সোনালু রোদে রঙ ঝলমলে নীলটুনি!
আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০১:১৩ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার
সোনালু রোদে রঙ ঝলমলে নীলটুনি!
আজ সকালে সোনারোদ গায়ে মেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। শীতের সকাল। এই করোনাকালে ছাদে খোলা হাওয়ায় খুব ভালো লাগছে।
আমার ঠিক সামনেই বিশাল সাইজের একটি টবে বেশ বড় একটি ঝুমকো জবার গাছে। রঙবেরঙের জবা ফুটে আছে। হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে জবা গাছের চিকন ডালে একটি নীলটুনি এসে বসলো। রোদের মধ্যে ওর ঝলমলে রঙ দেখে আমার মন ভরে উঠলো খুশিতে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। গাছের ডালে ডালে ও নেচেই চলেছে। আর আমি ওর রূপে মুগ্ধ হচ্ছি।
ও আমার এতটা কাছে যেন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো ওর কোমল দেহ। নীল মখমলের মত ওর সারাদেহ। ডালার দুপাশের হলুদ রঙ দেখে মনে হলো হলুদ যে কত সুন্দর রঙ তা এই পাখিটি না দেখলে উপলব্ধি করা কঠিন!
আজ ওকে দেখে প্রায় দুই যুগ আগের এক বিকেলের কথা মনে পড়ে গেলো।
দোতলার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। বিকেল বেলা। শেষ বিকেলের রোদ লুকোচুরি খেলছে আম গাছের পাতার আড়ালে। আম গাছটির ডালে অনেকক্ষণ ধরেই এক জোড়া দোয়েল দম্পতিকে বেশ ব্যস্ত দেখছি। কখনো তারা আম গাছের ডালে বসছে, কখনোবা সামনের বাতাবি লেবু গাছে উড়ে যাচ্ছে। আবার হঠাৎ করেই উড়ে চলে যাচ্ছে চোখের আড়ালে।
ওদের চঞ্চলতা দেখে আমার সন্দেহ হলো। কী ব্যাপার! ভালো করে তাকিয়ে দেখি আম গাছের একটি ডালে তিনটি ছোট্ট পাখি বসে আছে জড়োসড়ো হয়ে। মেয়ে দোয়েলের মতো ফ্যাকাশে দেখতে। কিন্তু আকারে আরো ছোট। ওদের দেখে মনে হলো এই দোয়েল দম্পতির বাচ্চা নয় তো ওরা!
ভেবে ভেবে আমি যখন অস্থির ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন বাবা দোয়েলটা উড়ে এসে বসলো ঐ ছোট পাখিগুলোর পাশে। একটা পাখিকে ঠোঁটে করে নিয়ে আসা খাবার খাওয়ালো। তারপর আবার উড়ে চলে গেলো দূরে।
আমি এই দৃশ্য দেখে নিশ্চিত হলাম এই তিনটে পাখি দোয়েল দম্পতির ছানা। হয়তো দুচার দিন হলো ওরা প্রথম ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে। তাই বেশি দূর উড়তে পারে না। কিছুক্ষণ পর মা দোয়েলটি খাবার নিয়ে এলো। খাওয়ালো আর একটি ছানাকে। তারপর আবারো বাবা দোয়েলটি খাবার নিয়ে এলো। এবার সে খাওয়ালো তৃতীয় ছানাটিকে। আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এ দৃশ্য দেখছি।
এ সময় হঠাৎ বাতাবি লেবু গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা টুনটুনি পাখি বসে আছে। অস্থিরভাবে নড়াচড়া করছে ও।
কিন্তু এরচেয়েও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য। হঠাৎ দেখি টুনটুনিটির কাছ থেকে হাতখানেক দূরে চিকন একটা ডালে কী যেন একটা নড়ছে অস্থিরভাবে। লক্ষ্য করে দেখি চড়াই পাখির চেয়ে ছোট, টুনটুনির চেয়ে বড় একটা অদ্ভুত সুন্দর পাখি!
সূর্যের আলোয় ময়ূরকণ্ঠী রঙের কী বাহারটাই না খুলেছে ওর ক্ষুদ্র দেহে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এরপর থেকে বহুবার ওকে আমি কখনো একা, কখনোবা সঙ্গীসহ আমাদের বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদের ফুল গাছগুলোতে নাচানাচি করে মধু খেতে দেখেছি।
এই অতি চমৎকার রূপবতি পাখিটি মধুপায়ী বংশের অন্তর্গত শিঞ্জীরিকা গণের এক প্রজাতি। নাম দুর্গ টুনটুনি। আমাদের দেশে ওকে নীলটুনি নামেও ডাকা হয়। কেউ কেই ওকে মোচা টুনিও বলে। সম্ভবত আমাদের দেশের সবচেয়ে সুন্দর পাখিদের অন্যতম এই পাখি। নীলটুনির (Cinnyris asiaticus) ইংরেজি নাম Purple Sunbird। বৈজ্ঞানীক নাম Nectarinia asiaticl।
নীলটুনি বা দুর্গা টুনটুনি লম্বায় ৪ ইঞ্চি। প্রজননকালে পুরুষ পাখিটির মাথা, ঘাড়, সারা দেহের ওপরের পালক, গলা এবং বুক ধাতব কালো রঙের হয়। সূর্যের আলো পড়লে শরীর থেকে সবুজ, নীল, রক্ত বেগুনি কিংবা ময়ূরকণ্ঠী আভা বের হয়। ডানার পাখার মধ্য ভাগ থেকে লেজ পর্যন্ত পাটকিলে বা হালকা খয়েরি। বুকের মাঝখান দিয়ে সরু তামাটে দাগ নিচের দিকে নেমে গেছে। দু ডানার পাশে হলুদ রঙ রয়েছে। এই হলুদ পালকগুচ্ছ বেশিরভাগ সময় দেহের অন্য পালকের নিচে চাপা পড়ে থাকে। যখন পুরুষ পাখি নাচে তখন এদের এ পালকের বাহার ফুটে উঠে। তবে এই রূপ শুধু বাসা বাঁধা ও ডিম পাড়ার মৌসুমেই।
এছাড়া শীতকালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত স্ত্রী-পুরুষ পাখি একই রকম দেখতে। তবে স্ত্রী পাখিটি পুরুষ পাখির মতো অত চঞ্চল নয়। স্ত্রী পাখিদের রঙ পিঠির দিকে জলপাই বাদামি। পেটের দিকে ফ্যাকাসে হলুদ।
নীলটুনির চঞ্চুটি চোখে পড়ার মতো। বেশ লম্বা ও সরু চঞ্চু সামনের দিকে বাঁকানো এবং তীক্ষ্ণ। ওপর-নিচ দুই অংশের সামনের ভাগের অর্ধেক থেকে এক-তৃতীয়াংশ খুব সূক্ষ্ম করাতের মতো ভাঁজ কাটা। চঞ্চু, পা ও চোখের ভেতরের রঙ কালো।
এ পাখি সাধারণত গাছের সরু ডালে বসতে বেশি পছন্দ করে। খুবই অস্থির স্বভাবের ওরা। সারাক্ষণই এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে বেড়ায়। শরীর খুব হালকা। তাই উড়তে উড়তে ভাসতে পারে। আর ফুলের পাপড়ির ওপর বসতে পারে সহজেই।
ওরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের সময় জিমন্যাস্টিকের মতো নানা কসরত দেখায়। দুর্গা টুনটুনি সাধারণত জোড়া বেঁধেই থাকে। সব সময়ই দেখা যায় ওরা চঞ্চলভাবে এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে বসছে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ফুলের ভেতর থেকে মধু বের করতে ব্যস্ত থাকছে।
মধুই ওদের প্রিয় খাবার। এ ছাড়াও ওরা নানা রকম কিট-পতঙ্গ, মাকড়সা, প্রজাপতি, মশা-মাছি খেতে পছন্দ করে।
উত্তর আমেরিকার হামিং বার্ডদের মতো দূর্গা টুনটুনিরাও ফুলের সামনে উড়তে উড়তে ফুলের মধ্যে চঞ্চু ঢুকিয়ে মধু খেতে পারে। উড়ন্ত অবস্থায় ছোট পতঙ্গ ও মাকড়শা ধরে খেতে ওরা ভীষণ ওস্তাদ।
নীলটুনি গানের পাখি। পুরুষ টুনি চমৎকার সুরে গান গায়। ভোরে সব পাখির আগে এরা মধুর কণ্ঠে ঘুমভাঙানি গান গেয়ে ওঠে। এরা মিষ্টিমধুর চি-হুইট-চি-হুইট-চি-হুইট স্বরে গান করে। যতটুকু পাখি, আওয়াজ তার তুলনায় বেশ জোরালো। স্ত্রী টুনি সাধারণত নীরব, স্বরও বেশ কর্কশ।
শীত ও বসন্তই প্রধানত নীলটুনির প্রজনন কাল। কখনো কখনো এ সময় দুই এক মাস আগে বা পরে শুরু হয়। ওরা ক্ষেত্রবিশেষে দুবার ডিম পাড়ে এবং একই বাসায় পরপর দুবার ছানা ফোটায়।
নীলটুনির বাসা ঝুলন্ত লম্বা গড়নের থলির মতো। বাসার এক পাশে ছোট গোল দরজা থাকে। দরজার ওপর অনেক সময় কার্নিশের মতো একটা ছাউনি থাকে। মাটি থেকে ৩/৪ ফিটের মধ্যেই গাছের সরু ডালে এই বাসা ঝোলে। নরম ঘাস, নানা রকম আবর্জনা, গাছের ছাল ইত্যাদি দিয়ে বাসা তৈরি করে ওরা। বিভিন্ন রকম বীজের খোসা দিয়ে বাসার ভেতর খুব পরিষ্কার করে নরম আস্তরণ বিছায়।
ডিমে তা দেয় স্ত্রী পাখি। বাসার পছন্দ করা এবং বাসা তৈরির দায়িত্বও মেয়েটির। পুরুষ পাখিটি কেবল ছানাদের খাওয়াতে সাহায্য করে। বাসায় ডিম থাকে ২ থেকে ৩টি। ডিমের রঙ সাদার ওপর সবুজ খয়েরির আভাযুক্ত। তার ওপর বাদামী ও ধুসরের ছিট থাকে। ডিমের মাপ ০.৬৪ ইঞ্চি এবং চওড়া ০.৪৬ ইঞ্চি।
ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। এ সময় পুরুষ টুনি ক্ষণে ক্ষণে ডাকতে থাকে। ছানা ১৬-১৭ দিনে বড় হয় এবং বাসা ছাড়ে। বাসা ছাড়ার পরও এরা সপ্তাহ দুয়েক বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। একসময় নিজেরাই ঘর বাঁধে।
নীল টুনিরা আট থেকে বার বছর পর্যন্ত বাঁচে। ভালো ফুল বাগানে দুর্গা টুনটুনির পদচারণা হবেই। আমাদের দেশে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের ফুল গাছবহুল এলাকায় এখনো প্রচুর পরিমাণে দুর্গা টুনটুনি রয়েছে। মুখে তীব্র ‘উইচ উইচ’ শব্দে বাগানে দ্রুত ঝড়ের বেগে উড়ে ওরা নিজেদের উপস্থিতি জানিয়ে দেয় আমাদের।
লেখক: পাখি পর্যবেক্ষক। আহবায়ক-বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটি (বিবিডব্লিউএস)।
- ‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
- কেউ হিট স্ট্রোক করলে কী করবেন?
- সালমান আমার জীবন: ঐশ্বরিয়া
- দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
- গোপালগঞ্জে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন
- দিনাজপুরে সজনের ডাটার বাম্পার ফলন
- জয়পুরহাটে পাকিস্তানী হানাদাররা প্রথম গণহত্যা শুরু করে ২৫ এপ্রিল
- কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই
- বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
- কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির
- কেএনএফের আরও ৩ নারী সহযোগী গ্রেপ্তার
- ঢাকায় কাতারের আমির, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আজ
- ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল
- মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- জাপার সভায় গান গাইলেন রওশন এরশাদ
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি জন কিটস
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য