ঢাকা, রবিবার ১৪, ডিসেম্বর ২০২৫ ১:২৮:৪৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা বিশ্বে প্রতি ২০ নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না পলাতক ব্যক্তিরা ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান হাদির পরিবারের পাশে ডা. জুবাইদা রহমান

খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসিড, নিয়ম-নীতির বালাই নেই

আপডেট: ০৩:৫৭ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৩ রবিবার

acidআইরীন নিয়াজী মান্না, উইমেননিউজ২৪.কম ঢাকা : দেশে হঠাৎ করে আবারও বেড়ে গেছে এসিড সন্ত্রাস। গত প্রায় তিন মাসে ২৪ জন নারীর ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছে এসিড। যে কঠিন জিনিসটি মূহূর্তেই নষ্ট করে দিচ্ছে একজন স্বাভাবিক মানুষের জীবন তা অবাদে বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। সহযেই চলে আসছে মানুষের হাতে। এসিডের মত কঠিন জিনিসটি দূর্বৃত্তরা এত সহজে পায় কিভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে। সরজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে এই ভয়াবহ পদার্থটিও অন্য বিভিন্ন পণ্যের মতোই সহজলভ্য। সরজমিনে পুরোন ঢাকার রাজার দেউরি, তাঁতি বাজার, আরমানী টোলা, রায় সাহেব বাজার, মালি টোলা, মাহুতটুলী ও গোয়ালনগরসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে কোনো নিয়ম কানুন ছাড়াই খোলা বাজারে প্রকাশ্যে এসিড বিক্রি করা হচ্ছে। জানা গেছে, দেশে শিল্পায়নের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশে এসিড ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় সকল শিল্পেই এসিড ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। চামড়া, ইস্পাত, স্বর্ণ, লোহা, প্লাষ্টিক, কাঁচ, ব্যাটরিসহ নানা ধরণের জিনিস গলানোর জন্য এসিডের প্রয়োজন হয়। চামড়া শিল্পে এসিড ব্যবহার অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এসিড বেশ কয়েক প্রকার হলেও সব এসিড মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। তারা জানান, সাধারণত চার ধরণের এসিড মানব দেহের ক্ষতি করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোক্লরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড ও এসিটিক এসিড। পুরোন ঢাকার রাজার দেউরীর ফারুক কেমিক্যালের মালিক বংশীবদন দেব জানান, ১৯৯২ সাল থেকে তিনি এসিডের ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশ গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, গাজীপুরের সেলভো কেমিক্যাল, চট্টগ্রামের সরকারী টিএসপি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি এসিড কেনেন। তিনি জানান তার প্রতিষ্ঠার থেকে সাধারণত চামড়া ফ্যাক্টরি, টিন নির্মাণ কারখানা, টেক্সটাইল ডাইং ফ্যাক্টরি, স্বর্ণালঙ্কার তৈরির কারখান ও রড তৈরির কারখানায় এসিড সরবরাহ করা হয়। খোলা বা খুচরা এসিড বিক্রি করা হয় না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক  মোহাম্মদউল্লাহ পলাশও একই কথা বলেন। তিনি উইমেননিউজকে বলেন, ক্রেতার কাগজ-পত্র যাচাই না করে এবং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স না দেখে আমাদের সংগঠনের কোনো সদস্য ব্যবসায়ি খুচরা এসিড বিক্রি করে না। তার অভিযোগ গাড়ি ব্যাটারি ও আইপিএস থেকে প্রাপ্ত এসিড দিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। কাজার থেকে কিনে নিয়ে কেউ এ ধরণের অপরাধ করছে না। এটি বন্ধ করার জন্য গণসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। এদিকে তাঁতি বাজারের স্বদেশ জুয়েলার্সের কারিগর শ্যামল কর্মকার জানান, খুচরা এই এসিড তারা রাজার দেউরির ঝরণা কেমিক্যাল, লিটন কেমিক্যাল, নিউ জনতা কেমিক্যাল, ভেনিস কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রি, গোয়ালনগরের মায়া কেমিক্যাল বা তাঁতি বাজারের এস কে কেমিক্যালসহ পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন এসিড ব্যবসায়িদের কাছ থেকে কিনে থাকেন। একই কথা বলেছেন শাখারী বাজারে রাজধানী জুয়েলার্সের কারিগর সোহরাব হোসেন। তারা জানান, স্বর্ণালঙ্কারে ব্যবহারের জন্য মাসে তাদের ১ থেকে ২ পাউন্ড এসিড লাগে। নাম ভেদে ১ পাউন্ড এসিডের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। স্বর্ণ আসল না নকল তা পরীক্ষার জন্য সব সময় এসিড ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া গহণা তৈরির সময় স্বর্ণ গলাতে এবং আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেলে কালো রঙ তুলতে এসিড প্রয়োজন হয়। এসিডের সহজলভ্যতা সম্পর্কে খুচরো বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে স্বর্ণ, লোহা, কাঁচ, ইস্পাত, রাবার ও প্লাষ্টিকজাত দ্রব্য গলাতে এসব কারখানার মালিকরাই বেশি তাদের কাছ থেকে এসিড কেনে। তারা একবারে চার/পাঁচ পাউন্ড করে এসিড নিয়ে যায়। এদের কাছ থেকে অনেক সময় এসিড চলে যায় দূর্বৃত্তদের হাতে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এসিড আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০০২ সালে দেশে ‘এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২’ করা হলেও এর কোনো কার্যকারিতা নেই। বিক্রির সময় ক্রেতার নাম ও ঠিকানা যাচাইয়ের যে আইনি নিয়ম-কানুন আছে তাও বড় বড় ব্যবসায়ি এবং পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে খুচরো বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীরা এই আইনের কোনো ধার ধারে না। এমন কি এদের অনেকেই জানে না যে এবিষয়ে কোনো আইন আছে। কখনো কোনো ঝামেলায় পড়লে দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে তা সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক  মোহাম্মদউল্লাহ পলাশ বলেন, এসিডের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ব্যবসায়িসহ সমাজের সকল সচেতন মানুষের। এ বিষয়ে করনিয় সম্পর্কে সরকারের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় বসেছি। এ সন্ত্রাস বাড়ার মূল কারণে কখনোই কোনো অপরাধীর দ্রুত বিচারে শাস্তি হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানের এসিড আইন দুটিরও নানা রকম দূর্বলতা রয়েছে। লাইসেন্স করতে হলে বিক্রেতা, ব্যবহারকারী বা পরিবহনকারীকে কম পক্ষে সাত রকমের কাগজ পত্র ও লাইসেন্স দেখাতে হয়। একজন স্বর্ণকার যার মাসে প্রয়োজন মাত্র ৪/৫ পাউন্ড এসিড সে নিশ্চয় ৩০ থেকে  ৫০ হাজার টাকা ব্যায় করে লাইসেন্স করতে আগ্রহী হবে না। তিনি অভিযোগ করে জানান, লাইসেন্স নিতে গিয়েও তাদের সরকারি কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের দ্বারা নানা রকম জটিলতার শিকার হতে হয়। এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসের ট্রেড এন্ড কমার্স শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসিড ব্যবহারকারী, বিক্রেতা ও পরিবহন-এই তিন ধরণের ফরম তাদের কাছে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্ধারিত এই ফরমে এসিড বিক্রির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রথমত যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠার আবেদন করবে সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করেন। তারপর পুলিশ জেলা, বিশেষ শাখা ও বিশেষ পুলিশ সুপার, নগর বিশেষ শাখায় সংশিষ্ট আবেদনকারী ২০০২ সালের এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে কোনো মামলায় দন্ডভোগ করছে কিনা সে ব্যাপারে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এরপর পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট উভয়ের প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিসের ট্রেড এন্ড কমার্স শাখার পক্ষ থেকে আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। জানা গেছে ব্যবহারকারীর লাইসেন্স ফি ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিক্রয় লাইসেন্স ফি ৫ হাজার টাকা। পরিবহন লাইসেন্সের ফি ১০০ টাকা। এছাড়া এসিড ব্যবহারকারী কোন ধরনের এসিড ব্যবহার করবে তা আবেদনে উল্লেখ করতে হবে এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ১০ ধরনের এসিড বিক্রির লাইসেন্স পাওয়া যাবে। আবেদন পত্রে একথাও উল্লেখ থাকবে, ব্যবহারকারীর লাইসেন্স না দেখে বিক্রেতা এসিড বিক্রি করতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে সহজলভ্যতার কারণে দেশের গ্রামাঞ্চলের দিকে এসিড ব্যবহারের বেড়ে গেছে। গ্রামের তাঁতি, ক্ষুদ্র সোনার ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনে এসিড ব্যবহার করছেন। এদের কাছ থেকে সহজেই এই মারাতœক পদার্থটি চলে যাচ্ছে দূর্বৃত্তের হাতে। অনেক সময় এলাকার বখাটে-মাস্তানরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে এসিড নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে দুর্বৃত্তরা অতি সহজেই এসিড সংগ্রহ করতে পারে বলেই এর ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এসিড সরবরাহ ও বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর আইন, শাস্তির বিধান এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা না গেলে এবং এবিষয়ে মানুষকে সচেতন না করা গেলে আগামীতে দেশে এসিড সহিংসতা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) উপদেষ্টা মনিরা রহমান বলেন, এসিড সহিংসতার ঘটনা কমলেও এসিডের সহজলভ্যতা রোধ করতে হবে। এ জন্য বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি যে সব এলাকায় এসিড পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেখানে ওয়াচ ডগের মতো কাজ করতে হবে। এজন্য জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রন কাউন্সিল এবং জেলা এসিড নিয়ন্ত্রণ কমিটিকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, অপরাধীকে আইন অনুযায়ী শাস্তিতো দিতেই হবে সেই সঙ্গে তাকে এই অপকর্মে যে সহায়তা করেছে তাকেও তদন্ত সাপেক্ষ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলে এসব অপরাধীদের মনে ভয় বাড়বে। ১১ আক্টোবর, ২০১৩