ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:০৬:৪৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
পূর্বাচল ৩০০ ফিটে নেতাকর্মীদের ঢল মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে যুবক নিহত পোস্টাল ভোটে নিবন্ধনের সময় বাড়লো হাদি হত্যায় মোটরসাইকেল চালকের সহযোগী গ্রেপ্তার ইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে নিষিদ্ধ করল সরকার

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাঁধা হয় হাত-পা, শারীরিক সম্পর্ক করে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৩৫ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৯ রবিবার

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় গৃহপরিচারিকা আয়েশাকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত নাজমুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি।

গত ৪ জুলাই রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ভাড়া বাসায় খুন হন আয়েশা। কী কারণে তিনি খুন হয়েছেন অজ্ঞাতই ছিল সবার কাছে। এরপর আয়েশার স্বামী অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে পুলিশ এই ঘটনায় সন্দেহভাজন নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে। সেইসঙ্গে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ঘুমের ওষুধ, জিআই তার ও ভিকটিমের ব্যবহৃত সিমকার্ড।

নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ রোববার গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রায় দু’বছর আগে স্বামীর সঙ্গে সংসার ভেঙে যায় আয়েশার। এরপর থেকে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। অন্যদিকে স্বামী জসিম উদ্দীন দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকেন টাঙ্গাইলে। স্বামীকে কীভাবে ফেরত পাবেন সেই চিন্তায় অস্থির ছিলেন আয়েশা।

এরই মধ্যে পরিচয় হয় প্রতিবেশি নাজমুলের সঙ্গে। পেশায় প্রাইভেটকার চালক নাজমুল মূলত একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। পরিচয় হওয়ার পর একপর্যায়ে নাজমুলকে তার স্বামীর বিষয়টি জানান আয়েশা।

গোয়েন্দা পুলিশ আরো জানায়, স্বামী পাশে না থাকার সুযোগটি নেয় নাজমুল। স্বামীকে কবিরাজের ‘বান’ মারার কারণেই নাকি তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এবং আয়েশাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বউ নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। এমনকি আয়েশার ছেলে-মেয়ের ওপরেও নেই কোনো টান। নাজমুলের এমন প্রতারণা সরল মনে বিশ্বাস করে আয়েশা। এরকম অবস্থা থেকে কীভাবে স্বামীকে ফেরত পাওয়া যায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি।

ঘটনার দিন রাত ১০টার পর থেকে বিভিন্ন সময় আয়েশা নাজমুলকে অনেকবার ফোন করেন। রাত ১টা ২৫ মিনিটে আয়েশার সঙ্গে সবশেষ কথা হয় নাজমুলের। কথামতো নাজমুল রাত দেড়টার দিকে আয়েশার বাসায় যান। সেসময় তার ছোট ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। আয়েশা তার স্বামীকে বশে আনতে নাজমুলকে আড়াই হাজার টাকাও দিয়েছেন। সে সময় কবিরাজের দোহাই দিয়ে আয়েশার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন নাজমুল। 

এদিকে, আয়েশার স্বামী জসিম উদ্দিন টাঙ্গাইল থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় এসে তার বোনের বাসায় ওঠেন। বিষয়টি নাজমুলের কানে গেলে সুযোগ নেন তিনি।  আয়েশাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে কবিরাজের মাধ্যমেই তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

কিন্তু এতকিছু করার পরও স্বামী যখন আয়েশার কাছে আসেনি, তখন রেগে যান তিনি।এরপর গত ৪ জুলাই রাতে নাজমুলের সঙ্গে আয়েশার অনেক কথা কাটাকাটি হয়।  নাজমুল তার কাছে যেতে চাইলে সে আরও উত্তেজিত হয়ে যায়। 

এরপর আয়েশা নাজমুলের কাছে তার টাকা ফেরত চায় এবং তাকে নষ্ট করার বিষয়টি চিৎকার করে জানায়। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে কৌশল অবলম্বন করেন নাজমুল। ঘুমের ওষুধ নিয়ে ওইদিনই আয়েশার ঘরে গিয়ে তাকে বোঝায় যে আয়েশাকে “বাঁধা বান ” মেরেছে তার ছোট সতীন হামিদা। তাই কবিরাজ ওষুধ দিয়েছে তাকে খাওয়ার জন্য। এরপর সেটি আয়েশাকে খাইয়ে আবারও তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন নাজমুল। কবিরাজের নির্দেশে এটা করা হয়েছে বলে আয়েশাকে আবারও জানায়। 

এরপর আয়েশা নাজমুলকে আবারও জিজ্ঞাসা করে যে কীভাবে তার স্বামীকে ফেরত পাওয়া যাবে। তখন ভিন্ন কৌশল নিয়ে নাজমুল জানায়, যেহেতু তাকে “বাঁধা বান” মারা হয়েছে, তাই তাকে হাত-পা বেঁধে তার সঙ্গে আবারও শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে। এরপর নাজমুল আয়েশার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরই মধ্যে ওষুধের ক্রিয়ায় সে অচেতন হয়ে পড়ে। নাজমুল তখন জিআই তার আয়েশার গলায় পেঁচিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

আয়েশার মৃত্যুর পর তার স্বামী অজ্ঞাতদের আসামি করে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচনে কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর উত্তরের গোয়েন্দা বিভাগ। গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় এ ঘটনার মূলহোতা নাজমুলকে গ্রেপ্তার হন। 

পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানের নির্দেশনায় এডিসি শাহজাহান তত্ত্বাবধানে টিম লিডার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।