ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩১:১৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

আমাদের বন্ধু অতিথি পাখিরা আজ বিপন্ন

অণিমা মিত্র | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫৪ পিএম, ৬ মার্চ ২০২১ শনিবার

আমাদের বন্ধু অতিথি পাখিরা আজ বিপন্ন

আমাদের বন্ধু অতিথি পাখিরা আজ বিপন্ন

প্রতি বছর শীতকাল এলেই আমাদের দেশের জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রঙ বেরঙের নাম না জানা পাখিতে। এসব পাখিকে অতিথিপরায়ন বাঙালী আদর করে নাম দিয়েছে অতিথি পাখি।
আমরা যাকে অতিথি পাখি বলে চিনি, সেই পাখিকে ইংরেজিতে বলে মাইগ্রেটরি বার্ড। শুদ্ধ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় পরিযায়ী পাখি। অর্থাৎ যেসব পাখি বছরের নিদিষ্ট একটা সময় নিজের দেশ বা নিজের এলাকা ছেড়ে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কোন দেশে বা এলাকায় চলে যায় এবং কিছুদিন পর আবার নিজের এলাকায় ফিরে আসে তাদেরকেই সাধারত পরিযায়ি পাখি বলে।
পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নিদিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পরিযায়ি পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রাতির পাখি আমাদের দেশে প্রতি বছর বেড়াতে আসে। এদেরকেই আমরা বলি অতিথি পাখি।
কিছু কিছু পাখি প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরুত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।
বাংলাদেশের অতিথি পাখিরা অতোটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই  বেশির ভাগ অতিথি পাখি আসে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি নভেম্বরের দিকে আমাদের দেশে আসে। কয়েকমাস কাটিয়ে মার্চ-এপ্রিলের দিকে আবার ফিরে যায় নিজের দেশে।
এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরণ, নিশাচর হেরণ, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, টিকিহাঁস, পাতিকুট, খরচা চকাচকি, মরচে রঙভুতিহাঁস, কালামাথা, গাঙচিল, সরালি, কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও নানা রং আর কন্ঠ বৈচিত্রের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধুসর ও গোলাপী রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙ্গামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।

অতিথি পাখি কেন আসে
আগেই বলেছি অতিথি পাখি ছুটি কাটাতে নয় বরং বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে যেতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো শীত। প্রচন্ড শীত থেকে বাঁচতেই ওরা দূর দেশে পাড়ি জমায়।
তাছাড়া এ সময়টাতে শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেরও দেখা যায় প্রচন্ড অভাব। কারণ শীতপ্রধান এলাকায় এ সময় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শুন্যেরও বেশ নিচে। তাই শীত এলেই উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চলের পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে কম ঠান্ডা অঞ্চলের দিকে।

অতিথি পাখিরা কিভাবে পথ চিনে নেয়
অতিথি বা পরিযায়ী পাখিদের কাছে কম্পাস, মানচিত্র বা সেক্সট্যান্ট যন্ত্র কোনটাই নেই। তাহলে তারা কিভাবে পথ চেনে!
অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানী, গবেষক বা পাখি বিশারদরা এই বিষয় নিয়ে রহস্যের মধ্যে আছেন। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের নাবিক যেমন কম্পাস ব্যবহার করে পথ চলে এই পাখিদের দেহেও সেরকম কিছু একটা জন্মগতভাবেই আছে। যা তাদের পথ চলার সময় দিক চিনতে সাহায্য করে। তাছাড়া তারা সূর্য ও তারার অবস্থানের উপরই নির্ভর করে। পরিস্কার মেঘমুক্ত রাতে যখন আকাশে নক্ষত্র দেখা যায় তখন পরিযায়ী পাখিরা সহযেই পথ চলতে পারে বলে প্রমান পাওয়া গেছে।

ইতিহাসের পাতা থেকে
ইতিহাসের পাতায় অতিথি পাখিদের নিয়ে সবচেয়ে প্রাচীন যে তথ্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে ৩ হাজার বছর আগের। এসব তথ্যে দেখা যায়, গ্রীসের হেসিয়ড, বিখ্যাত কবি হোমার, ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস, দার্শনিক অ্যারিস্টোটলসহ আরও অনেকেই পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতেন। এসব নিয়ে তারা অনেক তথ্যসমৃদ্ধ গদ্যই লিখেছেন।

বিশ্ব অতিথি পাখি দিবস
পরিযায়ি পাখিরা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বেই প্রতি বছর ভ্রমণ করছে। প্রতি বছরই তার শীতপ্রধান অঞ্চলের তীবব্র শীত থেকে বাঁচতে উড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মাইল দুরের কোন উষ্ণ অঞ্চলের দিকে। সাদা চোখে কিছু না বোঝা গেলেও পাখিদের এই ভ্রমণের একটা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে। এই গুরুত্ব অনুধাবন করে অতিথি পাখিদের জন্য পাখি প্রেমীরা ‘বিশ্ব পরিযায়ি পাখি দিবস’ পালন করছেন।
২০০৬ থেকে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। সে বছর ৯ এপ্রিল কেনিয়ার লাইকিপিয়াতে এই দিবসটি জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে ৪৬টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১২ থেকে ১৩ মে বিশ্বের নানা দেশে দিবসটি পালন করা হয়।

আমাদের বন্ধু অতিথি পাখি
অতিথি পাখি আমাদের বন্ধু। অতিথি পাখি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নানাভাবে রক্ষা করে। অনেক দুরদেশ থেকে এসে অতিথি পাখি খাদ্য হিসেবে অনেক পোকামাকড় ও ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ খেয়ে পরিবেশ ও জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে। আবার অতিথি পাখির মল জলাশয়ের মাছেদের প্রিয় খাবার। এই খাবার খেয়ে অনেক মাছ বেঁচে থাকে।
আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা নতুন করে আর কী বলব। অতিথি পাখি যখন ঝাঁক বেধে তাদের বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে সেটা অবশ্যই পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যের একটি। এই দৃশ্য দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। এসব জায়গার মধ্যে ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যান, মিরপুর সিরামিক লেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জলাশয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পুটিয়ার পচামাড়িয়া, এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর মৌলভীবাজারের  হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, দিনাজপুরের রামসাগর, বরিশালের দুর্গাসাগর উল্লেখযোগ্য।

আমাদের দেশের অতিথি পাখিরা
পরিযায়ি পাখিরা আমাদের অতিথি। হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ থেকে একটু আশ্রয়ের জন্য চলে আসে আমাদের দেশে। কিন্তু কিছু নিষ্ঠুর লোক এসব পাখিকে শিকার করছে অর্থের লোভে বা নিছক শিকারের আনন্দে। তবে শুধু সৌখিন শিকারীরাই নয় অনেক পেশাদার শিকারীরা অতিথি পাখিদের যত্রতত্র শিকার করে টাকার লোভে।
এসব শিকারীদের ঠেকাতে সরকারি পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাকালুকি হাওরের ৫টি বিল দহবিল, হাল্লা-জল্লা, হারামডিঙা, নাগোয়া-লবিরই ও চাতলা বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার।