ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:২২:৫৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে : প্রধান উপদেষ্টা তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা ‘পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার’

ছোট গল্প: মেঘের ইসকুল

রুদ্রাক্ষ রহমান | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২৪ শনিবার

মেঘের ইসকুল

মেঘের ইসকুল

কোনও একটা টিভি চ্যানেলে ’হাটটিমা টিম টিম’ নামে একটা প্রোগ্রাম হচ্ছিলো। এক দিদা অনেক অনেক নাতি-নাতনি নিয়ে গল্প করছিলো। একটা দুষ্টু ছেলে, ভীষণ দুষ্টু আর চটপটে। ছেলেটা মিষ্টিও বটে। তাকে গল্পবলা দিদা জিজ্ঞেস করেন
তোমাকে কে বেশি ভালোবাসেন, মা না বাবা?
ছেলেটা পটপট জবাব দেয়, মা।
তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো?
মাকে।
কেমন?
আকাশটা যতো বড়, ততো ভালোবাসি।
টেলিভিশনে দেখা আর শোনা এই গল্পটা পাঁচ বছরের বাবুইকে বলছিলো তার অমল কাকা। অমল কাকা ছবি আঁকে। বেড়ালের ছবি, গাছের ছবি, পাখির ছবি, নদী আর মেঘের ছবি। বাবুই খুব পছন্দ করে অমল কাকাকে। বাবুইও ছবি আঁকে। শেখায় অমল কাকা। তো সেদিন দুপুরে বাবুইকে আঁকা শেখাতে শেখাতে আর চকলেট দিতে দিতে এই গল্পটা যখন অমল কাকা বলছিলো, বাবুই হঠাৎই বললো
আমিও তোমাকে আকাশের মতো ভালোবাসি, কাকু।
বাহ! সত্যিই?
যাও কাকু, ভলোবাসা কখনো মিথ্যে হয় নাকি?
ঠিক আছে, এবার বলতো-আকাশের মতো ভালোবাসাটা কেমন?
তাতো তো জানি না, তবে আকাশ অনেক বড়। এই, এই আমার দিকে তাকাও কাকু, দেখো, দেখো- অনেক উঁচু, বিশাল। ঠিক ওইরকম ভালোবাসি।
আর কাকে কাকে ভালোবাসিস তুই?
মাকে, বাবাকে, ফাল্গুন, চৈতি, দাদা, দিদা আর সবাইকে। তবে তোমাকে বেশি ভালোবাসি।
আমাকে যদি সত্যি সত্যি বেশি ভালোবাসিস, তাহলে এখনি সুন্দর একটা ছবি এঁকে ফেল।
এইতো আঁকছি। বলেই বাবুই ছবি আঁকায় মন দেয়।
আচ্ছা বাবুই?
হুউ?
তুই কখনো খেজুর গাছ দেখেছিস?
না। 
গাবগাছ?
না।
তালগাছ?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওই যে তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে..
আমার বইয়ে ছবি আছে।
আরে বোকা, বইয়ের তালগাছ না। সত্যি সত্যি তালগাছ।
হ্যাঁ চিনি। মায়ের সঙ্গে যেবার নানুবাড়ি বেড়াতে গেলাম, সেখানে বড় একটা মাঠ আছে। সেই মাঠে দুটো লম্বা লম্বা তালগাছ দেখেছি। আমার বইয়ের ছবির সঙ্গে একদম মিল আছে।
তুই বৃষ্টি দেখেছিস কখনও?
হুউউ। বৃষ্টিতে ভিজেছি একদিন মায়ের সঙ্গে।
বৃষ্টির ছবি আঁকতে পারবি?
পারবো।
বৃষ্টির কী রঙ?
ও মা, কুকু তুমি এতো বোকা! বৃষ্টির আবার রঙ হয় নাকি? আমার পড়ার ম্যাডাম বলে, বৃষ্টিরা মেঘের ভেতর ঘুমিয়ে থাকে। তারপর ওরা যখন খুব দুষ্টুমি করে। ছোটাছুটি করে। ওদের মা তখন খুব বকা দেয়। মায়ের বকা খেয়ে, মন খারাপ করে মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীতে।
সত্যি সত্যি এসব তোর ম্যাডাম বলেছেন, নাকি তুই বানিয়ে বানিয়ে বলছিস?
না কাকু, এটা বানাইনি। বলেই বাবুই সবগুলো দাঁত বের করে হাসে। তারপর হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে
আচ্ছা কাকু, মেঘেদের কি ইশকুল আছে? ওরা কি বই পড়ে?
হ্যাঁ। ওদেরও ইশকুল আছে। তুই আকাশে তাকা। ওই যে সাদা সাদা মেঘ, ওই যে মেঘের পাহাড়, তার ওপারেই মেঘের ইশকুল। ওদের ইশকুলের নাম মেঘমাল্লার। সেখানে মেঘেরা যায় দল বেঁধে পড়তে। ছুটে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়, নাচ করে, গান করে, তালি বাজায়, আর সূর্য থেকে অনেক অনেক রঙ নিয়ে আকাশের ক্যানভাসে ছবি আঁকে। এসবই মেঘেদের পড়া।
ওরা কি ছড়া কাটে আমার মতো-’আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে’?
কাটে। কত্তো কত্তো ছড়া। আকাশ, ছুটে চলা বাতাস, রোদ্দুর, নদী, পাখি, সব-সব মেঘেদের বন্ধু। আর ওরা সব বন্ধুদের নিয়ে ছড়া বানায়, সেই ছড়া পড়ে নেচে নেচে।
তুমি এত্তোসব জানো কী করে?
আমি ভাবি। পড়ি। আর মেঘেদের সঙ্গে কথা বলি।
মেঘেরা কথা বলতে পারে? অবাক হয় বাবুই।
হ্যাঁ। ওরাতো সব সময়ই কথা বলে। ওদের ভাষা আছে। সেই ভাষা বুঝে নিতে পারলে তোর সঙ্গেও কথা বলবে।
মেঘের ভাষা তোমাকে কে শিখিয়েছে? আমাকেও শিখিয়ে দাও না কাকু।
রবীন্দ্রনাথ।
নবীন নাথ?
নবীন নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সে কে?
কবি। কবিতা লেখেন তিনি। তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন মেঘেদের ভাষা।
আমিও শিখবো। তাকে একটু বলে দাও আমাকেও মেঘের ভাষা শেখাতে।
শিখবি। ঠিক আছে। তাহলে তার কবিতা পড়। ওই যে বলছিলি, ’তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে..’। ওই যে বললি-’আমাদের ছোটো নদী..’ এই লেখাগুলো তার। এই যে বইটা, এটা তার লেখা বই। এই দেখ, বইয়ের ভেতর যে ছবি, লম্বা লম্বা দাড়ি, তোর মতো লম্বা-সরু নাক, এটাই হলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বইটা পড়তে পড়তে, আরো বই পড়তে পড়তে, তুই মেঘেদের ভাষা শিখে যাবি।
তারপর, বইটা হাতে নিয়ে বাবুই তাকিয়ে থাকে ভেতরের ছবির মানুষটার দিকে। একটুপরে চোখ তুলে পশ্চিমের বড় খোলা জানালা দিয়ে তাকায় আকাশে। সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে, হেসে বেড়াচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, উড়ে বেড়াচ্ছে, নেচে বেড়াচ্ছে, খেলে বেড়াচ্ছে, অনেক অনেক মেঘ।
মেঘের ইশকুল। এই নামে প্রায় দুই যুগ আছে লেখা হয়েছিলো গল্পটি। ২০০৭ সালে প্রথম বইও এই গল্পের নামে!
 এখন ভাবি, কী হয় এসব করে? তারচে’ বৃষ্টিদিনে সবকিছু গুটিয়ে ঘুমিয়ে পড়া অনেক সুস্বাদু! ওম ঘুম!