ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৫:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র এক চতুর্থাংশ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫৯ পিএম, ৬ মার্চ ২০২৩ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

‘সমাজ পরিবর্তন না হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত এমন বিষয়গুলোতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কঠিন হবে। সর্বপ্রথম কাঠামোগত সমস্যা দূর করতে হবে। নারী কি করবে? পুরুষ কি করবে তা আমরা পাঠ্যপুস্তকেই নির্ধারণ করে দিচ্ছি। এটিই বড় সমস্যা। বিদ্যালয়ে নারীদের পড়ানো হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি। পাঠ্যপুস্তকে বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে রাখা হয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক স্টেরিওটাইপিং ও শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব আমার মতে মূল বাধা। আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রমের ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশের ষোল বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য বিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের পাঠ্যক্রম লিঙ্গ সংবেদনশীল তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লিঙ্গ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছি।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘উদ্ভাবনের নারী: জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি ও সমাধানে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সোমবার (৬ মার্চ) দুপুর ১টায় এ মন্তব্য করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। 

ইভেন্টে ইনোভেশন ফেয়ার, গেমস, অ্যাওয়ার্ড প্রদানসহ ছিলো প্যানেল ডিসকাশন। বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা ইভেন্টে যোগ দেন এবং লিঙ্গ সমতার জন্য উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির গুরুত্ব, এবং এ ক্ষেত্রে নারীদের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘নারীরা শত বছর আগে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল এবং ২০২৩ সালেও সমতার অভিপ্রায়ে তা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে ডিজিটাল ইক্যুইটির উপর জোর দেওয়া হয়েছে - 'ডিজিটাল: লিঙ্গ সমতার জন্য উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি' এবং স্টেমে -এ মহিলাদের অংশগ্রহণের প্রচার।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. নোভা আহমেদ বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জনসংখ্যার দিক থেকে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় একই। এমনকি বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়ন সমাপ্তির হার উভয় লিঙ্গের মধ্যেই সমান। তবে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র এক চতুর্থাংশ নারী। মূলত নারীদের নিরাপত্তার অভাব এবং দক্ষতা সম্পর্কে আত্ম-সন্দেহ নারীদের স্টেম থেকে দূরে রাখছে।’

মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর সালমা সুলতানার মতে, ‘যখন এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণের কথা আসে, আমি প্রায়ই দেখতে পাই পারিবারিক দায়িত্বের কারণে নারীরা তাদের চাকরি থেকে সরে আসছে। এমন একটি ধারণাও রয়েছে যে শুধুমাত্র পুরুষরাই স্টেমে ভাল। আমাদের এই উপলব্ধি দূর করতে হবে এবং আমাদের বিদ্যালয়ে প্রমাণ-ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে ছাত্ররা ছোটবেলা থেকেই স্টেম-এর প্রতি আগ্রহী হয়। তরুণ মহিলাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাদের আরও মহিলা রোল মডেল, বিশেষ করে লেখকদের প্রয়োজন।’

আইসিডিডিআর,বি এর ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর, ডক্টর ফিরদৌসী কাদরী বলেন, ‘স্টেম-এ নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবারের কাছ থেকে উৎসাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন কিন্তু নারীদের পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়, তাই তারা এই পেশায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। আমরা যদি এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে চাই তবে পারিবারিক সমর্থন এবং উৎসাহ গুরুত্বপূর্ণ।’

নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সহকারী কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা বলেন, ‘একদিকে আমরা স্টেমে নারীদের সংখ্যা কম দেখছি, অন্যদিকে সাইবার ক্রাইম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে অনলাইন সহিংসতা রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নারীদের অংশগ্রহণও নগণ্য। সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে আমাদের এই পেশায় আরও নারী দরকার। সাইবার স্পেস তখনই একটি সুরক্ষিত স্থান হতে পারে যখন লোকেরা এটিকে নিরাপদে ব্যবহার করতে জানবে।’

অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি এর এক্সিকিউটিভ বোর্ড সদস্য মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, প্যানেলিস্ট হিসেবে যোগ দেন।

এই ইভেন্টে একশনএইড বাংলাদেশ তৃণমূল পর্যায় থেকে চার নারী-মোসাম্মৎ গোলসানারা বেগম (পরিবেশবান্ধব কৃষিতে নারীর ভূমিকা); হোমায়রা আহমেদ জেবা (জলবায়ু সুবিচার ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় নারী নেতৃত্ব); পারভীন ( প্রথাগত পেশা থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন পেশায় নারী) এবং সানজিদা ইসলাম ছোঁয়াকে (যৌন হয়রানী, নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী) তাঁদের অনবদ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ‘নাসরীন স্মৃতি পদক-২০২৩’পুরস্কার প্রদান করে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া বলেন, ‘আমি আমার গ্রামের মহিলাদের উপর বাল্যবিবাহের বিরূপ প্রভাব খুব কাছ থেকে দেখেছি। বাল্যবিবাহের প্রতিবাদে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং আমি এর জন্য কাজ চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই ধরনের স্বীকৃতি আমাদের অনুপ্রাণিত করে যা সঠিক তার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে।’

ইভেন্টে উদ্ভাবন মেলারও আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে ১০টি বিভিন্ন সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, শেরেবাংলা এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি, স্বাধীন, সাথী, ক্লেমেন্টাইন ডেটা, চলপড়ি, ব্রিজ ফাউন্ডেশন, কোকো ফার্টিলাইজার, আউরি) স্টলের মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপন করেছেন।