ঢাকা, বুধবার ১৮, জুন ২০২৫ ২১:৪৭:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া উপকূলে চলছে ভারী বর্ষণ, জনজীবন স্থবির বাসের ধাক্কায় মা-ছেলেসহ সিএনজির তিন যাত্রী নিহত ৬০ কিমি বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বাড়লো

ছোটদের গল্প: ‘আ শ্র য়’: সোমা দেব

সোমা দেব | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৭ পিএম, ৪ জুন ২০২৫ বুধবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাইরে তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। বাতাসের ঝাপটায় গাছগুলো পাগলের মতো উদ্দাম নৃত্য করছে। মনে হচ্ছে একটা পাগলিনী যেনো চুল এলিয়ে সমানে নেচে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি মাঠঘাট ভিজে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে অনুর খুব ভালো লাগে। মনে হয়, সারাক্ষণ জানালার পাশে বসে শুধু বৃষ্টি দেখবে। সামনের বাসার কলাগাছের নুয়ে পড়া ডগায় একটা ঘুঘু বসে আছে। ভিজে একেবারে চুপসে গেছে। মনে হয়, এটা পথ হারানো ঘুঘু। বৃষ্টির তোড়ে পাখিটা বাড়ির রাস্তা ভুলে গেছে। 
অনুদের বাড়ির সামনের রাস্তা জলে ডুবে গেছে। প্রায় এক হাঁটু জল জমেছে। এত জল ভেঙে আজ অনুর মা বাড়ি ফিরবে কী করে! মা যে ঠিক সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে ফেরেন। বৈশাখ মাসে সাধারণত এত বৃষ্টি হয় না। একথা দাদী অনুকে বলেছেন। আজ যেনো শ্রাবণের ঢল নেমেছে। মায়ের জন্য ওর খুব চিন্তা হচ্ছে। ঠিক এসময় দাদী এসে অনুর পাশে বসলেন।
তিনি বললেন, দেখেছিস অনু, কত বৃষ্টি হচ্ছে! তোর মায়েরও তো বাড়িতে ফেরার সময় হয়ে এলো।
অনু চিন্তিত মুখে দাদীর দিকে তাকালো। বাসায় প্রায় পুরোটা সময় ও দাদীর সাথেই থাকে। দাদী ওর বন্ধু। প্রতিদিন সকালে মা অনুকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যান। ও স্কুলে ঢুকতে ঢুকতে মায়ের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন মনে হয়, এই পৃথিবীতে অনু আর মা কত একা! বাবা ওদের একা করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তখন অনুর কতই বা বয়স! দেড় বছর। বাবার কথা অনুর কিছুই মনে নেই। ও বাবার কয়েকটা ছ্িব দেখেছে। ওর প্রথম জন্মদিনে বাবা-মায়ের সাথে কয়েকটা ছবি তোলা আছে। একটা ছবি ওদের শোবার ঘরে বাঁধিয়ে রেখেছেন মা। বাবার কথা মনে না থাকলেও অনু বাবাকে খুব মিস করে। স্কুল ছুটির পর যখন ওর অনেক বন্ধুকে তাদের বাবারা নিতে আসেন তখন অনুর খুব মন খারাপ লাগে। 
মা যখন ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফেরেন, কাজকর্ম সেরে নিজের ঘরে একা চুপচাপ বসে থাকেন তখন মনে হয়, বাবা থাকলে নিশ্চয়ই এখন বাবা-মা একসাথে চা খেতেন, গল্প করতেন। বাবা নিশ্চয় ওকে অনেক আদর করতেন। ঈদে অনুকে নিয়ে মার্কেটে যেতেন, অনেক ড্রেস কিনে দিতেন! এই তো কদিন আগেই পহেলা বৈশাখ গেলো, সবাই কত আনন্দ করলো। বাবা থাকলে ওরাও বৈশাখি মেলায় যেতো, কত মজা হতো। আজ বাবা থাকলে নিশ্চয়ই বাবার সাথে বসে অনু বৃষ্টি দেখতো। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একটা চাকরি নিয়েছেন। যা আয় করেন তা দিয়ে তিনজনের চলে যায়। 
অনু যখন এসব ভাবছে তখন দাদী এসে বললেন, অনু জানিস রান্নার গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। তোর মাকে কল দিচ্ছি অথচ ফোন বন্ধ বলছে। কী করি বলতো! এত বৃষ্টি! 
অনু বললো, আহা! গ্যাস না হলে তো রান্নাই হবে না! আমরা রাতে কী খাবো! 
ঠিক এসময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে ও দেখলো মা পুরো কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরছেন। অনু দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওর মা লিপিকা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। কিছুক্ষ পর ফিরে এসে বললেন, এই দেখ অনু, কী এনেছি তোর জন্য! 
মা অনুর জন্য ওর প্রিয় আমসত্ত্ব এনেছেন। অনু তো আমসত্ত্ব পেয়ে মহাখুশি। 
দাদী বললেন, লিপিকা, বাসায় তো রান্নার গ্যাস নেই। রাতের রান্না কীভাবে হবে? তোমাকে কতবার ফোন দিলাম, তোমার তো ফোন বন্ধ। 
অনুর মা বললেন, ওহো মা! আমার তো ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আমি এখুনি গ্যাস সিলিন্ডার এনে দিচ্ছি। 
অনু বললো, মা, আমিও যাবো তোমার সাথে। 
বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। বাইরে এসে ওরা দেখে বাড়ির বাইরের বারান্দায় অনুরই বয়সী একটা মেয়ে কাকভেজা হয়ে বসে আছে। ঠান্ডায় সে থরথর করে কাঁপছে। একটা বাচ্চা মেয়েকে ও রকম অবস্থায় দেখে দুজনেরই খুব মায়া হলো। মা কাছে গিয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোত্থেকে এসেছো তুমি? কোথায় থাকো? 
মেয়েটি বললো, আমি একটা বাসায় কাজ করতাম। তারা আমাকে আর কাজে রাখবে না। আমার বাড়ি তো নেই। রাত হয়ে গেছে, কোথায় যাবো। এমন বৃষ্টি! তাই এখানে বসে আছি। আমাকে তাড়িয়ে দিয়েন না!’ 
অনুর মা বললেন, তোমার নাম কী? বাড়ি কোথায়? বাবা মা আছে?’
মেয়েটি বললো, আমার নাম লতিফা। এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। মা মরে গেছে অনেক আগেই। বাবা আরেকটা বিয়ে করে কোথায় থাকে জানি না। আগে এক ফুফুর সাথে বস্তিতে থাকতাম। সে আমাকে এক বাড়িতে কাজে দিয়ে কোথায় চলে গেছে জানি না। আমি কোথায় যাবো তাও জানি না।
-ঠিক আছে তুমি এখানেই বসো বলে লিপিকা অনুকে নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে চলে গেলেন। অনু ভাবলো, বাবা নেই বলে কত কষ্ট পায় ও। অথচ লতিফার এই বয়সে কোনো আশ্রয় নেই, ঠিকানা নেই। কত অনিরাপদ ওর জীবন! অনুর তো অন্তত হাত ধরে রাখার জন্য মা আছেন, দাদী আছেন! একথা ভাবতেই অনু মায়ের হাতটা শক্ত করে ধরলো। হয়তো মাও কিছু বুঝতে পেরে অনুর হাতটা আঁকড়ে ধরলেন। 
ওরা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখে লতিফা বারান্দার এক কোণায় গুঁটিশুটি মেরে বসে আছে। মা আর কিছু ভাবলেন না। লতিফাকে ঘরে নিয়ে এলেন, অনুর একটা শুকনো কাপড় পরতে দিলেন। লতিফাকে বললেন, তোমার কোথাও যেতে হবে না। আমাদের সাথে থাকো। অনুর সাথে থাকবে, দাদীর কাজে সাহায্য করবে। তুমি চাইলে পড়াশোনাও করতে পারো। অনুই তোমাকে পড়াতে পারবে।’ 
অনু মায়ের এই মহানুভবতায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো। মায়ের এই মহানুবভতায় লতিফার চোখ ভিজে উঠলো। হয়তো এতটুকু আশ্রয় ওর জন্য অনেক কিছু। লতিফা অনুর মায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগলো। অনু জানে এই কান্না খুশির, এই কান্না একটা আশ্রয় ফিরে পাওয়ার। 
মা রাতে খিচুড়ি আর ডিম রান্না করলেন। মায়ের হাতের রান্না সবসময় মজার হয়। আজ চারজনে মিলে খেতে বসে অনুর কাছে সেই রান্না আরও বেশি স্বাদের হয়ে উঠলো।