‘আমার সোনার বাংলা’ যেভাবে জাতীয় সংগীত হলো
উইমেননিউজ২৪ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১১:৫১ এএম, ১৫ মে ২০২৫ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি
গত বছরের পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যেসব বিষয় পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় তার মধ্যে একটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থানকালে আন্দোলনকারীদের এক পক্ষ জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় আরেক পক্ষকে বাধা দেয়ায় ওই বিতর্ক আবার সামনে এসেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পক্ষের ব্যক্তিদের যুক্তি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশ সৃষ্টির অনেক আগে রচিত হয়েছিল। আর বিপরীত পক্ষের ভাষ্য, এই গান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি যখন চলমান, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি কীভাবে ও কেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল, তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
যেভাবে ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হলো
‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছিলেন বলে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও লেখায় উঠে আসলেও এই গানটির মূল পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি বলে এই তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি - রবীন্দ্রনাথের জীবনীলেখক প্রশান্তকুমার পাল ১৯৯০ সালে প্রকাশিত বই ‘রবিজীবনী’তে এমনটাই লিখেছেন।
ওই বইয়ে প্রশান্তকুমার পাল উল্লেখ করেছেন যে এই গানটি ১৯০৫ সালের ২৫শে অগাস্ট কলকাতা টাউন হলের একটি প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথমবার গাওয়া হয়েছিল।
১৯৭১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশে, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীত হিসেবে অনেক অনুষ্ঠানেই এই গানটি গাওয়া হতো বলে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।
তবে এটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করার ধারণা প্রথমবার তৈরি হয় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আচমকা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়ার মানুষের মধ্যে গণবিক্ষোভ দেখা যায়। ঢাকার অনেক জায়গায় পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।’
‘দোসরা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় পতাকা উত্তোলন করে সেটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বলে ঘোষণা করেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, ডাকসুর ভিপি আ.স.ম. আবদুর রব। ওই দিনই দোসরা মার্চ বিকেলে ইকবাল হলের ক্যান্টিনে তৎকালীন ছাত্রলীগের একাংশের গুরু সিরাজুল আলম খানের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার লেখার চিন্তা করা হয় ও সন্ধ্যায় ইকবাল হলে ওই ইশতেহারটি লেখা হয়।’
দোসরা মার্চ সন্ধ্যায় ইকবাল হলে বসে লেখা ইশতেহারটিতে ‘আমার সোনার বাংলা’কে স্বাধীন বাংলার জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লিখিত হয় বলে বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
ওই ইশতেহারটি পরদিন, তেসরা মার্চ, পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হওয়া ছাত্র সংসদ পরিষদের এক জনসভায় পাঠ করেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ। পল্টন ময়দানের সেই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন সেসময়কার ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকিও। তিনি ২০২৩ সালে মারা যান।
নূরে আলম সিদ্দিকি ২০১৬ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ ছাড়াও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ গানটিও অনেকের পছন্দের তালিকায় ছিল।
তবে ওই গানটিকে দুটি কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়নি বলে বলছিলেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, যিনি সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
‘দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের একটি বিষয় ছিল যে এই গানে বাংলা বা বাংলাদেশ শব্দটি ছিল না। আরেকটি বিষয় ছিল যে এই গানের রেকর্ড সেসময় পাওয়া যায়নি’, বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
কোন গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্ধারণ করা হবে, তার পেছনে গানের রেকর্ডের প্রাপ্যতা সেসময় একটি বড় কারণ ছিল বলে বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
কারণ গানের রেকর্ড না থাকলে ঠিক কোন সুরে এবং গানের কতটুকু জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে বলছিলেন তিনি।
মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘সেসময় ধনধান্যে পুষ্পে ভরা গানের কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে ছিল না। কিন্তু ১৯৭০ সালে জহির রায়হান 'জীবন থেকে নেয়া' চলচ্চিত্রে আমার সোনার বাংলা গানটি ব্যবহার করায় সেটির একটি রেকর্ড ছিল আমাদের কাছে।’
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বহু আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি ব্যবহার হয়েছে বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী লেখায়।
২০১৬ সালে অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোরে প্রকাশিত প্রাবন্ধিক মুহাম্মদ সবুর ‘আমার সোনার বাংলা যেভাবে জাতীয় সংগীত হলো’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফের লেখা ও সুর করা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি'র পাশাপাশি 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়া হয়।
সংগীতশিল্পী সনজীদা খাতুন, যিনি ২০২৫ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন, তার প্রবন্ধ 'রমনা বটমূল, ছায়ানট এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’তে লিখেছেন ১৯৫৬ সালে গণপরিষদের অধিবেশনে 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর তাকে অনুরোধ করেছিলেন।
কার্জন হলে আয়োজিত ওই অধিবেশনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি ‘বাঙালিদের কতখানি আবেগতাড়িত করে, সেটি বোঝানোর জন্য শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানিদের গানটি শোনাতে চেয়েছিলেন’ বলে তার লেখায় উল্লেখ করেন সনজীদা খাতুন।
কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত ওই প্রবন্ধে সনজীদা খাতুন আরো লিখেছেন যে ষাটের দশকে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি চলা সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির বড় ভূমিকা ছিল।
সনজীদা খাতুন তার লেখায় উল্লেখ করেন, ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করার পর সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করে সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। সেসময় সব সভা-সমাবেশে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করা হয়, যার মধ্যে ‘আমার সোনার বাংলা’ ছিল অন্যতম।
ওই আন্দোলনের একজন সংগঠক, সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের বরাত দিয়ে সনজীদা খাতুন তার লেখায় লিখেছেন যে ‘সাতষট্টির আন্দোলনের সবচেয়ে স্থায়ী ফসল 'আমার সোনার বাংলা' গানটির যথাযোগ্য প্রতিষ্ঠা।’
ষাটের দশকের সেই আন্দোলন চূড়ান্তভাবে পূর্ণতা পায় একাত্তরের এপ্রিলে, যখন ‘আমার সোনার বাংলা’কে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় – যা পরে মুজিবনগর নামে পরিচিতি পায় – বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি নীহার রঞ্জন চক্রবর্তী। ২০২০ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন সেদিন নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর থেকে একদল গায়ককে আনা হয়েছিল 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়ার জন্য।
শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
তখন সেখানে প্রথমবারের মত সরকারিভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবেশন করে কৃষ্ণনগর থেকে আসা ওই গায়কদল।
পরে ১৯৭২ সালের ১৩ই জানুয়ারি বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ‘আমার সোনার বাংলা’র প্রথম দশ চরণ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
- উপকূলে চলছে ভারী বর্ষণ, জনজীবন স্থবির
- বাসের ধাক্কায় মা-ছেলেসহ সিএনজির তিন যাত্রী নিহত
- আজ বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
- ৬০ কিমি বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস
- মেহেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
- দেশে শিশুদের অপুষ্টি সংকট এখনও প্রকট
- নানাবাড়ি গেলেই মন ভালো হয়ে যায়: পরীমণি
- এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়লো
- সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
- ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার নারী ও শিশুরা
- অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ
- হাসিনা-কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি
- সাবেক হাইকমিশনার মুনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
- তিনদিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শিশু নাসিমার
- ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, জানালেন রিজওয়ানা
- প্রথম বারের মতো কাবাডি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ নারী দল
- আল্লাহ না চাইলে বিশ্বকাপের টিকিট পেতাম না: জ্যোতি
- ক্যারিয়ার সেরা র্যাংকিংয়ে সেরা দশে নাহিদা
- আজ বিশ্ব পরিবার দিবস, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান
- নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ
- দুই পুত্রবধূকে নিয়ে নিজ বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়া
- বড় হারে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন
- চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
- তুমি আমার আশ্রয়, আবেগী বার্তা কোহলির
- গরমে সর্দি-কাশি-ঠান্ডার সমস্যায় সুস্থ থাকার উপায়
- ভাইরাল হওয়া পরীমণির ছবি নিয়ে যা জানা গেল
- দেশের পথে খালেদা জিয়া
- সম্পদের তথ্য গোপন মামলায় জোবাইদার জামিন
- ইয়াশ-তটিনীর আত্মহত্যার চেষ্টা !