গ্রিফিথ অবজারভেটরি: জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অসাধারণ তীর্থ
আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ১৬ মে ২০২৫ শুক্রবার

গ্রিফিথ অবজারভেটরির সামনের লনে লেখক।
গ্রিফিথ অবজারভেটরি বা মানমন্দির ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে। বিশাল পাহাড়ের একদম চূড়ায় গ্রিফিথ পার্কের মাউন্ট হলিউডের দক্ষিণমুখী ঢালে অবস্থিত। এটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এ প্রাঙ্গণ থেকে দক্ষিণ-পূর্বে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর, দক্ষিণে হলিউড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরসহ লস অ্যাঞ্জেলেস অববাহিকার দৃশ্য দেখা যায়।
আমরা ৬ এপ্রিল এই মানমন্দিরটিতে ঘুরতে যাই। আমার আসলে আগে থেকে এই বিশাল মহাকাশ ভান্ডারের বিষয়ে তেমন কোনো ধারনাই ছিলো না। রুমি আপা পথে যেতে যেতে যতটা বললেন, তাতে প্রাথমিক একটি ধারণা পাওয়া গেলো। করোনা শহর থেকে প্রায় তিনঘন্টা ড্রাইভ করে যাওয়ার পর এর বিশালতা দেখে আমি তো থ। এ বিশ্বে কত কিছু আছে জানান। আর কত অজানারে...!!
মানমন্দিরটি হলিউড সাইন এবং মহাকাশ ও বিজ্ঞান-সম্পর্কিত প্রদর্শনী বিস্তৃত পরিসরে কাছ থেকে দেখার জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি আসলে মহাকাশ বিষয়ক বিশ্বের একটি অন্যতম জাদুঘর। গ্রিফিথ অবজারভেটরি জনসাধারণকে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে, চিন্তা করতে এবং আকাশ দেখতে উৎসাহিত করে।
কর্নেল জে. গ্রিফিথ নামে আমেরিকান একজন ধনকুবের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। ১৮৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর, গ্রিফিথ জে. গ্রিফিথ পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ৩,০১৫ একর জমি দান করেন। তার উইলে তিনি দান করা জমিতে একটি মানমন্দির, প্রদর্শনী হল এবং প্ল্যানেটোরিয়াম নির্মাণের জন্য তহবিলও দান করেন। গ্রিফিথের উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের জন্য জ্যোতির্বিদ্যা সহজলভ্য করা। প্রতিষ্ঠাতা জে গ্রিফিথ চেয়েছিলেন জনসাধারণ যেন টেলিস্কোপ দিয়ে এই মহাজগৎ কে দেখতে পারে যা দেখে হয়তো মানুষের মন আরো প্রশস্ত হবে।
ভবনটিতে গ্রীক, বিউক্স-আর্টস এবং ১৯৩০ সালের মডার্নের প্রভাব একত্রিত হয়েছে। বাইরের অংশটি গ্রীক কী প্যাটার্ন দিয়ে সজ্জিত। জে. গ্রিফিথের ইচ্ছানুসারে ১৯৩৫ সালে মানমন্দিরটি উদ্বোধনের পর থেকে প্রবেশমূল্য ছাড়াই আগ্রহীরা এতে প্রবেশ করতে পারেন।
গ্রিফিথ অবজারভেটরি ফাউন্ডেশন এখন প্রাতিষ্ঠানটি তত্বাবধায়ন করছে। প্রতিষ্ঠাতার নাতি-নাতনি ডেব্রা গ্রিফিথ এবং হ্যারল্ড গ্রিফিথ এর সাথে যুক্ত আছেন। ডাঃ ইসি ক্রুপ বর্তমানে অবজারভেটরি ডিরেক্টর।
মানমন্দিরটি ছয়টি বিভাগে বিভক্ত: দ্য ওয়াইল্ডার হল অফ দ্য আই, দ্য আহমানসন হল অফ দ্য স্কাই, দ্য ডব্লিউএম কেক ফাউন্ডেশন সেন্ট্রাল রোটুন্ডা, দ্য কসমিক কানেকশন, দ্য গুন্থার ডেপথস অফ স্পেস হল এবং এজ অফ স্পেস মেজানাইন।
গ্রিফিথ অবজারভেটরির ভিতর প্রাচীন এবং আধুনিক টেলিস্কোপ ও গবেষণার জন্য নিয়োজিত বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এগুলো আকাশ ও বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়।
গ্রিফিথ অবজারভেটরির ছাদে একাধিক অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ রয়েছে যেগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত। এই টেলিস্কোপের সাহায্যে মেঘমুক্ত আকাশে সৌরজগতের গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র এবং সূর্যের দাগ, সূর্যের অগ্নিশিখা দেখা যায়। সৌরশিখা হলো সূর্যের বায়ুমন্ডলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরনের একটি তীব্র বিস্ফোরণ। সূর্যের সক্রিয় অঞ্চলে প্রায়ই এই তীব্র বিস্ফোরণ হয়। এর সাথে করনাল ভর নির্গমন, সৌর কণা ঘটনা এবং অন্যান্য সৌর ঘটনাও সংঘটিত হয়।
গ্রিফিথ অবজারভেটরির ভেতরে রয়েছে প্রাচীন এবং আধুনিক টেলিস্কোপ, সুইং পেন্ডুলাম, টেসলা কয়েল, গ্রহ নক্ষত্র দেখার জন্য অত্যাধুনিক প্রজেক্টর ইত্যাদি। এছাড়াও এখানে রয়েছে সামুয়েল ওসসিন প্লানেটেরিয়াম থিয়েটার যা বিশ্বের সেরা প্ল্যানেটেরিয়াম। এখানে লাইভ শোতে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ এবং মহাবিশ্বকে দেখানো হয়। এই লাইভ শো দেখার জন্য অবশ্য আলাদাভাবে টিকিটের প্রয়োজন হয়।
১৯৩৫ সালে উদ্বোধনের পর থেকে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ ১২ ইঞ্চি জিস রিফ্র্যাক্টিং টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশ দেখেছে। ফলে এ টেলিস্কোপ মহাকাশ দেখায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহারিত হয়েছে।
টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দূরের বস্তু থেকে নির্গত বিকিরণ সংগ্রহ, পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন হ্যানস লিপারশে ১৬০৮ সালে। পরে ১৬০৯ সালে দূরবর্তী তারা পর্যবেক্ষণের জন্য গ্যালিলিও গ্যালিলি একটি দুরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। গ্যালিলিও তার দুরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বৃহস্পতির উপগ্রহ এবং শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সেজন্যই প্রথম দিকের টেলিস্কোপ এর মধ্যে গ্যালিলিও টেলিস্কোপ বিখ্যাত।
গ্রিফিথ অবজারভেটরিতে উল্লেখযোগ্য টেলিস্কোপগুলোর মধ্যে রয়েছে জিস টেলিস্কোপ, সোলার টেলিস্কোপ, গ্যালিলিও টেলিস্কোপ। এছাড়াও এখানে প্রাচীন টেলিস্কোপ সংরক্ষিত রয়েছে। আমরাও বেশ কয়েকটি টেলিস্কোপের উপর চোখ রেখে দূরের আকাশ দেখেছি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই প্ল্যানেটারিয়ামটি আকাশে পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখেন মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং। দ্বিতীয় নভোচারী হিসেবে চাঁদে নামেন বাজ অলড্রিন। অ্যাপোলো ১১ মিশনের তিন দুঃসাহসী নভোচারীর তৃতীয়জন মাইকেল কলিন্স চাঁদে নামেননি। তিনি অ্যাপোলো ১১ নভোযান নিয়ে রয়ে যান চাঁদের কক্ষপথে। বাকি দুজন ল্যান্ডার ‘ইগল’-এ চড়ে চাঁদে নামেন। তারদের ছোট্ট এ পদক্ষেপ মানবজাতির জন্য ছিল বিশাল এক অর্জন। চাঁদে অভিযানের জন্য অ্যাপোলো প্রোগ্রামের এই তিন নভোচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই প্ল্যানেটারিয়াম ব্যবহার করা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের স্মৃতিস্তম্ভ:
অবজারভেটরির সামনের লনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সর্বকালের ছয়জন শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদকে শ্রদ্ধা জানাতে এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। এই ছয়জন জ্যোতির্বিদ হলেন: হিপ্পার্কাস (প্রায় ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩); গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪–১৬৪২); জোহানেস কেপলার (১৫৭১–১৬৩০); আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২–১৭২৭); এবং উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮–১৮২২)। ১৯৩৪ সালের নিউ ডিল শিল্পকর্র (নিউ ডিলটি ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট কর্তৃক প্রণীত ব্যাপক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের একটি সিরিজ ছিল, যা ১৯২৯ সালে শুরু হয়েছিল) আওতায় ছয়জন শিল্পী এই স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করেন। স্মৃতিস্তম্ভের উপরে একটি আর্মিলারি গোলক রয়েছে ।
গ্রিফিথ অবজারভেটরির ভবন এবং প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট প্রয়োজন হয় না। অবজারভেটরিতে প্ল্যানেটেরিয়াম শো সপ্তাহের দিনগুলিতে দিনে আটবার এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দশবার করা হয়। প্ল্যানেটেরিয়াম শোতে প্রবেশের জন্য নামমাত্র ফি নেওয়া হয়।
অবজারভেটরির পাশে একটি ছোট পার্কিং লট রয়েছে, এবং ওয়েস্টার্ন ক্যানিয়ন রোড বরাবর আরও জায়গা রয়েছে গাড়ি রাখার জন্য। এসব স্থানে গাড়ি রাখার জন্য প্রতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১০ ডলার ফি দিতে হয়। এছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেস পরিবহন বিভাগ ভার্মন্ট/সানসেট মেট্রো রেড লাইন স্টেশন থেকে অবজারভেটরিতে প্রতিদিন কম খরচের পাবলিক বাস চলাচল করে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
- উপকূলে চলছে ভারী বর্ষণ, জনজীবন স্থবির
- বাসের ধাক্কায় মা-ছেলেসহ সিএনজির তিন যাত্রী নিহত
- আজ বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
- ৬০ কিমি বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস
- মেহেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
- দেশে শিশুদের অপুষ্টি সংকট এখনও প্রকট
- নানাবাড়ি গেলেই মন ভালো হয়ে যায়: পরীমণি
- এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়লো
- সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
- ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার নারী ও শিশুরা
- অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ
- হাসিনা-কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি
- সাবেক হাইকমিশনার মুনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
- তিনদিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শিশু নাসিমার
- ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, জানালেন রিজওয়ানা
- প্রথম বারের মতো কাবাডি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ নারী দল
- আল্লাহ না চাইলে বিশ্বকাপের টিকিট পেতাম না: জ্যোতি
- ক্যারিয়ার সেরা র্যাংকিংয়ে সেরা দশে নাহিদা
- আজ বিশ্ব পরিবার দিবস, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান
- নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ
- দুই পুত্রবধূকে নিয়ে নিজ বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়া
- বড় হারে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন
- চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
- তুমি আমার আশ্রয়, আবেগী বার্তা কোহলির
- গরমে সর্দি-কাশি-ঠান্ডার সমস্যায় সুস্থ থাকার উপায়
- ভাইরাল হওয়া পরীমণির ছবি নিয়ে যা জানা গেল
- দেশের পথে খালেদা জিয়া
- সম্পদের তথ্য গোপন মামলায় জোবাইদার জামিন
- ইয়াশ-তটিনীর আত্মহত্যার চেষ্টা !