ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৯:৪৫:৩৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

দৃষ্টিজয়ীরা এগুচ্ছে সফলতার প্রত্যয়ে : নাজিয়া জাবীন

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৪:৫১ পিএম, ২৫ মে ২০১৮ শুক্রবার

এমন কিছু মানুষ আমাদের দেশে আছেন যারা চুপচাপ, নিভৃতে মানবকল্যাণে নিজেদের পুরো অস্বিত্তকেই সপে দিচ্ছেন, ব্যক্তিসত্বাকে মানবতার সত্তায় রুপান্তরিত করেছেন। তেমনি এক প্রচারবিমুখ সমাজসেবী নাজিয়া জাবীন। আজ তিনি দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গেছেন দৃষ্টিজয়ীর মর্যাদায়। দীর্ঘ এগার বছরের একক সংগ্রাম আর প্রতিজ্ঞায় এখন তিনি অনেকটাই আনন্দিত দৃষ্টিজয়ীদের জন্য কিছু একটা করতে পেরে। যদিও এ গুণী মনে করেন এখনও হয়নি কিছুই, যেতে হবে আরও অনেকটা পথ।

উইমেননিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে দৃষ্টিজয়ীদের বন্দনা করলেন তার সামগ্রিক কথাকোপনে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালেহীন বাবু। 

 

উইমেননিউজ : আপনি একাধারে লেখক, একজন ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক। গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে সৃজনশীল ব্রেইল পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার ভাবনার সূচনাটা এলো কোথা থেকে।

নাজিয়া জাবীন : আমার লেখা প্রথম ছড়ার বইটা যখন প্রকাশিত হলো সেই অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের ভালই সাড়া পাই। তাদের পাশাপাশি সে সময় অনেক দৃষ্টি জয়ী বন্ধুরা এসেছিলেন। সে সময় আমি ’প্রেরণা’ নামে দৃষ্টিজয়ীদের একটি সংগঠনে কাজ করতাম। একসময় দেখলাম, তারা অনেক চেষ্ট করেও বইটা তো পড়তে পারছে না, কিন্তু চরম আগ্রহে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন। আবার কেউ কেউ বইয়ের গন্ধ নাকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। উপায়ন্তর না দেখে কেউ কেউ দূরে গিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঘষে ঘষে বইয়ের পৃষ্ঠা গুণছে। সম্পূর্ণই এক অন্যরকম হৃদয়বিদারক দৃশ্য। আমি বুঝতে পারি তাদেরও ইচ্ছে জাগে বই পড়ার। এ দৃশ্য আমার ভেতরটাকে ধাক্কা দেয়, উপলব্ধি করি, তাদেরও পড়ার অধিকার আছে। সেই থেকে শুরু।

 

উইমেননিউজ : তারপর এগুলেন কিভাবে? 

নাজিয়া জাবীন : পরে চিন্তা করলাম উন্নত বিশ্বে দৃষ্টিজয়ীরা সাধারণ মানুষের মতই পড়াশোনা করছে। বিদেশে যে কোন বই বের করলে তার অবশ্যই একট সিডি থাকে। আমাদের দেশেও তো পুরনো ব্রেইল পদ্ধতি চালু আছে। তাহলে তো আমাদের দৃষ্টিজয়ী বন্ধুরাও সহজেই সৃজনশীল বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম টঙ্গী ব্রেইল প্রেসে । প্রেসটি ছিল সরকারি। গিয়ে দেখি বেহাল দশা। বন্ধ থাকে বেশিরভাগই। পাশাপাশি এ বিষয়ে আর কোথায় কোথায় কী আছে খোঁজখবর নেয়া শুরু করলাম। এভাবে চলে যায় ২০০৮ সাল। শেষ পর্যন্ত নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০০৯ সালে আমার লেখা একটি ছড়ার বই ’ছড়ার তালে মনটা দোলে’ নামে একটা বই ব্রেইল পদ্ধতিতে বের করি।

 

উইমেননিউজ :  এ বইটি কি ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম বই?

নাজিয়া জাবীন : হ্যাঁ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশিত প্রথম সাহিত্যের বই। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনায় ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসলেও সৃজনশীল পড়াশুনা বা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ব্রেইল পদ্ধতিতে ছাপানো বই না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছিল দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা। আমার এই বই প্রথম এদেশে ব্রেইল পদ্ধতিতে সৃজনশীল বই হিসেবে প্রকাশ হয়।

 

উইমেননিউজ : দৃষ্টিজয়ী বন্ধুর মর্মাথ্য কি?

নাজিয়া জাবীন : দৃষ্টিহীন বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে কেউ নেই আমাদের দেশে। আমরা তাদের এইভাবে বলে থাকি যা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। দৃষ্টিহীন বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নয়, ওরা দৃষ্টিজয়ী।  এমন তো নয় ওরা কিছু করতে পারছে না। বরং ওরা আমাদের থেকে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে। যেখানে সুস্থ থেকে অনেকে আড্ডাবাজি, নেশা করে বিপথে পা বাড়াচ্ছে সেখানে দৃষ্টিজয়ীরা এগুচ্ছে সফলতার প্রত্যয়ে।

 

উইমেননিউজ : ব্রেইল পদ্ধতিতে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশকের ভূমিকায় কোন সময় থেকে অবতীর্ণ হলেন?

নাজিয়া জাবীন : আমার বইটা যেসব দৃষ্টজয়ী বন্ধুদের দিয়েছিলাম, তাদের স্কুলে গিয়ে দেখলাম বইটার ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা উঁচু উঁচু অক্ষরগুলো সমান হয়ে গেছে। তারা বইটি পড়তে পারছে না। তখন ভাবলাম, তাহলে কী করা যায়? এরপরে আমারই লেখা ‘বিনির সাথে পুতুলের বিয়ে’ বইটির ব্রেইল বের করলাম। একসময় মনে হলো তাদের পড়ার চাহিদা এতো বেড়ে গেছে শুধুমাত্র আমার লিখা বই দিয়ে তাদের তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব না। তখন আমি ব্রেইল পদ্ধতিতে সাহিত্যের বই প্রকাশের জন্য বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে গেলাম। সাহিত্য প্রকাশের মফিদুল হক প্রথম এগিয়ে আসলেন। তিনি প্রায় সাতটি বই আমাকে দিলেন। বললেন, তুমি এগুলো ব্রেইল কর। আমি আছি তোমার সঙ্গে। এই সাতটি বই নিয়ে আমরা ২০১১ সালে বই মেলায় আসলাম। ভেবে দেখলাম, মানুষকে জানান দিতে হবে। যখন সাধারণ মানুষ জানবে, দৃষ্টিজয়ীরা পড়তে জানে কিন্তু তাদের বই নেই, তখন আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে সাহিত্য রচনার জন্য দাবি তুলতে পারব। একটা জোরালো আওয়াজ বের হবে। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমী আমাদের সহায়তা করলেন। আমরা একটি স্টল পেলাম। দেখা গেল প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। দৃষ্টিজয়ী বন্ধুদের ভিড় বাড়ছে। তারা গড়গড় করে পড়তে পারে। অথচ তাদের হাতে বই নেই। তখন আমাদের দুটি স্টল দেওয়া হলো। মানুষ এসে ভিড় করে। দৃষ্টিজয়ী বন্ধুদের পড়া শুনে। ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমী আমাদের স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর সহায়তায় প্রথম ব্রেইল বইটি বের করলেন। বইটি হলো সৈয়দ শামসুল হকের ছোটদের জন্য লেখা বঙ্গবন্ধুর বীর গাঁথা। মেলা মঞ্চে এটার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা এতে নতুন করে অনুপ্রাণিত হলাম।

 

উইমেননিউজ : স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা থেকে কি ধরনের ও কতটি বই বের হয়েছে?

নাজিয়া জাবীন : এ পর্যন্ত আমরা ৬১ টি বই বেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছি। আরো প্রচুর বই প্রকাশের কাজ চলছে। আমরা বাণিজ্যিক প্রকাশনা নই। স্বেচ্ছায় দৃষ্টিজয়ী বন্ধুদের মাঝে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ করি।

 

উইমেননিউজ : উল্লেখযোগ্য কার কার বই এ প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে?

নাজিয়া জাবীন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, কবীর চৌধুরী, হালিমা চৌধুরী, মফীদুল হক, সেলিনা হোসেন, লুৎফর রহমান লিটনের ছড়ার বইসহ অনেক নামী লেখকের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে বের হয়েছে।

 

উইমেননিউজ : আমাদের দেশে দৃষ্টিজয়ীদের শিক্ষার কোন আলাদা ব্যবস্থা আছে কি?

নাজিয়া জাবীন : দেশে দৃষ্টিজয়ীদের পড়াশুনার জন্য অনেক ব্রেইল স্কুল আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতি জেলাতেও একটি করে স্কুল আছে। তবে বর্তমানে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী ব্রেইলে পড়াশুনা করতে পারে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এ হিসাব বা পরিসংখ্যান কারও কাছে সুনির্দিষ্টভাবে নেই। তবে আমরা ধরে নিই দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১০% কোন না কোন ভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম। তাদেরই ১০% দৃষ্টিজয়ী। এবং এরাই ব্রেইলে পড়াশুনা শেখার অধিকার রাখে।

 

উইমেননিউজ : প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনায় কী পর্যাপ্ত ব্রেইল বই পাওয়া যায়?

নাজিয়া জাবীন : প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনায় ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ব্রেইল বই পাওয়া যায়। তবে তা পর্যাপ্ত সে কথা বলা যাবে না। একটা বই পাঁচ ছয়জন মিলে ভাগ করে পড়তে হয়। ২০১৩ সালে শিক্ষামন্ত্রী মেলায় এসেছিলেন। তখন আমরা সবাই মিলে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, সাধারণ বই যদি বছরের প্রথম দিন পাওয়া যায়, তাহলে ব্রেইল বই কেন পাওয়া যাবেনা। তিনি প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও পরে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে অল্প অল্প ব্রেইল বই স্কুলে আসছে এবং সেই বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এবার ২০১৮ সালে অনেক দৃষ্টিজয়ী বন্ধুরা বিনামূল্যে পড়ার বই পেয়েছে যা অত্যন্ত আশার কথা।

 

উইমেননিউজ : ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনায় কেমন খরচ পড়ে?

নাজিয়া জাবীন : যথেষ্ট ব্যয়বহুল। কারণ ব্রেইলে এক পৃষ্ঠা মানে সাধারণে তিন পৃষ্ঠা। প্রতিটি পাতা প্রিন্ট করতে সাত থেকে দশ টাকা খরচ হয়। তারপর স্পাইরাল বাইন্ডিং করতে হয়।

 

উইমেননিউজ : দৃষ্টিজয়ীদের পরীক্ষায় কি ব্রেইল পদ্ধতি ছাড়া কি অন্য কোন বিকল্প পদ্ধতি নেই?

নাজিয়া জাবীন : দৃষ্টিজয়ী বন্ধুরা টেপ শোনে, ক্লাসে স্যারের লেকচার শোনে, লেকচার রেকর্ড করে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় তাদের পরীক্ষার সময়। পরীক্ষার হলে তাদের একজন হ্যান্ডরাইটারের দরকার হয়। কিন্তু হ্যান্ডরাইটার পাওয়া যায় না। হ্যান্ডরাইটারের সাহায্য ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া যায় না। কারণ শিক্ষক তো আর ব্রেইল চেক করতে পারে না। এসব নিয়ে দৃষ্টিজয়ী বন্ধুদের প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা কতটুকু মানসম্মত হয় তা ভাবার বিষয়।

 

উইমেননিউজ : এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

নাজিয়া জাবীন : আমার মনে হয়, ব্রেইল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাদের পুরো পরীক্ষাটা যদি মৌখিক পদ্ধতিতে করা যায় তাহলে আরো ভাল হয়।

 

উইমেননিউজ : দৃষ্টিজয়ীদের পড়াশুনার ব্যাপারে অভিভাবকদের উৎসাহ কেমন?

নাজিয়া জাবীন : অভিভাবকদের উৎসাহ দৃষ্টিজয়ীদের থেকে আরও বেশি। প্রচুর। আমার কাছে মুমুর মা এসেছিলেন। মুমু যখন মাত্র তিন বছর বয়সী তখন খেলতে গিয়ে তার মাথায় টেলিভিশন পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় মুমু দৃষ্টিশক্তি হারায়। তাকে নিয়ে তার বাবা মায়ের অনেক উৎসাহ। সে অন্য সবার মতো নিজের পায়ে দাঁড়াবে। সমাজে একজন হবে। শুধু মুমু নয়, মুমুর মতো অনেকেই আছে।

 

উইমেননিউজ : দৃষ্টিজয়ী অভিভাবকদের আলাদাভাবে কাউন্সিলিং করার কোন ব্যবস্থা আছে কি?

নাজিয়া জাবীন : না, বাংলাদেশে এমন অভিভাবকদের জন্য কোন কাউন্সিলিং সেন্টার নেই। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে এমন অভিভাবকদের জন্য একটা কাউন্সিলিংয়ের জায়গা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে অভিভাবকরা হাঁপিয়ে উঠেন, আবার কখনো হতাশা হয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের জন্য কোন তথ্যকেন্দ্র নেই। এটা খুব জরুরি ও দরকার।

 

উইমেননিউজ : দৃষ্টজয়ী বন্ধুরা সাধারণত কী ধরনের বই খোঁজ করে?

নাজিয়া জাবীন : বাচ্চারা সাধারণত ভূতের বই, গোয়েন্দা কাহিনী, সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ছে তারা শুধু এসবে খুশি না। তারা এখন বলে আপু, আপনি যদি ভালোবাসা দিবসে প্রেমের কবিতা পড়তে পারেন, আমরা কেন পারব না? আসলে তারা তাদের বয়স ও সময়োপযোগী বই প্রত্যাশা করে, যে বইটি পড়ে তারা আনন্দ পাবে, মজা পাবে। কিন্তু আমরা বই দিতে পারছি না। বাজারে বই নেই। এবার আমরা দশবছর পূর্তিতে তাই একটা মজার কাজ করলাম। আল্পনা হাবীব ও লবি রহমানের রেসিপি নিয়ে রান্নার বই বের করলাম। কারণ দৃষ্টিজয়ী বন্ধুরা রান্না করতে ভালোবাসে।

 

উইমেননিউজ : কি বলেন, দৃষ্টিজয়ীরা রান্না করতেও পছন্দ করে -

নাজিয়া জাবীন : আমি যেহেতু শিশুতোষ লেখক, শুরু করেছিলাম শিশুতোষ লেখা দিয়ে। তখন আমি ভাবিনি একদিন এতবড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে। এখন সময় আমাকে বলছে শুধু শিশুতোষে আবদ্ধ থাকলে হবে না। পাশাপাশি আমরা তাদের অন্যান্য বিষয় নিয়েও ভাবছি। প্রত্যেক বছর নারীপক্ষ নামে একটি সংগঠন মেয়েদের নানা রকম স্বাস্থ্যতথ্য দিয়ে থাকেন। তাদের এমন অনেক প্রশ্ন আছে যা আমাদের করতে পারেন না। তারা তাদের সেসব বিষয়ে জানার যেন সুযোগ পায় আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।

 

উইমেননিউজ : তাহলে তো দৃষ্টিজয়ী মেয়েরা সে সংগঠনের কাছে মনের সব কথা খুলে বলতে পারছে?

নাজিয়া জাবীন : অবশ্যই আর এতে ওরা যারপরনাই খুশি।

 

উইমেননিউজ : এছাড়াও আপনি দৃষ্টিজয়ীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা আর দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। 

নাজিয়া জাবীন : হ্যাঁ ওরা বিতর্ক ভালোই পারে। ভালোই সাড়া পেয়েছিলাম। ঐ প্রতিযোগিতায় সবাই উপস্থিত ছিল। আর দাবা প্রতিযোগিতাতেও ওরা ভাল করেছিল। ওদের দাবার কোর্টটি বিশেষ ধরনের। ভিতরে গোল গোল গর্ত করা যা ওরা স্পর্শ করে বুঝতে পারে।

 

উইমেননিউজ : ব্রেইল পদ্ধতিতে বই পাঠাতে খরচ হয় কি?

নাজিয়া জাবীন : না ব্রেইল পদ্ধতিতে পোষ্ট করতে কোন টাকা লাগে না। এটি সরকারের একটা ভাল উদ্যোগ।

 

উইমেননিউজ : একসময় ছিল দৃষ্টিজয়ীদের পাশে শুধু আপনি ছিলেন। এখন তো আগের থেকে অনেক সচেতনতা বেড়েছে।

নাজিয়া জাবীন : এখন ওরা আর আগের মত একা না। ওদের জন্য এখন অনেক সংগঠন এগিয়ে আসছে, অনেক বড় বড় মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি সরকারও এ বিষয়ে অনেক সজাগ হয়েছে। তবে আমি এটা গর্ব করে বলতে পারি দৃষ্টিজয়ীদের আলোকিত করার জন্য আমিই প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করি যা আজ ব্যপ্ত পরিসরে প্রকাশ পাচ্ছে। ওদের জন্য কারও কাছে হাত পাতিনি, কারও কাছে কিছুই চাই নি, নিজেই নিজের মত এগিয়ে চলেছি।

 

উইমেননিউজ : কোন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা থাকলে বলতে পারেন।

নাজিয়া জাবীন : প্রত্যাশা আর স্বপ্ন আমার দুটি। প্রথম স্বপ্নটি হলো দেশের সব শিশুর হাতে বই উঠবে, সব দৃষ্টিজয়ীরা বই পাবে, বই পড়তে পারবে। একটি বাচ্চাও পড়াশুনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। দ্বিতীয়টি স্বপ্নটি হলো একটি ব্রেইল লাইব্রেরী বা ব্রেইল কর্ণার করা। সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে চাই। সবশেষে বলতে চাই মানুষ প্রজ্ঞাবান হয় বইয়ের সংস্পর্শে, যেমনটি দৃষ্টিজয়ীরাও সব বাধা ফেলে প্রজ্ঞাবান হয়েছেন ,তাদের প্রতিবন্ধকতাকে দূর করেছেন।

 

উইমেননিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য।

নাজিয়া জাবীন : আপনাকেও ধন্যবাদ, দোয়া করবেন।