নাটোরের উত্তরা গণভবন প্রাচীন স্থাপত্যকলার অপরুপ নিদর্শন
নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি
নাটোরের জেলার উত্তরা গণভবন প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অপরুপ নিদর্শন। প্রায় ৩শ’ বছরের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের সৌন্দর্য মন্ডিত এ ভবন আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে উত্তরা গণভবন একনামে পরিচিত।
ভবনটির সামনে আসলে সবাইকেই থমকে যেতে হয়। দৃষ্টিনন্দন সুদৃশ্য বিশাল সিংহ দুয়ার। এর উপরে অতিকায় এক ঘড়ি-যা ঘন্টাধ্বনী বাজিয়ে আজও সঠিক সময় জানান দিয়ে যাচ্ছে ।
চারিদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ও পরিখার বেষ্টনী, দেশী-বিদেশী দুস্প্রাপ্য বৃক্ষরাজি, ইটালিয়ান গার্ডেনে শ্বেতপাথরের ভাস্কর্য শোভিত দৃষ্টিনন্দন বিশাল এ রাজপ্রাসাদ।
দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাটোরের রাজা রামজীবন ও রাণীভবানীর বিশ্বস্ত চৌকষ দেওয়ান দয়ারাম রায়। ১৭০৬ সালে রামজীবনের কাছ থেকে দয়ারাম রায় নাটোরের দিঘাপতিয়া এলাকায় জমিদারী লাভ করেন। এরপর দুইশ’ বছরের অধিক সময় ধরে বগুড়া, পাবনা, জামালপুর ও যশোর জেলার অংশবিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে শাসন করেছেন এ রাজবংশ। জেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে রাজা দয়ারামরায় দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। প্রাচীরের বাইরের ফটকের সম্মুখে রয়েছে ২.৮৯ একর জমি। রাজা প্রমদানাথ রায়ের সময় ১৮৯৭ সালে ১০ থেকে ১২ জুন তিনদিন ব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশন নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে শুরু হয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে যোগ দেন। কিন্তু অধিবেশনের শেষ দিন ১২ জুন ১৮ মিনিট ব্যাপী প্রলয়ঙ্করী এক ভূমিকম্পে রাজ প্রাসাদ ধ্বংসস্থ পে পরিণত হয়। পরে ১৮৯৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছরের চেষ্টায় বিদেশী প্রকৌশলী চিত্রকর্ম শিল্পীদের সহায়তায় ৪১.৫০ একর জমির উপর এ রাজ বংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় মোঘল ও প্রাশ্চাত্য রীতি অনুসারে নান্দনিক কারুকার্যময় রাজ প্রাসাদটি পুনঃনির্মাণ করেন। দৃষ্টি নন্দন প্রবেশদ্বার ছাড়াও এখানে রয়েছে মোট ১২টি ভবন। এগুলোর মধ্যে প্রধান রাজপ্রাসাদ, কুমার প্যালেস, প্রধান কাচারী ভবন, রাণীমহল, রান্নাঘর, মটরগ্যারেজ, ড্রাইভার কোয়ার্টার, ট্রেজারি বিল্ডিং ও সেন্ট্রি বক্স উল্লেখযোগ্য।
রাজ প্রাসাদের দক্ষিণে রয়েছে ফুলের বাগান। এ বাগানটি ইটালিয়ান গার্ডেন নামে পরিচিত। দেশী-বিদেশী নানাজাতের ফুলে পরিপূর্ণ এ বাগান। বাগানের ভিতর শ্বেতপাথরের আকর্ষণীয় ৪টি নারীর ভাস্কর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। রয়েছে একটি ইটালিয়ান ঐতিহ্যের ফোয়ারা এবং লৌহ ও কাঠ দ্বারা নির্মিত বেঞ্চ আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, একটি ডিম্বাকার সাইজের মার্বেল পাথরের নির্মিত আসনসহ মঞ্চ। সমগ্র বাগানে অসংখ্য ফুলের সমাহার। আছে পারিজাত, নাগালিঙ্গম, কর্পুর, এগপ্লান্ট, হৈমন্তীর মত দুষ্প্রাপ্য সব বৃক্ষরাজি আর কৃত্রিম ঝর্ণা।
দিঘাপতিয়া রাজ বাড়ির মূলপ্রাসাদটি একতলা। এর মাঝে রয়েছে প্রশস্ত একটি হল রুম। বেশ উঁচু হলরুমের শীর্ষে রয়েছে বিশাল এক গম্বুজ। এ গম্বুজের নিচ দিয়ে হলরুমে সূর্যের আলো প্রবেশ করে। হলরুমের মাঝে রাজার আমলে তৈরি বেশ কিছু সোফা রয়েছে। এছাড়াও হলরুমে একটি ব্যতিক্রমী কারুকার্য খচিত সোফা রয়েছে যাতে একসঙ্গে চারজন চারমুখী হয়ে বসা যায়। হলরুমের আসবাবপত্র এখনো রয়েছে। উপরে রয়েছে সেই আমলের ঝাঁড়বাতি। হলরুমের পাশে রয়েছে আরেকটি বড় ঘর। পাশের রান্নঘর হতে এ ঘরে সরাসরি আসা যায়। নিরাপত্তার জন্য রান্নাঘরের করিডোরের দু’পাশে রাজ আমলের তার দিয়ে এখনো ঘেরা রয়েছে। এর পাশে একটি ঘরে রয়েছে সিংহাসন। এর পাশের ঘরটি রাজার শয়ন ঘর। এ ঘরে এখনো রাজার খাট শোভা পাচ্ছে ।
কুমার প্যালেসের পেছনের ভবন রাজার কোষাগার আর অস্ত্রাগার। দক্ষিণে রাণীমহল। আজ আর সেটা নেই। রাণীমহলের সামনে একটি ফোয়ারা এখনো সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে। রাজার একটি চিড়িয়াখানাও ছিল। নাটোরের জেলা প্রশাসন আবার নতুন করে সেই চিড়িয়াখানা চালু করেছে, রাজার ট্রেজারী ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে সংগ্রহশালা। রাজা-রানীর ব্যবহৃত নানা সামগ্রী সংগ্রহ করে দর্শনার্থীদের দেখার জন্যে এ সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে। মূলভবন রাজ প্রাসাদের সামনে রয়েছে রাজা প্রসন্ননাথ রায়ের আবক্ষমূর্তি। এর দু’পাশে রয়েছে দুটি কামান। রাজ প্রাসাদের সামনে পূর্বে রয়েছে রাজার দোলমঞ্চ। পাশেই রয়েছে কুমার প্যালেস। এর সামনে বসানো চারচাকা বিশিষ্ট একটি কালো কামান আজো শোভা পাচ্ছে । রাজ প্রাসাদের প্রবেশ পথে সিঁড়ির দু’পাশে ছিল দুটি কালো কৃষ্ণ মূর্তি-যা এখন শোভাবর্ধন করছে সংগ্রহশালার। সংগ্রহশালার প্রবেশ করিডরে রয়েছে ধাতববর্ম। এটা পরেই নাকি রাজা যুদ্ধে যেতেন। এ কারনে পিতলের তৈরি এ বর্মটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। রাজপ্রাসাদের উত্তর পাশে ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতে অস্টাদশ শতকের রাজবাড়ি আলোতে ঝলমল করতো। পুরো রাজ প্রাসাদে ছিল রাজার বিভিন্ন চিত্র কর্ম, ছবি আর বিদেশী ঘড়ি-আজ সে সব আর নেই। প্রাসাদের শ্বেতপাথরের মেঝে মোড়ানো থাকতো পার্সিয়ান গালিচায়। রাজা প্রমদানাথ রায়ের প্রচন্ড রকম ঘড়ি প্রীতি ছিল। আর এ জন্য তিনি দেশ বিদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে ঘড়ি তৈরি করে আনতেন। এসব ঘড়ি রাজপ্রাসাদ ছাড়াও বিভিন্ন ভবনে স্থাপন করেছিলেন। এমন একটি ঘড়ি ছিল যাতে ১৫ মিনিট পরপর জলতরঙ্গ বাজতো। এছাড়া রাজবাড়ির মূলফটকে রয়েছে একটি ঘড়ি। এর দু’পাশে দুটি ডায়াল। ঘড়িটি এখনো সঠিকভাবেই সময় দিয়ে যাচ্ছে । ঘড়িটি ইটালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা হয়েছিল। আগে এর ঘন্টাধ্বনী অনেক দূর থেকে শোনা যেত এখন এ ঘন্টাধ্বনী শোনা যায় প্রায় এক মাইল দূর থেকে। শোনা যায় স্বাধীনতা যুদ্ধেও সময় দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প হওয়ায় কিছু ঘড়িসহ অন্যান্য মূলবান সম্পদ লুট হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এটাকে গভর্নর হাউজ থেকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে দর্শনাথীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে এর বেশিরভাগ অংশ। তবে রাজপ্রাসাদ আর ইটালিয়ান গার্ডেনে প্রবেশ করতে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। মূলফটক দিয়ে প্রবেশের পর রাজ প্রাসাদে যেতে হাতের বাম দিকে রাণীঘাট ছাড়িয়ে চোখে পড়ে চিড়িয়াখানা। সেখানে রয়েছে অসংখ্য হরিণ, বানর, ময়ুর, টিয়া পাখি। রাজবাড়ীর প্রবেশ পথের ডান পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে শত বছরের শতাধিক আম গাছ-যেখানে স্থাপন করা হয়েছে পাখি অভয়াশ্রম।
সংরক্ষিত রাজ প্রাসাদ ও ইটালিয়ান গার্ডেন ছাড়া উত্তরা গণভবন প্রতিদিন দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মূলফটকে প্রবেশ মূল্য সিনিয়র সিটিজেন ১০ টাকা, শিক্ষার্থী এবং দলগত জনপ্রতি ২০ টাকা, সাধারণ ৩০ টাকা, বিদেশী নাগরিক ৬০০ টাকা আর সংগ্রহশালায় প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। সারা বছর জুড়ে গণভবন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার জন। তবে শীতে পিকনিকের মৌসুমে এবং দুই ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা সংখ্যা বেড়ে হয় অনেকগুণ। গত অর্থ বছরে টিকিট বিক্রি এবং গাড়ি পার্কিং খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন হিসাব সহকারী নুর মোহাম্মদ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক এবং উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসমা শাহীন বলেন, লেকের পানি এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনাসহ ঐতিহ্য-স্থাপত্যের উত্তরা গণভবনের সকল সংস্কার ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে মন্ত্রীপরিষদের নির্দেশনায় হওয়া উচিৎ। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি মাষ্টারপ্লান প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ মাষ্টারপ্লানের অধীনে এ ঐতিহ্যকে সুরক্ষা প্রদান করা হবে।
- সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক মাসুমা মারা গেছেন
- ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন? মানুন ৫ পরামর্শ
- হাসপাতালে শাকিরা
- চুল পড়া কমায় এই ৫ খাবার
- ইউএস-বাংলায় চাকরি, বেতন ৩০ হাজার
- ঢাকায় বায়ু আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’
- কোচিংয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রীকে অপহরণ,অতঃপর
- ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৯ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার
- আজ গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
- উত্তরায় দম্পতিকে কোপানোর ভিডিও ভাইরাল, আটক ২
- রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর
- কানাডা বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উল্টে আহত ১৫
- ৭ দফায় কত বাড়ল স্বর্ণের দাম
- বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা
- বিটরুট চাষে কৃষক দম্পতির সাফল্যের সম্ভাবনা
- জুরিবোর্ডে ইলিয়াস কাঞ্চন ও বাঁধন
- ফেসবুকে কত ভিউ হলে কত টাকা আয় হয়?
- নারী ক্রিকেটে জ্যোতির ইতিহাস
- বাংলাদেশকে হারিয়ে এশিয়া কাপ নিয়ে গেল ভারত
- রাজধানীতে বুধবার যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ
- প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে স্মৃতি মান্ধানার কীর্তি
- নগরীর অভিজাত তারকা হোটেলে ক্রিসমাস
- সংসার পাততে সপরিবারে ভারত ছাড়ছেন কোহলি
- চলে গেলেন ভাষা সৈনিক মরিয়ম বেগম
- রুম হিটার ব্যবহারের আগে যা জানা জরুরি
- ১০০ পোশাক কারখানা বন্ধ, বেকার ৫০ হাজার শ্রমিক: বিজিএমইএ
- স্বামীসহ সাবেক এমপি হেনরীর বিরুদ্ধে মামলা
- ঢাকার বাতাস আজও খুবই অস্বাস্থ্যকর
- বলিউড বাদশাহকে নিয়ে এ কেমন মন্তব্য বিদ্যার!
- পেঁয়াজ ও আলুতে স্বস্তি মিললেও বেড়েছে চাল-মুরগির দাম