ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৫:৪৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেন রিতু আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে হিটস্ট্রোকে একদিনে ১৭ মৃত্যুর রেকর্ড ঢাকাসহ ৫ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ আজ, প্রাথমিক খোলা বিপজ্জনক দাবদাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত

চলনবিলে ‘মধু’র হাঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। দেশের উত্তর জনপদের এক বিরল প্রাকৃতিক সম্পদ এটি, যা অবস্থিত রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। চলনের বুকজুড়ে রবি মৌসুমে চাষ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা সরষে। সেই সরষে ফুল থেকে আহরিত হচ্ছে অনন্য সম্পদ মধু। চলনবিল যেন ‘মধু’র হাঁড়িতে পরিণত হয়েছে।

দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি একসময় বছরের নয় মাস ডুবে থাকত। রূপ ধারণ করত সমুদ্রের। পলি জমে জমে চলন এখন মানুষের হাতে পাকড়াও। চলন তার বিশাল জলরাশির ঐতিহ্য হারিয়েছে। চলনবিলের তলা উন্মোচিত হয়েছে। আর চলনের বুকজুড়ে রবি মৌসুমে চাষ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা সরষে।
এ বছরও প্রায় ২০ লাখ কেজি মধু উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন মধু সংগ্রহকারীরা। প্রতিকেজি মধু প্রায় ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ হিসেবে এর বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। চলনবিলে প্রায় এক হাজার মৌচাষি মধু সংগ্রহে এসেছেন। আর এসব মৌচাষির সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন আরো তিন-চার হাজার জন।


কৃষি বিভাগ বলছে, চলনবিলে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে পরাগায়ন ভালো হওয়ায় সরষের ফলনও বাড়ছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, মৌচাষিদের সমিতির মাধ্যমে মধু বিক্রির বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে তারা আরো ভালো দাম পাবেন।


প্রতিবছরই অগ্রহায়ণ-পৌষ-মাঘ মাসজুড়ে চলনবিলের মাঠগুলো সরষে ফুলে ফুলে ভরে যায়। মনে হয় যেন বিশাল হলুদ চাদর বা হলুদের সমুদ্র। এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারিরা চলনবিলের সরষে ক্ষেতে আসেন মধু সংগ্রহের জন্য। এ বছরও প্রায় এক হাজার খামারি চলনবিল এলাকার সরষেক্ষেত মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন। এলাকার মৌচাকের মৌমাছিসহ খামারিদের পালন করা মৌমাছি সরষে ফুলে-ফুলে  ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। একসময়ের মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিল এখন যেন ‘মধু’র বিলে পরিণত হয়েছে।


মৌচাষি সমিতি সূত্রে জানা যায়, এবারো কুষ্টিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৬৯ জন মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিলের সরিষা ক্ষেতের পাশে ৮৮ হাজার ৪৩২ মৌ-বাক্স বসিয়েছেন। তাদের হিসাবের বাইরেও আরো কিছু মৌবাক্স স্থাপতি হয়েছে বলে জানা গেছে।


চলনবিল কেন্দ্রিক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলের ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন জাতের সরষের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।


পাবনা জেলা ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে চলনবিল অঞ্চল কে ২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মধু পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।’


তিনি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তার মোট ৫০টি মৌবাক্স রয়েছে। সংগৃহীত এসব মধু পাইকারী প্রায় ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার মধুর দাম বেশি। ফলে মধু সংগ্রহকারীরা ভালো দাম পাবেন বলে তিনি জানান।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএ মাসুম বিল্লাহ জানান, কৃষি বিভাগও মধু সংগ্রহের বাক্স প্রদান করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চলতি মৌসুমে চলনবিলের সরষে ফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে এবং বিভিন্ন গাছ-পালায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মৌচাক থেকে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক জানান, সরষে একটি আগাম ফসল। এ উপজেলায় এবার বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় কৃষকেরা সরষে চাষ করেছেন। এরপর একই জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হবে। এ বছর কৃষকদেরকে সরষে চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরষের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল পাড়ের আলাইপুর গ্রামের কৃষক সুশান্ত কুমার শান্ত জানান, এ বছর তিনি ৭৫ বিঘা জমিতে সরষে চাষ করেছেন। প্রতিবিঘায় ৮-৯ মণ সরষের ফলন পাওয়ার আশা করছেন। সরষে চাষে প্রতিবিঘা থেকে ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তার আশা। তিনিও মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন বলে জানান।

চলনবিল পাড়ের দলগাসা গ্রামের আরেক কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, সরষে চাষ খুবই লাভজনক। তিনি এ বছর বারি-১৪ জাতের সরষে চাষ করেছেন। তার ক্ষেতেও বসেছে মৌবাক্স। এতে সরষের ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) পাবনার উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, চলনবিল ঘিরে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সরষে আবাদ হয়ে থাকে। সরষে ক্ষেতে মধুর বাক্স স্থাপনে মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে। এতে সরষে ফলন বেড়ে যায়। চাষি ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হয়ে থাকেন।

তিনি আরো জানান, প্রতিবছর চলনবিল এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা ধেকে মধু চাষিরা আসেন। তাদের উৎপাদিত মধু পাইকাররা কিনে বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করেন। গত বছর খামারিরা মধুর ভালো দাম পেয়েছেন। এবারো ভালো দাম পেয়ে চাষিরা লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।