ঢাকা, শনিবার ২২, মার্চ ২০২৫ ২:১৭:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ছুটির দিনে রাজধানীতে জমজমাট ঈদের কেনাকাটা নারী যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিতে নতুন প্রতিশ্রুতির আহ্বান লন্ডনে বিদ্যুৎহীন হাজারো বাড়ি, বন্ধ হিথ্রো বিমানবন্দর কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম, চালও চড়া তনু হ*ত্যার ৯ বছর: এখনও তদন্ত চলছে গাজায় তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির

পাহাড়ি নারীদের জীবনসংগ্রামের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩২ এএম, ৮ মার্চ ২০২৫ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পাহাড়ের নারীরা আজ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে। জুমে, মাঠে, ঘাটে, অফিস-আদালত—সবক্ষেত্রেই তাদের সরব পদচারণা। বহুবিধ অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত পাহাড়ি নারীরা। তারা যেমন কর্মঠ, তেমনি বিভিন্ন পেশা ও কাজকর্মে যুক্ত। গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজকর্মসহ পারিবারিক আয় থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, জুমচাষ, হস্ত ও ক্ষুদ্রশিল্প, আউটসোর্সিং—অফিস-আদালতে সরব উপস্থিতির মাধ্যমে পারিবারিক অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন।


সকাল হলেই পাহাড়ের নারীরা নেমে পড়েন জুমচাষের কাজে। কেউ জুমচাষে গর্ত করে বীজ বপনে ব্যস্ত, আবার কেউ ফসল কর্তনে ব্যস্ত। কেউ জমিতে ধান রোপণে ব্যস্ত, আবার কেউ মাঠে সবজি উৎপাদনের ব্যস্ত সময় পার করেন।

পাহাড়ের স্থানীয় বাজারগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এসব বাজার এখন স্থানীয় নারীদের দখলে। ভোর হলেই মাথায় হারাং নিয়ে বাজারগুলোতে বসে যায় পাহাড়ের বিভিন্ন রকমের ফলমূল কিংবা শাকসবজি নিয়ে। দিনব্যাপী বিকিকিনি করে বিকেল হলে বাসায় ফেরেন। পরদিন ভোর থেকে আবার জীবনযুদ্ধের একই চিত্র।

রাঙামাটির সবচেয়ে বড় বাজার বনরুপা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বেশিরভাগ বিক্রেতাই পাহাড়ি নারী। বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে জুমে উৎপাদিত নানা সবজি নিয়ে এসেছেন সোনালী চাকমা। তিনি বলেন, "আমরা পাহাড়ি নারীরা এমনিতেই পরিশ্রমী। ঘরের কাজকর্মের পাশাপাশি আমরা জুমেও কাজ করি, আবার জুমের ফসলগুলো বিক্রিও করতে আসি।"

আরেক বিক্রেতা মঙ্গলা চাকমা বলেন, "নারী বলে যে আমরা শুধু ঘরের কাজে সীমাবদ্ধ থাকবো তা নয়। আমাদের পাহাড়িদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। পুরুষদের পাশাপাশি আমরা নারীরাও সংসারে সমান অবদান রাখি।"

শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই নয়, গৃহস্থালির কাজে নিত্যদিনের কাজ এবং পরিবারের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য পাহাড়ি দুর্গম পথ মাড়িয়ে পানি সংগ্রহেও এগিয়ে আসে নারীরা। নিজের সন্তানকে আগলে রেখে সংসার ও অর্থনীতির কাজও সামাল দিয়ে যাচ্ছে পরিশ্রমী এসব নারী।

সদর উপজেলাধীন কুতুকছড়ি ইউনিয়নের নাড়াইছড়ি গ্রামের বাসিন্দা কল্পনা চাকমা। প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে পানি সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, "আমাদের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে খাওয়ার ও নিত্য ব্যবহার্য পানির খুব অভাব। তাই আমাদের প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি পথ বেয়ে খাওয়ার ও ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করতে হয়। এই কাজটি আমাদের গ্রামের নারীরাই করে থাকে।"

শুধু সংসার কিংবা অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়; শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে অফিসের শীর্ষপদেও আসীন হয়েছেন তারা। জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে কেউ কেউ এখন স্কুটির মাধ্যমে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আত্মমর্যাদা অর্জনে পাহাড়ি নারীরা নানা ধরনের সংগ্রাম করে আসছেন। বিশেষ করে তাদের ভূমিকা কমিউনিটি উন্নয়ন, সৃজনশীল কার্যক্রম এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির দিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শহরের শহীদ আব্দুস শুক্কুর মাঠে প্রতিদিন সকালে স্কুটি চালনা প্রশিক্ষণ দেন স্কুটি প্রশিক্ষক জামিয়া সুলতানা নিতু। স্কুটি চালনা প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, গণপরিবহনগুলোতে নারী হেনস্থার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আমি স্কুটি চালানো শুরু করি। তারপর এটি আমার উপার্জনেরও একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আমি এটা করে ভালোই উপার্জন করছি, পাশাপাশি পরিবারকেও সাপোর্ট করতে পারছি।

রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট শ্রীজ্ঞানী চাকমা বলেন, পাহাড়ের নারীরা আগের চেয়ে অনেক অগ্রসর হয়েছে। শিক্ষার দিক থেকে আমরা অনেকটাই এগিয়ে গেছি। পাহাড়ের আনাচে কানাচে থেকে নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই ভালো ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ে নারী হেডম্যান, কার্বারী রয়েছে, পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে ঋতুপর্ণা, রুপনারা পাহাড়ের হয়ে ভূমিকা রাখছে।

সিএইচটি উইমেন্স অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য সুপ্তি দেওয়ান বলেন, বর্তমানের পাহাড়ি নারীরা অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্পে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। বুনন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এছাড়া আরও নানা সামাজিক কাজে তাদের অংশগ্রহণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর বলে আমি মনে করি।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সৃজনশীল কার্যক্রম এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাহাড়ের নারীরা দীপ্ত পায়ে এগিয়ে চলুক, এমনটা প্রত্যাশা সবার।