ঢাকা, বুধবার ১০, ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:০৫:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া বিজয় দিবসে পতাকা হাতে বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের পাঁচ বছরের জন্য ইসির নিবন্ধন পেল ৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থা জাপানে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত ‘দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী, এখন ভোট স্থগিত চাওয়ার সময় নয়’

কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:১৪ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে জমজমাট দেশের সবচেয়ে বড় দেশীয় কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেকেরচর বাবুরহাট। ঈদ সামনে রেখে বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশা আলো দেখছেন পাইকারি বিক্রেতারা। তবে এ বছর সুতার দাম বেশি হওয়ায় বেড়েছে কাপড়ের দাম।

কেনাকাটায় তা কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এ ঈদে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তারা। তবে চায়না এবং ভারত থেকে সুতার আমদানি বন্ধ থাকায় কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় কেনাকাটায় কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে শঙ্কা কাটছেই না ব্যবসায়ীদের।

বাবুর হাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য গাড়িতে বোঝাই করা হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিসসহ দেশীয় সবধরনের কাপড়ের গাইট (আঁটি)। ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বাজারটি। পছন্দ অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় সংগ্রহ করতে দোকানে দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত পাইকারি ক্রেতারা। বাজারের প্রতিটি গলিতে কাপড় আনা নেওয়ায় ব্যস্ত ক্রেতা বিক্রেতারা। অনেকে এসেছেন পাইকারি দামে যাকাতের জন্য কাপড় কিনতে। পাশাপাশি ভিড় করছেন খুচরা ক্রেতারাও।

বাবুরহাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা  জানিয়েছেন, ১৯৩৭ সালে কালু বাবু নামে এক জমিদার কাপড়ের বাজারের জন্য এক একর জমি দান করে। বাজারটি বর্তমানে ১৫ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। বাজারটিতে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার দোকান রয়েছে। এসব দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, থান কাপড়, বিছানা চাদর, শার্টপিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড় ও গামছাসহ দেশীয় প্রায় সবধরণের কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারের মত এবারও কাপড়ের রং ও ডিজাইনে আনা হয়েছে বৈচিত্র্যতা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ক্রেতারা আসতে শুরু করায় রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দেশের কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একাধিক শো-রুম রয়েছে এখানে। এসব বস্ত্র কোম্পানির বেশিরভাগ কারখানাও নরসিংদী জেলা কেন্দ্রিক। ফলে এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের গুণগত মান ভালো হওয়ার পাশাপাশি দামেও সাশ্রয়ী।

দেশের অন্যান্য স্থানে প্রস্তুতকৃত যাবতীয় কাপড়ও পাওয়া যায় এখানে। চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়া যাওয়ায় এই হাটকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, জামালপুর, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তের পাইকারী ক্রেতার ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বাজারটি। ঈদকে ঘিরে আগে থেকেই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সবধরণের কাপড় বেচা কেনায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।

বাজারে পাইকারি কাপড় বিক্রেতা সুজন সাহা জানিয়েছেন, বাবুরহাটে কখনও ক্রেতার সংকট হয় না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের খুব বেশি ভাবনারও কিছু নেই। তারপরও ঈদ বলে কথা। ঈদে বাড়তি ব্যস্ততা, বাড়তি বিক্রি আর বাড়তি লাভ না হলে ব্যবসায়ীদের মন ভালো থাকে না। রোজার শুরুতে বিক্রি ভালোই ছিল। তবে ধীরে ধীরে বিক্রি কমে গেছে।

একই কথা বললেন আলমগীর মিয়া বলেন, বাবুরহাট মানে থান কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে রঙের গন্ধ। বেশি ক্রেতা, বেশি বিক্রি। তবে এবার লাভে কিছুটা ভাটার টান। কারণ সুতার দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে সুতা কিনে তাঁতিরা প্রত্যাশিত লাভের মুখ দেখতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও।

বাজারের পাইকারি ও খুচরা লুঙ্গি বিক্রেতা আমিনুর হক বলেন, মূলত রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঈদের কাপড় কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা আসছেন। এবছর বেচাকেনা সন্তোষজনক।

গজ কাপড় বিক্রেতা বাবুল আহাম্মেদ বলেন, শাড়ি, গজ কাপড়ের বেচাকেনা আগেভাগেই হয়। পাশাপাশি শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রিপিসের বেচাকেনা চলে ঈদের আগের সপ্তাহ পর্যন্ত।

নেত্রকোনার মহনগঞ্জ থেকে আসা খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন বর্মন বলেন, খুচরা বাজারে এখনও পুরোদমে কেনাকাটা শুরু হয়নি। দোকানের জন্য বাবুরহাট থেকে পাইকারি দামে ঈদের কাপড় কেনার জন্য এসেছি। গত বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম অনেক বেশি। প্রতিটি শাড়ি কাপড় গত বছর থেকে ৭০ থেকে ১০০টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিশোরগঞ্জ থেকে আসা খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, বর্তমানে সুতার দাম বাড়ার কারণে আমরা এখন কাপড় থেকে লাভ করতে পারিনা। আগে একটা কাপড় থেকে লাভ করতাম ১০০ টাকা এখন লাভ হয় ২০ টাকা। দাম দিয়ে কিনে নিয়ে দাম দিয়ে বেচতে পারিনা। তাই পেটের দায়ে কম লাভে কাপড় বিক্রি করি।

ঢাকার উত্তরা থেকে আসা শরীফ আহমেদ বলেন, যাকাতের কাপড় কেনার জন্য এখানে এসেছি। ঢাকার তুলনায় এখানে দামটা কম হওয়ায় এখানে কেনাকাটার জন্য আসি।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, করোনা মহামারিতে দু'বছর লাভের মুখ দেখেনি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর সুতার দাম বাড়ার কারণে কাপড়ের দামও বেড়েছে। যদি হাটে ক্রেতার সমাগম বেশি হয় তাহলে এ ঈদে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে ব্যবসায়ীরা।

আমরা আশা করছি, এবছর ঈদকে ঘিরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হওয়ার কথা থাকলেও তা অর্ধেকে নেমে আসবে হবে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ীক নেতা। এছাড়া সুতার বাজারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত এই বাজারে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা চারদিন চলে এই হাটের বেচাকেনা।