ঢাকা, শনিবার ২২, মার্চ ২০২৫ ২:১৪:৪৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ছুটির দিনে রাজধানীতে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা নারী যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিতে নতুন প্রতিশ্রুতির আহ্বান লন্ডনে বিদ্যুৎহীন হাজারো বাড়ি, বন্ধ হিথ্রো বিমানবন্দর কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম, চালও চড়া তনু হ*ত্যার ৯ বছর: এখনও তদন্ত চলছে গাজায় তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির

চা শ্রমিকদের দিনকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৬ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাগানে কাজ নেই, ছেলেমেয়ে নিয়ে ৭ জনের সংসার। তাই বৃদ্ধ বয়সেও এখানে (মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে) এসে কাজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি।  কথাগুলো বলছিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট শহরে চা বাগানের শ্রমিক  অঞ্জলী তন্তবায়।

রোজ সকালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বাজারের সতং রোড ও মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের অঞ্জলী তন্তবায়ের মতো শত শত চা শ্রমিক এভাবেই কাজের জন্য শহরে এসে ভিড় করেন। 

 অঞ্জলীর মতো উপজেলার কয়েক হাজার শ্রমিক বাগানের বাইরে মাটিকাটা, ধানকাটা, ধান রোপণসহ নানা ধরনের কাজ করেন। মজুরি পান ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে চুনারুঘাট বাজারের মাদ্রাসা মার্কেটের সামনে শ্রমিকদের হাট বসে। এখান থেকে শহর ও গ্রামের লোকজন এসে তাদের প্রয়োজনীয় শ্রমিক নিয়ে যান। সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় এ শ্রমিক হাট। যারা কাজ পান তারা কাজে যান, আর যারা কাজ পান না তারা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফিরে যান নিজ বাসায়। তবে কাজ না পেলেও তাদের গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া। এছাড়া ওই দিন কাজ না পেলে তাদের অনেকের কষ্টে দিন কাটে। একাধিক সদস্যের সংসার নিয়ে কারো কারো একবেলা খেয়েও দিন কাটে।  


হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ২৩টি চা বাগানে চা শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার। অথচ নারী-পুরুষ মিলে কাজের উপযোগী শ্রমিক রয়েছেন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার। বাকিরা সবাই বাগানের বাইরে মাটিকাটাসহ নানা ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। 

চা বাগানের ১৭৮ টাকা মজুরিতে দিন চলে না। তাই অনেকেই বাগানের ছুটির দিনে বাগানের বাইরে কাজ করেন। বাগানের বাইরে শ্রমিকের কাজ করে মজুরি বেশি পাওয়া যায়। 

চা বাগানের শ্রমিকরা দিন আনে দিন খান, তাদের কোনো সঞ্চয় নেই, প্রত্যেক পরিবারেই ৪ থেকে ৮ জনের সদস্য রয়েছেন। অথচ কাজ আছে মাত্র ১ জন কিংবা দুজনের। বাকিরা বাগানের বাইরে দিনমজুরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।বাগানে কাজ করে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেন না। তাই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও কিছুটা ভালো থাকার জন্য তারা মাটিকাটাসহ নানা কঠিন কাজ করেন। 

চা গাছ যেমন ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেওয়া হয় না, তেমনি চা শ্রমিকের জীবনটাও ছেঁটে দেওয়া ওই চা গাছের মতোই! লেবার লাইনের ২২২ বর্গফুটের একটা কুড়েঘরে বন্দি জীবন তাদের। মধ্যযুগের ভূমিদাসের মতোই চা মালিকের বাগানের সঙ্গে বাঁধা তাদের নিয়তি।

দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় চা শ্রমিকেরা সব দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নিরক্ষরতা। দেশে বাজেটের একটা বিরাট অংশ যেখানে ব্যয় হচ্ছে শিক্ষা খাতে, সেখানে চা বাগানের শিক্ষার হার অতি নগণ্য। দেশের চা শ্রমিকরা বহুকাল ধরে নিরক্ষরতা, নিপীড়ন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বঞ্চনার মধ্যদিয়ে জীবনযাপন করে আসছেন। দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে।

মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী চা বাগান

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল। এই দিনে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোটিতে দেশ স্বাধীন করার জন্য ঐতিহাসিক এক শপথ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকেই সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর সি আর দত্ত, কর্নেল এমএ রব, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, মৌলানা আসাদ আলী, লেফটেন্যান্ট সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

তেলিয়াপাড়া চা বাগান ব্যবস্থাপকের বাংলোটিকে ৩ নম্বর সেক্টরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে এমএজি ওসমানী নিজের পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের শপথ করেন। সেই বাংলোর সামনে একটি বুলেট স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি রচনার সাক্ষাী সেই চা বাগানের শ্রমিকরা আজও মানবেতন জীবন যাপন করছেন। 

দেশে বর্তমানে চা জনগোষ্ঠী ৭ লক্ষাধিক। তার মধ্যে দেশের নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগানে নিবন্ধিত শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৯৪ হাজার। আর অনিয়মিত শ্রমিক রয়েছেন ৪০ হাজার। ২০০৭ সালে প্রথম শ্রেণির বাগানগুলোতে নিবন্ধিত শ্রমিকের মজুরি ছিল দৈনিক ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, ২০০৯ সালে ৪৮ টাকা, ২০১৩ সালে ৬৯ টাকা, ২০১৫ সালে ৮৫ টাকা, ২০১৬ সালে ১০২ টাকা, ২০১৮ সালে ১২০ টাকা এবং বর্তমানে ১৭৮ টাকা।

বেতন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি মাত্র ১৭৮ টাকা। তা দিয়ে একটা সংসার চলে না। তাই শ্রমিকরা বাগানের বাইরে নানা  ধরনের কাজ করেন।