বিছিয়ে কোনরকম রাত কাটানো, সে এক বিভৎস অভিজ্ঞতা। ভয় আর দুশ্চিন্তায় কোথায় ঘুমাবো তা মাথায় ছিল না। সকাল হওয়ার পর নৌকায় যাচ্ছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়োর আমার বড় জায়ের বাড়িতে যাবো আমাদের দলটি। পাশাপশি বড় দুটো নৌকা চলছে। নৌকায় কিছুদূর যাওয়ার পরই গর্ভবতী আত্মীয়টির ব্যথায় অস্থির অবস্থা। কোথাও যাওযার ব্যবস্থা নেই। এটা ছিল তার দ্বিতীয়বারের প্রসবকাল। বাধ্য হয়ে নৌকায়ই প্রসব করালাম তার সন্তানকে। ভয় ও আনন্দ দু’টোই আমার হয়েছিল। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এমন স্মৃতি ভোলা যায়!
নৌকায় কয়েকদিন থাকতে হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিলাম কয়েকদিন। দেশ স্বাধীন হলো ১৬ ডিসেম্বর। সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে পারিনি। ঢাকায় লোক পাঠিয়ে শহর নিরাপদ কিনা খবর নিলাম। ততদিনে ঢাকা কিছুটা স্বাভাবিক। কয়েকদিন পর ফিরে আসি ঢাকায়। যোগ দিই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আগের কাজের জায়গায়।
উইমেননিউজ২৪.কম: মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশে আপনার কাজের ক্ষেত্র কেমন ছিল? প্রজনন, নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা যদি বলেন।
ডা. হালিদা: যোগ দেওয়ার পরপরই অফিস থেকে আমাকে বলা হলো, যুদ্ধের সময় সারাদেশে যে নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য একটা বিশেষ ক্লিনিক খোলা হয়েছে সেখানে আপনাকে পাঠাতে চাই। আপনি এসবের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। একথা শুনে একদিকে খারাপ লেগেছে অন্যদিকে ভালও লেগেছে, আমার কাজ না করার প্রশ্নই আসে না। ওই ক্লিনিকে চার মাসের জন্য আমাকে ডেপুটেশনে পাঠায় মন্ত্রণালয়। তবে কখনো ভাবিনি এমন অভিজ্ঞতা আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
ধানমন্ডির তিন নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে ক্লিনিকটি করা হয়েছিল। প্রথমে তো কোনো ধারণাই ছিল না কী হতে যাচ্ছে। মনে আছে ক্লিনিকে কয়েকটি রুম, প্রতি রুমে পাঁচ থেকে ছয়টা করে শয্যা পাতা। ক্লিনিকটির নাম ছিল সেবা সদন। ড. খালেক নামের একজন এটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। জানুয়ারিতে শুরু হয় সেবা সদনের কার্যক্রম। সম্পূর্ণ নুতন অভিজ্ঞতা, কম বয়সী মেয়েরা এসেছেন। যাদের মধ্যে সাত মাস, আট মাসের গর্ভবতী নারীও আছেন। আগেই শুনেছিলাম আমেরিকাা থেকে কয়েকজন এবং ব্রিটিশ ক’জন চিকিৎসক আসবেন চিকিৎসা করার জন্য। আধুনিক আর বিশেষ পদ্ধতিতে গর্ভপাত ও প্রসব করানোর মূল কাজটি করতেন ওই চিকিৎসকেরা। আমরা কয়জন ছিলাম তাদের সহযোগী। কারণ কাজটি ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশ থেকে আসা একজন চিকিৎসকের নাম যতটা মনে আছে, ডা. ডেভিড। বেশিরভাগ সময় আমরা রোগীকে ম্যানেজ করা যাকে বলে সেটাই করতে হতো।
সে সময় একটা ঘটনা ছিলো খুব দুঃখজনক। একজন গর্ভবতী নারীকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। তিনি ক্লিনিকে আসেন খুব অসুস্থ অবস্থায় শেষ সময়। পেটের বাচ্চাটা আগেই মারা গিয়েছিল। তার রক্তপাত হচ্ছিল অস্বাভাবিকভাবে। তা কিছুতেই থামানো যায়নি। আমার সামনেই তিনি মারা যান। খুব খারাপ লাগছিল তখন। অন্যদের সবাইকে সুস্থ করা গেছে। চার মাস কাজ করেছি সেখানে। সেসসময়টাতে ঠিক সংখ্যা মনে নেই, হতে পারে ২০ থেকে ৩০ জনের মতো বা এরও বেশি এসেছেন সেবা সদনে।
শুরুতেই মন্ত্রণালয় থেকে জেলাগুলোতে খবর পাঠানো হয়েছে, এমন কেউ থাকলে নিয়ে আসার জন্য। তাদের কয়েকজনকে পরিবার থেকেও নিয়ে এসেছে। এমন কয়েকটা ক্লিনিক সারাদেশে তৈরি করা হয়েছিল। যেমন বগুড়ায় একটা ছিল মনে আছে। আমরা যাদের যুদ্ধশিশু বলি তারা জন্মানোর পর শিশুদের নেওয়া হতো ‘টেরিজা হোম’ এ। ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাই এসে নিয়ে যেতেন।
আবেগের দিকটি যদি বলি, ওই নারীরা একে তো বিপর্যস্ত অবস্থায় ক্লিনিকে এসেছে, পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের নিয়ে গিয়ে এমন পাশবিক নির্যাতন করেছে। কষ্ট পাবে বলে এসব বিস্তারিত কিছুই জানতে চাইনি। জানতে চাইলে আবার ওরা সব বলবে, কাঁদবে, সব মনে পড়ে যাবে। সে তো ভুক্তভুগি, সে তো কষ্ট পাচ্ছে। পেটে যে সন্তান এটা তো তার জন্য আস্ত একটা কষ্ট! ওদের মানসিক অবস্থাটা এমন ছিল যে শিশুটিকে শরীরে নিয়ে যন্ত্রণা পোহাচ্ছে তা থেকে আলাদা হতে পারলে যেনো সে বেঁচে যায়। সন্তানের জন্য মায়া! হয়তো আছে কিন্তু তা কখনো প্রকাশ করেনি। এই সন্তানকে আপন করতে পারেনি মনে হয়েছে। এর প্রতি অনীহা. দূরত্ব রাখতে চেয়েছে এমনটাই দেখেছি। এ নিয়ে তাদের সাথে কখনোই আলোচনা করতাম না। এসব যেনো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম সবাই মিলে। সবসময় ওদের সঙ্গে ভালোবেসে, আদর করে কথা বলাতাম। বোঝাতাম, এই অবস্থাটা তোমার থাকবে না। কিছুদিন পরই তুমি সুস্থ সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ হিসেবে বাঁচবে। অনেক কিছু বলে কান্না থামাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু জানিনা তাদের কান্না কখনো থেমেছে কি না। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ যখন আনন্দ করে স্বস্তিতে ঘুরছে তখন ওই নারীরা নীরবে কাঁদছে, নিজেদের লুকানোর পথ খুঁজছে, ওই পরিস্থিতিটা বোঝানো সম্ভব?
উইমেননিউজ২৪.কম: তারপর কি হলো?
ডা. হালিদা: এ সব মেয়েদের গর্ভের সন্তানকে আমরা যেমন চিকিৎসকরা চেয়েছি যত তাড়াতাড়ি প্রসব করাতে, তেমনি তারাও চাইতেন কতক্ষণে এই বোঝাটা শরীর থেকে আলাদা করতে পারবেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিবাহিত ছিলেন, আবার অনেকে অবিবাহিতও ছিলেন। তবে তারা গর্ভের সন্তান সম্পর্কে আমদের কাছে কিছু জানতে চাইতেন না। আমরাও তাদের কিছু বলতে চাইনি। কারণ এই সন্তান তাদের অনাকাঙ্খিত। কারণ তারা প্রতিটি মুহূর্তে জানছেন, পাকিস্তান সৈন্যদের ধর্ষণের শিকার হয়ে এই সন্তান জন্ম দিতে হচ্ছে। কেবল নীরবে কাঁদতেন। পেশাগত দায়িত্বের আড়ালে একজন মা হয়ে সেদিন দেখেছি তাদের অপমানের কষ্ট আর যন্ত্রণা। যে সন্তান তারা চাইছেন না অথচ তাকে পৃথিবীতে আনতে এত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে মাসের পর মাস। স্বাধীন একটা দেশের জন্য নীরবে সব সহ্য করেছেন এ যে কত বড় ত্যাগ। এ প্রজন্ম বুঝবে কী?
আরেকটি দিক হলো, প্রথমত তাদের মা বাবা পরিজন কেউ নেই কাছে। কবে থেকে এই নারীরা বাড়ি ছাড়া, কীভাবে ধর্ষণের শিকার হলেন কিছুই জানতে চাইনি কখনো। কারণ তাদের ওপর দিয়ে যা গেছে. যা সহ্য করেছে তা আর নতুন করে মনে করাতে চাইনি। তাতে অপমান ও কষ্ট বাড়বে বৈ কমবে না। ওদের সুস্থ জীবনে ফেরানোর চেষ্টাই ছিল আমাদের ব্রত। গল্প করে দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দিলে নিজেকে সমাজে অবহেলিত ভাববে, হয়তো বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই কমে যাবে, জীবনটাকে তুচ্ছ ভাববে।
উইমেননিউজ২৪.কম: সুস্থ হওয়ার পর এসব মেয়েদের কি হলো। আর সেবা সদনটিই বা কি হয়।
ডা. হালিদা: এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেবা সদনটিও বন্ধ হয়ে যাবে এমনটাই জানতে পারি। কেউ সুস্থ হলে তাদের পরিবারের স্বজনদের খবর দেওয়া হতো। কয়েকজনের স্বজন এসেছেন। কিন্তু নির্যাতনের শিকার মা বা বোনকে তারা বাড়ি নিয়ে যাননি। এই পরিস্থিতিটা ছিল খুবই মর্মান্তিক। পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন বা নিয়ে গেছে এমনটা দেখিনি। হয়তো কাউকে নিয়ে গেছে। নির্যাতিত নারীদের দেখভালের জন্য ওই ক্লিনিকে চিকিৎসকরা ছাড়াও নার্স ছিলেন। কাউন্সিলার কয়েকজন নারী ছিলেন আরও ছিলেন সমাজ কল্যাণ বিভাগের কয়েকজন।
আগেই শুনেছিলাম, সরকার থেকে নারী কল্যাণ পুনর্বাসন কেন্দ্র করা হচ্ছে যুদ্ধাহত বা নির্যাতিত নারীদের রাখার জন্য। যেখানে তারা বিভিন্ন রকমের হাতের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হবেন বা লেখাপড়া করবেন। এদিকটি দেখাশোনা করতেন সমাজকল্যাণ বিভাগের সদস্যরা। এই বিশেষ ব্যবস্থা বা পুনর্বাসনের দায়িত্ব তখনকার সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিজেই এই নির্যাতিত নারীদের অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এটা হয়তো অনেকে জানেন। সেবা সদনটি বন্ধ হওয়ার পর আমিও আগের কাজে যোগ দিই।
উইমেননিউজ২৪.কম: এই বিশেষ অভিজ্ঞতা আপনার কর্মজীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে?
ডা. হালিদা: একটা বিষয় সবসময়ই মনে হয়েছে, এই নির্যাতিত নারীদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার জীবনের অনেক বড় ঘটনা। নির্যাতিত এই নারীরা দেশের জন্য একরকম যুদ্ধ করেছেন। এছাড়াও এদেশের নারীরা কতভাবেই না যুদ্ধ করেছে। সেসময়টাতে দেশের বাইরে থেকেছি, মুক্তিযুদ্ধ করার সুযোগ পাইনি। তাই তাদের সেবা করার সুযোগ যেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিলেন। কিছুটা হলেও দেশের প্রতি ঋণ শোধ করতে পেরেছি। দেশকে স্বাধীন করতে অনেকে প্রাণ দিয়েছে। আমি তো এর কিছুই করতে পারিনি। এই মা ও বোনদের যে ত্যাগ ও যুদ্ধ-এর সাথে তো কিছুর তুলনা চলে না। তাদের সংকটের সময় পাশে থেকে সেবা করতে পারাটা অনেক বড় তৃপ্তি এনে দিয়েছে। যা অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য। পেশাগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে গর্ব করার মতো বিষয়। এই স্মৃতিতে আবেগাপ্লুত হই। এই ঘটনা আমার পেশা ও ব্যক্তিজীবনের অন্যতম প্রেরণা।
বাংলাদেশ হওয়ার পরও আমেরিকায় পড়ালেখা করতে গেছি কয়েকবার। থাকার সুযোগ হয়েছে কিন্তু সেই সুযোগ নিইনি। পিএইচডি করতে এবং আরও কয়েকটি প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশে থেকে কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। মনে হয়েছে দেশে এসে কাজ করা উচিত। একজন বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে চেয়েছি সবসময়। এটা আমার প্রতিজ্ঞা ছিল। দেশের মা ও বোনদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য সবসময় একটা চেষ্টা আমার ছিল, এখনো করছি। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে বুঝেছি নিজের দেশ কী, দেশের জন্য ভেতরের হাহাকার কতটা। দেশে ফিরে যখন স্বামী, সন্তান ও স্বজনকে ফিরে পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এ ছিল পরম পাওয়া। অন্যদিকে পেশাগত দক্ষতা দিয়ে যুদ্ধে নির্যাতিত আহত নারীদের সেবা করতে পারাটাও আমার সৌভাগ্য। এ যেনো দেশের জন্য কিছু করা। এতবছর পরও সেবা সদনের সেই মা-বোনদের যন্ত্রণাকাতর মুখগুলো স্মৃতিতে ভাসে। বহু মৃত্যু, অনেক ত্যাগ আর যন্ত্রণার বিনিময়ে আমরা আমাদের দেশটাকে অর্জন করেছি, তা ভুলি কী করে! বাংলাদেশ আমার পরিচয়, বাংলাদেশ আমার অহংকার।
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- রোববার যেসব এলাকায় ব্যাংক বন্ধ থাকবে
- কোলে চড়ে ভোট দিলেন বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারী
- সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের রহস্য ফাঁস
- নিয়োগ দেবে হীড বাংলাদেশ, যারা আবেদন করবেন
- অন্দরে সবুজের ছোঁয়া, গরমে মিলবে স্বস্তি
- কুমিল্লায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে
- যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
- ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
- বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হলো দেশ
- কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু
- পার্টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে : রওশন এরশাদ
- বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ
- আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
- গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন কীভাবে নিবেন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- শবে বরাত যেভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে উৎসবে পরিণত হলো