ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৫:০৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

ওয়েবপেজ ডিজাইনার তহুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৫৭ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

তহুরা খাতুন; নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া গ্রামের মেয়ে। নিজ এলাকায় তহুরা এখন অনেকের কাছেই উদাহরণ। তবে আজকের অবস্থানের পেছনের গল্পটা সহজ ছিল না। অভাবের সংসারে বড় হওয়া তহুরার।

দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবার আলাল শেখ সংসার চালাতে লড়াই করছেন সারাবেলা। মা কল্পনা বেগম গৃহিণী।

আর্থিক অসচ্ছলতা থাকায় তহুরার পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছিল বার বার। কিন্তু তিনি দমে যাননি। পরিবারের অভাব-অনটন আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। চোখে স্বপ্ন ছিলো কিছু করার। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভিন্ন ধারার কিছু করতে হবে।

সেই স্বপ্ন থেকেই এইচএসসি পাস করার পর বাবাকে জানান তিনি কম্পিউটার শিখতে চান। কিন্তু বাবা রাজি হননি। একে তো মফস্বলের মেয়ে, তার ওপর অভাবের সংসারে টানাটানি লেগেই আছে। কম্পিউটার শিখে কী হবে তহুরার বাবা জানালেন। কিন্তু তহুরা দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই গ্রামের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিজের জমানো টাকা দিয়ে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল শিখতে শুরু করেন। তারপর সফলার সাথে শেষ করেন সে কোর্স।

তহুরা বলেন, ‘২০০৭ সালে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটারে হাতেখড়ি আমার। পরে ২০১০ সালে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে আরেকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণের পর একই বছর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে চাকরিও পাই। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করি।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে উপজেলা টেকনিশিয়ান হিসেবে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইনফো সরকার ফেজ-টু প্রজেক্টে যোগদান করেন তহুরা। ২০১৫ সালে তথ্যসেবা কেন্দ্রের সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে যারা ওয়েব ডিজাইনের ওপর ভালো করেছে, তাদের ২০ জনকে নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়। দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় তাকে।

তিনি বলেন, এরপর আমি ও আমার দল সিদ্ধান্ত নেই উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ওয়েবপেজ তৈরির কাজ করবো। এ ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশন আমাদের সহযোগিতা করে। আমাদের অনুরোধে ডিসি ও ইউএনও স্যাররা কাজটিতে সহযোগিতা করেন।

তিনি জানান, তারা ১৫০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের প্রিন্সিপালসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি স্কুলে ওয়েবপেজ তৈরির কাজটি সম্পন্ন করতে স্কুলপ্রধানদের উদ্বুদ্ধ করেন। আমাদের টিমকে ওয়েবপেজ তৈরির কাজটির দায়িত্ব দিতে পরামর্শ দেন।

তহুরা খাতুন বলেন, আমি ও আমার টিম এখন উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ওয়েবপেজ তৈরির কাজ করছি। এ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর থেকে আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমি পরিবারকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি নিজ খরচে বিএ পাস করেছি। বর্তমানে আমি মাস্টার্স পড়ছি।’

ওয়েবপেজ ডিজাইনার তহুরা বলেন, ‘আমার মা-বাবা এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেন। প্রথমে কম্পিউটার শিখতে দিতে রাজি ছিলেন না তিনি। অথচ আমার আজকের এই অবস্থানের পেছনে বাবার অনুপ্রেরণাই ছিল সবচেয়ে বেশি।’