ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৮:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

মাহমুদা চৌধুরী, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ : মোহন হাসান 

মোহন হাসান  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৩০ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার

বছর ঘুরে পয়লা ডিসেম্বর হাজির। আমাদের প্রিয় মাহমুদা আপার শুভ জম্মদিন। পুরো নাম মাহমুদা চৌধুরী। বাবা অ্যাডভোকেট দেওয়ান আব্দুল আজিজ আহমেদ। মা রহিমা খাতুন চৌধুরী। জীবনসঙ্গী অ্যাডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী। একমাত্র কন্যা আমেরিকাপ্রবাসী হৈমন্তী শাহনাজ চৌধুরী (সোমা)। একমাত্র পুত্র লন্ডনপ্রবাসী শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী ( সূর্য) । উচ্চশিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ। পেশা সাংবাদিকতা। 


মাহমুদা আপার জম্ম বিগত শতকের মাঝামাঝি সময়ে। বয়সে তিনি আমার বড়আপারও বড়। এই কারণে তার সঙ্গে সম্পর্কটাও গড়ে ওঠে বড়বোন-ছোটভাইয়ের। যদিও শুধু আমি নই, আমার মতো অনেক ছোট ভাই-বোনই তার রয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই তিনি প্রিয়। সন্দেহ নেই- এ জনপ্রিয়তার কারণেই তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তিনদফা নির্বাচিত হন যথাক্রমে নির্বাহী সদস্য, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাংবাদিকতা পেশায় গত তিন দশকে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে আশ্চর্যজনকহারে। এক্ষেত্রে আপার রয়েছে বিশেষ অবদান। কাছে থেকেই দেখেছি, তিনি বিশ্ববিদ্যলয় থেকে বের হওয়া তরুণীদের এ পেশায় আসতে উৎসাহিত করেছেন নানাভাবে। ক্ষেত্রবিশেষ তাদের কাউকে কাউকে হাতে-কলমে সাংবাদিকতাও শিখিয়েছেন। এমনকি তার বাড়িটিকেও বলা যায় নারী সাংবাদিকদের অঘোষিত ক্লাব। প্রায় প্রতিদিনই ঘটে সহকর্মীদের আনাগোণা। মাঝে মাঝে রীতিমত মেলাও বসে।


আসলে মাহমুদা আপা শুধু সাংবাদিকতাই করেননি, পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা করেছেন যেমন নতুনদের এ পেশায় আনার, তেমনি নারী সাংবাদিকতার মান উন্নয়নেরও। বর্তমানেও তার সে চেষ্টা থেমে নেই। সুস্থ থাকলেই ছোটেন নানা প্রোগ্রামে। মূলত আপা পেশায় সাংবাদিক হলেও একই সঙ্গে তিনি লেখক, গবেষক, চলচ্চিত্র সমালোচক, নির্মাতা ও সংগঠকও। এককথায় বহুমুখী প্রতিভা। গত বছর বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ প্রকাশ করেছে তার গবেষণা গ্রন্থ ‘জহির রায়হানের চলচ্চিত্র : সমাজ ভাবনা’। ৩০৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি তিনি যুগ্নভাবে প্রণয়ন করেছেন আয়শা আকতার কণার সঙ্গে। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয় তার প্রথম গ্রন্থ ‘নারী অর্ধেক পৃথিবী’। ২২০ পৃষ্ঠার ওই বইটির প্রকাশক বাংলাবাজারের আফসার ব্রাদার্স। তার আরো দু’তিনটি বই প্রকাশের পথে। 


আপার সাংবাদিকতা শুরু ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায়। তখন দেশে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে দশ জন। ১৯৮২ সালে তিনি যোগ দেন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। এরও ছয় বছর পর আপার সঙ্গে পরিচয়। তখন আমি দৈনিক দিনকালের সাব-এডিটর। পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে লেখালেখি শুরু করি সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও পাক্ষিক আনন্দ বিচিত্রায়। দু’জনের সাবজেক্ট কাছাকাছি হওয়ায় একসঙ্গে যেমন বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট করি তেমনি সুযোগ হয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ারও। মাত্র দু’বছর পরই আপাকে আরো কাছে পাই দৈনিক দিনকালে যোগ দেয়ায়। ১৯৯১ সালে তিনি স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন দৈনিক দিনকালে। কূটনৈতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনিই দেশের প্রথম নারী রিপোর্টার।


বিচিত্রায় লেখালেখির সময়ই উপলব্ধি করি, চলচ্চিত্রের ওপর আপার রয়েছে বিশেষ পড়াশোনা ও গবেষণা। আলাপ-আলোচনায় জানতে পারি, তিনি ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির পরিচালিত ঢাকা ফিল্ম ইনষ্টিটিউট থেকে এক বছর মেয়াদি চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক কোর্স করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮০ সালে তিনি চলচ্চিত্রের ওপর ডিপ্লোমা করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এন্ড ফিল্ম ইনষ্টিটিউট থেকে। একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আলমগীর কবির পরিচালিত ‘রূপালী সৈকত’ ছবিতে। এছাড়া ১৯৯৩ সালে নির্মাণ করেন একটি তথ্যচিত্র যার বিষয়-বস্তু ছিল জেন্ডার। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার নারী বিষয়ক কলামের তিনি ছিলেন নিয়মিত লেখক। ১৯৮৯ সালে ‘নারী সংহতি’র সদস্য হিসেবে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ‘জেন্ডার অ্যান্ড ভিডিও ফিল্ম মেকিং’ বিষয়ক মাসব্যাপী কোর্স করেন। ১৯৯৫ সালে যোগ দেন বেইজিং আন্তর্জাতিক চতুর্থ নারী সম্মেলনে। 


আপা বর্তমানে বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিষ্ট ফোরামের সহ-সভাপতি। এর আগে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়ার আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়ার নির্বাহী সদস্য এবং বাংলা একাডেমির সদস্য। সাংবাদিকতা ও নারী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছেন।


আসলে আপা নানা বিষয়ে এতো কাজ করেছেন যা স্বল্প পরিসরে বলা অসম্ভব। মহান আল্লাহ তাকে আরো অনেক বছর এভাবে কাজ করে যাওয়ার সুযোগ দিক- এটাই প্রার্থনা। শুভ জম্মদিন উপলক্ষে আপাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


৥ মোহন হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক