ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ০:৪৩:৩৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশে নারী সাংবাদিকরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে : সোমা দেব

মাজেদুল হক তানভীর | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০১:৪০ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার

সোমা দেব

সোমা দেব

সোমা দেব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক, গবেষক ও লেখক। সাংবাদিকতা পেশার সাথেও জড়িত ছিলেন এক সময়। দেশের নারী সাংবাদিকদের প্রেক্ষাপট ও অবস্থা নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। উইমেননিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এবিষয়ে নানা কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাজেদুল হক।

প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে দেশে নারীদের সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলুন।
সোমা দেব : বর্তমানে বিগত দশকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি নারী সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করছে। চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে, চ্যালেঞ্জের সাথে কাজ করছে। রিপোর্টিং, এডিটিং, নিউজরুম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সম্পাদক পদে নারীরা বেশ সাফল‌্যের সাথে কাজ করছে তারা। সাহসিকতার সাথে কাজ করছে নারীরা। কিন্তু সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে নারী পুরুষের সমতার কথা যদি বলা হয় তাহলে সেই হারটা একেবারেই কম।

প্রশ্ন : এর কারণ কি?
সোমা দেব : নারীরা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, সেটা সামাজিক, পারিবারিক এবং অন্যান্য। এখনো নারীদের জন্য সাংবাদিকতাটাকে পেশা হিসেবে খুব সহজে গ্রহণ করা হয় না। এটি একটি অন্যতম কারণ।এছাড়া বৈষম্য, উৎসাহের অভাব, চাকরির অস্থায়িত্ব, সুস্থ্য পরিবেশের অভাব এবং অর্থনৈতিক দিকসহ নানা কারণ রয়েছে। কিছুটা পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখবো ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে খুব নগণ্য সংখ‌্যক নারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৭ এর ২০ জুলাই প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা বেগম এর সম্পাদনা শুরু করেন বেগম সুফিয়া কামাল। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে সুফিয়া কামাল এবং জাহানারা আরজু যুগ্মভাবে সুলতানা পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। কিন্তু সেই সময়ে নারীরা সাংবাদিকতায় আসতেন শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য। বাংলাদেশে ১৯৬০ সাল থেকে নারীরা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করে। আমরা শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন-এর কথা বলতে পারি। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তিনি তার সম্পাদিত ’শিলালিপি’ পত্রিকার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের নারীরা মেধা ও সাহসিকতার সঙ্গে এ পেশায় দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্ত তারপরও আজও পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

প্রশ্ন : মিডিয়া হাউজগুলোতে নারীদের কাজের পরিবেশ নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
সোমা দেব : কাজের পরিবেশ বলতে তো আমরা অনেক কিছুই বুঝি। এখানে পত্রিকার পাতায় নিউজ ট্রিটমেন্ট পাওয়া, অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া থেকে শুরু করে এমনকি টয়লেট সুবিধা পাওয়া, রাতে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি পাওয়াও অন্তর্ভূক্ত। এখানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার চিত্রটা একটু ভিন্ন। আবার মিডিয়া হাউজ ভেদেও কাজের পরিবেশের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তবে সার্বিকভাবে বলতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ বিটসমূহ যেমন, অপরাধ, কূটনৈতিক, পররাষ্ট্র, স্পোর্টস, অর্থনীতি, শিক্ষা এসব বিটে নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এসব বিষয়ে নারীদের যোগ্য করা হয়না কোন অজানা কারণেই। নারী ও শিশুবিষয়ক বিট এবং এধরনের সফট ধরনের বিটগুলোতে নারীরা বেশি কাজ করে। এধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিযোগিতার জায়গাটা অনেক বেশি। পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে বেশ প্রতিযোগিতার জায়গাগুলো পেরিয়েই তাকে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পরিবার ও সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খান। এক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার থাকা খুব জরুরি। যেখানে নারীরা তাদের শিশুদের নিশ্চিন্তে রেখে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

প্রশ্ন : নারী সাংবাদিকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও গুনগতমানের বিষয়টি সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
সোমা দেব : সংখ্যাবৃদ্ধি এবং গুণগত মান এই বিষয়টি এমন একটি বিষয় যে, একটিকে ছাড় দিয়ে অন্যটিকে টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা খুবই কম। শুধুমাত্র সংখ্যা বাড়ানো নয় বা শুধুমাত্র গুণগত মান বাড়ানোই নয়। বর্তমান সময়ে দুইটি বিষয়ের প্রতিই গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে দেশের আটটি পাবলিক এবং বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়টির ওপর পাঠদান করা হচ্ছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাগ্রহণ এবং সাংবাদিকতা বিষয়টির ওপর প্রশিক্ষণ ও ইন্টার্ণিশীপ করার মাধ্যমে একজন নারী তার গুণগত মান বজায় রাখতে পারেন। নারীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করাও জরুরি। সহকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এখানে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। একজন নারী যখন প্রথম সাংবাদিকতা পেশায় আসেন তখন তাকে আন্তরিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা করা দরকার বলে আমি মনে করি। শুধুমাত্র পেশায় ওয়েলকাম জানানোই নয়, সংখ্যাবৃদ্ধিই নয়, তাকে যোগ্য এবং সঠিক সাংবাদিকতায় পরিচালিত করাও জরুরি।

প্রশ্ন : মিডিয়াগুলোতে উপরের পদে নারী নেই। এমন কি সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায়ও নারী নেই। বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখছেন।
সোমা দেব : উপরের পদ বলতে বুঝায় সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদকসহ বিভিন্ন পদ। এটা সত্যি যে বর্তমানে বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকায় বা নিউজ চ্যানেলে উপরের পদে নারীদের দেখা যায়। এর একটা প্রধান কারণ আমাদের সামাজিক বাস্তবতা, ইন হাউজ পলিটিক্স, মানসিকতার দৈন্যতা। অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের এতটা প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে আসতে হয় যে, বড় বড় পদগুলোতে পৌঁছানোর আগেই তারা সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। আবার সেই পদগুলোতে পুরুষের আধিপত্য এতটাই বেশি যে, নারী কোণঠাসা হয়ে থাকে পুরুষের কাছে, তার যোগ্যতা এবং মেধা থাকা সত্ত্বেও। যেখানে নারীরা এখনো তার নিরাপত্তা পাচ্ছেনা, রাস্তায় পুলিশের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে, রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে, পারিবারিক, সামাজিক প্রতিটা ক্ষেত্রে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে পদের জন্য লড়াইটা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন বলে আমি মনে করি। আমরা জানি নারীরা কোণঠাসা, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার এখনো পায়নি। অনেক ক্ষেত্রে সম্মানটুকুও পায়নি। তো সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিষয়টি ততোধিকই দুর্বল। আমরা নারীর অধিকারের বিষয়ে কথা বলি, তার ক্ষমতায়নের কথা বলি। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এই ক্ষেত্রগুলোতে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। সময় লাগবে তবে হবে, কারণ অনেক বাধা পেরিয়ে নারীরা সাংবাদিকতায় আজ অনেক এগিয়ে গেছে।

প্রশ্ন : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সোমা দেব : আপনাকেও ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ উইমেননিউজকে।