ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫৩:২৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

করোনাকাল: রাজধানীর গৃহকর্মীদের জীবন সংগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার

করোনাকাল: রাজধানীর গৃহকর্মীদের জীবন সংগ্রাম

করোনাকাল: রাজধানীর গৃহকর্মীদের জীবন সংগ্রাম

প্রাত্যহিক জীবনে যে মানুষগুলোর সাহায্য ছাড়া নগরীর মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের গৃহ পরিচর্যা ও সংসার জীবন অচল হয়ে পড়ে তারা হলেন গৃহকর্মী। করোনা সংক্রমণের শুরুতেই তাদের অধিকাংশ জীবিকা হারান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চলছে তাদের জীবন ও জীবিকার কঠোর সংগ্রাম।

কুড়িগ্রাম থেকে নিশ্চিত জীবিকার খোঁজে শেফালী বেগম, ২৫, প্রায় তিন বছর আগে পা রাখেন রাজধানীর বুকে। তিনি ষষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে থাকেন। স্বামী ও বড় ছেলে কারখানায় কাজ করে। শেফালী চারটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর প্রতিটি বাসার গৃহকর্ত্রীরাও কর্মজীবী নারী। করোনার পুরো সময়টাতে শেফালীর স্বামী ও ছেলের কাজ বন্ধ ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বন্ধ ছিল তাদের রোজগার। শেফালী নিজেও কাজে যাননি। তার কাজের জায়গা থেকেই যেতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ বেতন বন্ধ করেননি। তিন থেকে চার মাস কর্মবিরতির পর, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে এখন তিনি নিয়ম মেনে কাজে যাচ্ছেন। মাস্ক ব্যবহার করছেন। গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন। বেতনের বাইরেও অতিরিক্ত হিসেবে রিকশা ভাড়া তার কাজের জায়গা থেকেই পাচ্ছেন। কিন্তু শেফালীর মতো সব গৃহকর্মীর সঙ্গে কিন্তু এমনটি ঘটেনি।

শাহীদা বেগম, ২৮, শেফালীরই এক ভাইয়ের স্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তার কোন কাজ ছিল না। শাহীদার রিকশাচালক স্বামীও এই পরিস্থিতিতে পরিবারকে কোন সাহায্য করতে পারেনি। পাশাপাশি, শাহীদা ও তার স্বামী জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রাজধানীর স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় সরকারের দেয়া কোন সাহায্য সহযোগিতাও তার পরিবার পাননি। করোনাপূর্ব সময়ে গ্রাম থেকে এনে রাখা চাল দিয়ে অত্যন্ত কষ্ট করে তিনি তার জীবন নির্বাহ করেন। পাশাপাশি, পরিবারের নিয়মিত খরচ যোগানোর জন্য সুদে নগদ অর্থ ধার করতে হয়। এখনো শাহীদা জানেন না এই অর্থ কবে ও কিভাবে পরিশোধ করতে পারবেন। কারণ, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুরনো সব কাজ তিনি ফিরে পাননি।

রিপা খাতুন, ৩৫, তার পাঁচটি বাসায় কাজ ছিল। এরমধ্যে একটি বাসা থেকে নিয়মিত পারিশ্রমিক পেয়েছেন। বাকি বাসাগুলো থেকে তার কাজ চলে যায়। রিপা বলেন, তার কাজের জায়গাগুলোতে কেউ কেউ নিজেরাই কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং গ্রামে চলে যান। এই কারণে তার কাজও চলে যায়। 

এর কারণ জানতে চাইলে রিপা বলেন, তার কর্মক্ষেত্রের গৃহকর্তারা মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাদের নিজেদেরই ব্যবসা পুরো সময়টাতে বন্ধ ছিল। পাশাপাশি, করোনা পরিস্থিতিতে নিজেরাই ঘরের কাজে অভ্যন্ত হয়ে পড়েছেন। তাই, নতুন করে গৃহ সহায়তাকারী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী নন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ড. ওমর বিন আজিজ জানান, সরকারি উদ্যোগে তারা রাজধানীতে প্রায় ৫ হাজার দুস্থ মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। যার মধ্যে গৃহকর্মীরাও রয়েছেন। এছাড়াও, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ২ হাজার মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস- ১৬ জুন, ২০২০ উপলক্ষে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা, অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কাজ করা ‘সুনীতি’ প্রকল্প একটি অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে অক্সফামের সহযোগিতায় নারী মৈত্রীর একটি জরিপ চিত্র তুলে ধরা হয়। জরিপটির বিষয়বস্ত ছিল, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরের গৃহশ্রমিকদের অবস্থা।’

গত বছর এপ্রিলে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের অন্যতম বাস্তবায়নকারী সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)-এর উপ-পরিচালক মো. ইউসুফ আল মামুন জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকার মোট ৮৩ জন গৃহশ্রমিকের উপর গত এপ্রিল মাসে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, গৃহশ্রমিকদের শতকরা ৮০ ভাগের শিশু সন্তান রয়েছে, ৩০ ভাগের বাসায় বয়স্ক সদস্য রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ এখনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন। তবে, এদের শতকরা ৯৯ ভাগই কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতন, জরুরি যোগাযোগ রক্ষায় সচেতন শতকরা ৬৫ ভাগ, পূর্ববর্তী কাজে ফিরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে শতকরা ৫০ ভাগের, গৃহে নির্যাতনের শিকার শতকরা ৫৫ ভাগ। 

অপরদিকে কাজে যাচ্ছেন শতকরা ৫ ভাগ, বেতন পাননি শতকরা ২৫ ভাগ, শতকরা ৩৫ ভাগের ক্ষেত্রে চাকুরিদাতা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন, এদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে দুই-তিনদিন চলার মতো ত্রাণ পেয়েছেন শতকরা ৩৪ ভাগ।

গৃহিকর্ত্রী সেলিনা তাহের বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করা সাহায্যকারী মেয়েটি গত মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কাজে আসেনি। আমরাই নিষেধ করেছি। কিন্তু সবসময় ফোনে যোগাযোগ ছিল এবং বিকাশের মাধ্যমে তার বেতন দিয়েছি। এখন যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে তখন সে নিয়ম মেনে মাস্ক পরে কাজে আসছে। সে যেন গণপরিবহন এড়িয়ে চলে তাই তাকে আলাদা যাতায়াত খরচও দেয়া হচ্ছে।’

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যেমন তাদের রোজকার জীবনে গৃহশ্রমিকের গুরুত্ব কতটা সেটি নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তেমনি গৃহশ্রমিকেরাও নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। ভালো কাজ পাওয়া এবং সে কাজ ধরে রাখার গুরুত্বও তাঁরা বুঝতে শুরু করেছেন।
সূত্র: বাসস