ঢাকা, রবিবার ২১, ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৮:২২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো: প্রধান উপদেষ্টা সংসদ নির্বাচনের তফসিল সংশোধন ইসির আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অ্যাপ ব্যবহার করবে ইসি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ঘিরে পরিকল্পিত গুজব ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সামরিক মর্যাদায় দাফন আজ

জানা গেল এরশাদ শিকদারের মেয়ের আত্মহত্যার কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ৭ মার্চ ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে আসক্ত ছিলেন একসময়ের আলোচিত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশা (২২)। তার লাইফ স্টাইল ছিল অন্যরকম। প্লাবন ঘোষ (২৪) নামের এক যুবকের সঙ্গে ছিল তার প্রেমের সম্পর্ক। অভিযোগ উঠেছে, ওই প্রেমিকের সঙ্গে অমিল হওয়ার কারণেই তাকে ভিডিও কলে যুক্ত রেখে আত্মহত্যা করেছেন এশা। মুঠোফেনে ভিডিও কল আসাকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে ঝগড়া, এমনকি মারধরের ঘটনা ঘটে। যে ঘটনা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যায় গড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার আগে ভোর পর্যন্ত বাসায় ছিলেন না এশা। সারারাত ছিলেন প্রেমিক প্লাবন ঘোষের সঙ্গে। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বাসায় ঢোকেন এশা। এর কিছুক্ষণ পরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। গত শুক্রবার (৪ মার্চ) ভোরে রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

এশার মা সানজিদা আক্তার (৪৮) আলোচিত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী। সানজিদার দাবি, আত্মহত্যার সময় এশা প্লাবনকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন।

সানজিদা আক্তার দাবি করেছেন, সারা রাত প্লাবনের সঙ্গে বাইরে কোথাও ছিলেন এশা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে শাহজাদপুরের ওই ভবনের সামনে এশা ও প্লাবনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এশার আত্মহত্যার পর এ ঘটনায় তার প্রেমিক প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করেন সানজিদা আক্তার। গুলশান থানায় করা এ মামলায় প্লাবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে আত্মহত্যায় প্ররোচণার। প্লাবন এখন পলাতক রয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।

যা বললেন ওসি

এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আসামি প্লাবনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনি পলাতক আছেন। তবে, প্লাবনকে আমরা দ্রুতই ধরে ফেলার আশা করছি। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।’

জানা গেছে, এশা টিকটকে সক্রিয় ছিলেন। টিকটকে তার কয়েকটি ভিডিও দেখা যায়।

এশার মা সানজিদার বক্তব্য

সানজিদা আক্তার বলেন, ‘অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরেও যখন এশা বাসায় ফিরছিল না, তখন আমি প্লাবনকে ফোন করি। প্লাবন জানায়, এশা তার সঙ্গে আছে। এরপর রাত ১টার পর আবার ফোন করি। তখন প্লাবন জানায়, এশা পাগলামি করছে। তারা গণ্ডগোল করছে। তখন আমি প্লাবনকে বলি, আমার মেয়ের কিছু হলে সব দোষ তোমার। আমার মনের মধ্যে কেমন যেন করছিল তখন।’

‘এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমি বাসার দারোয়ানকে ফোন করি। জিজ্ঞাসা করি, এশাকে দেখেছে কি না। তখন দায়োয়ান আমাকে বলল, এশা আর প্লাবন বাড়ির সামনে ঝামেলা করছিল। হাতাহাতি করছিল তারা। প্লাবনের সঙ্গে গাড়ি ছিল। ওরা দুজন সারা রাত বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ছিল বোধ হয়। ভোরের পর প্লাবনের সঙ্গে আমার আর কথা হয়নি। আমি চাই, সে তার শাস্তি পাক।’

এশা প্লাবনকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছে কীভাবে বুঝলেন? এমন প্রশ্নে সানজিদা আক্তার বলেন, ‘ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে এশা। আর ফোনটি বালিশ ও দেয়ালে এমনভাবে রাখা, যেখান থেকে এশার ঝুলে থাকা দেখা যাবে। আত্মহত্যা করার পরপরই প্লাবনের কথা শুনেও মনে হলো, সে সব দেখেছে।

মামলার এজহারে যা বলা হয়েছে

গুলশান থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্লাবন শাহজাদপুরের বাসায় যান। তারপর এশা ও তার বান্ধবী খন্দকার সুমি আক্তারকে নিয়ে ঘুরতে যান প্লাবন। সুমির মাধ্যমে জানা যায়, মুঠোফোনে কল আসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, এসবের মধ্যে রাত ১১টার দিকে তাদের সুমি নিজের বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু, সুমি তাদের মধ্য মীমাংসা করতে ব্যর্থ হন। পরে এশা ও প্লাবন সুমির বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর আনুমানিক ভোর পৌনে ৫টার দিকে এশা বাসায় ফিরে তার কক্ষের ছিটকিনি লাগিয়ে দেন। সানজিদা তখন বাসায় ড্রইং রুমে ঘুমান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে সানজিদা বলেছেন, ভোর ৫টা ২৪ মিনিটে প্লাবনের কাকা এশার বান্ধবী সুমিকে ফোন করে বলেন, ‘তুমি দ্রুত এশার বাসায় যাও। এশা প্লাবনের সঙ্গে পাগলামি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।’ এরপর প্লাবন এশার মা সানজিদাকে কল করে জানান, এশা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করছে। পরে দ্রুত সানজিদা দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন, দরজার ছিটকিনি লাগানো। পরে বাসার নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, এশা ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, আত্মহত্যার ঘটনার পর সুমির মাধ্যমে সানজিদা জানতে পারেন, এশা ও প্লাবনের ধর্ম আলাদা হওয়ায় সম্পর্ক আর না এগিয়ে নিতে প্লাবন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জান্নাতুল নওরিন এশাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।