ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ৯:৪৮:৪৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ ফরিদপুরে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১১

পুরাণ: সুন্দরী কুহকিনী সার্সি

শান্তা মারিয়া | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:০১ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

কুহকিনী, ডাইনি, জাদুকরী শুনলে সাধারণত একটা কুশ্রী চেহারা মনে ভেসে ওঠে। কিন্তু গ্রিক পুরাণের মজা হলো এখানে জাদুকরী, ডাইনি এরাও দারুণ সুন্দরী হতে পারে। তাদের রূপও রয়েছে, রয়েছে মানবিক আবেগ, প্রেম। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভালোবাসা বঞ্চিত। কখনও আবার প্রেমিক তাদের ত্যাগ করেছে। এরা অনেক সময় ট্র্যাজিডির নায়িকা।

গ্রিক পুরাণের এমনি এক মোহময়ী সুন্দরী ও কুহকিনী হলেন সার্সি। সূর্যদেবতা হেলিওস ও সমুদ্রপরী পার্সির মেয়ে। কোনো কোনো কাহিনিতে তাকে মায়াদেবী হেকেটির কন্যা বলা হয়। কলচিসের রাজা ইটিজ ছিলেন তার ভাই এবং ক্রিটের রাজা মাইনসের স্ত্রী প্যাসিফি ছিলেন তার বোন। কলচিস রাজ্যের এক রাজকুমার ছিলেন তার স্বামী। স্বামীকে হত্যা করার অপরাধে প্রজারা তাকে নির্বাসিত করে। সূর্যদেব হেলিওস তখন তাকে ইয়া দ্বীপে বাস করতে বলেন।

ইয়া দ্বীপে সার্সির ছিল এক বিশাল প্রাসাদ। জঙ্গলের ভিতরে ছিল সেই প্রাসাদ।

সার্সির ছিল গাছপালা ও ওষধি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। নানা রকম গাছগাছড়া দিয়ে বিভিন্ন ওষুধ বানাতে পারতেন তিনি। সুন্দরী পার্সি জাদু করে তার সাবেক প্রেমিকদের এবং যাকে তার অপছন্দ তাকে জীবজন্তুতে পরিণত করতেন। বিশেষ এক ধরনের ওষধি খাইয়ে এই কাজটি করতেন তিনি। জন্তুতে পরিণত হলেও তার মধ্যে মানুষের বোধ বুদ্ধি অক্ষুন্ন থাকতো। ফলে সে বুঝতে পারতো তার কী হয়েছে। ইয়া দ্বীপে ভুলক্রমে কোনো মানুষ এসে পড়লে তার আর নিস্তার ছিল না।

এইভাবে দ্বীপটি জীবজন্তুতে ভরে তোলেন সার্সি। তার প্রাসাদের আশেপাশের জঙ্গলে প্রচুর সিংহ ও নেকড়ে ছিল। কিন্তু তারা ছিল প্রকৃতপক্ষে মানুষ থেকে জন্তুতে পরিণত হওয়া হতভাগ্যের দল। তাই তারা মোটেই হিংস্র ছিল না।

গ্রিক বীর অডিসিউস  ট্রয়যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরার সময় ইয়া দ্বীপে আশ্রয় নেন। অডিসিউস প্রথমে দ্বীপে নামেননি। তার কয়েকজন অনুচর দ্বীপে নেমে ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে সার্সির প্রাসাদে এসে আশ্রয় নেন। সার্সি তাদের খুব সমাদরে তার প্রাসাদে আপ্যায়ন করেন। তিনি পরিবেশন করেন পনিরের তৈরি খাদ্য,মধু এবং মদ। মদের সঙ্গে তিনি মিশিয়ে দেন ওষুধ। ফলে নাবিকরা পরিণত হয় শূকরে। সার্সি তাদের আটকে রাখেন খোঁয়াড়ে। তবে ইউরিলোকাস নামে এক সাবধানী নাবিক তাদের সঙ্গে ভোজে অংশ না নিয়ে পুরো ঘটনাটি আড়াল থেকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে জাহাজে ফিরে গিয়ে সে অডিসিউস এবং তার বাকি সঙ্গীদের ঘটনাটি জানায়। সহচরদের উদ্ধার করতে এবার অডিসিউস নিজেই রওনা হন জাদুকরীর প্রাসাদের দিকে। পথিমধ্যে দেবতা হার্মিস তাকে সাবধান করে দেন। এবং তাকে দেন মলি নামে এক পবিত্র ওষধি। অডিসিউস সেই ওষধি নিয়ে যান সার্সির প্রাসাদে। সার্সি যথারীতি তাকে সাদরে আপ্যায়ন করলেন। কিন্তু মলির গুনে সার্সির জাদু কাজ করল না। এবং অডিসিউসকে জন্তুতে পরিণত  হতে হল না। জাদু কাজ করল না দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন সার্সি। তিনি এমনকি এই বিষ্ময়কর গ্রিক বীরের প্রেমেই পড়ে গেলেন। অডিসিউসের আদেশে তার সহচরদের মানবরূপে ফিরিয়ে আনলেন সার্সি। সার্সি অডিসিউসকে শয্যায় আহ্বান জানান। কিন্তু হার্মিসের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি জাদুকরীকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন যেন নিদ্রিত আবস্থায় তার পুরুষত্বকে হরণ না করা হয়। এইভাবে হার্মিসের পরামর্শে সার্সির ক্ষতিকর জাদু থেকে বেঁচে যান অডিসিউস।

অডিসিউস ও তার নাবিকদের এবার সত্যি সত্যি দারুণভাবে আপ্যায়ন করলেন জাদুকরী। তার আন্তরিক আদর যত্নে তারা ভীষণ খুশি হয়ে সেই দ্বীপে কাল যাপন করতে লাগলেন। তারা একবছর সেই দ্বীপে থাকেন। অডিসিউসের সঙ্গে সার্সির প্রণয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সার্সির গর্ভে অডিসিউসের ছেলে টেলেগোনাসের জন্ম হয়। অডিসিউসের যখন বিদায় নেওয়ার সময় এল তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তাকে বিদায় জানান এই রূপসী কুহকিনী। তিনি তার সমস্ত জাদু ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রেমিকের যাত্রাপথকে সুগম করার চেষ্টা করেন। কীভাবে যেতে হবে, কী করতে হবে সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত নির্দেশনা দেন । মূলত তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী চলে অডিসিউস অনেক বিপদ থেকে পরিত্রাণ পান।

অডিসিউসকে বিদায় জানিয়ে সার্সি ইয়া দ্বীপেই বাস করতে থাকেন।

অডিসিউস দেশে ফিরে যান। পরবর্তীতে টেলেগোনাস বড় হয়ে বাবাকে দেখার ইচ্ছা পোষণ করে। ইথাকায় যাত্রা করার সময় মা তার হাতে দেন একটি বিষ মাখানো বর্ষা। ইথাকায় পৌঁছে টেলেগোনাস ভুলক্রমে তার বাবাকেই হত্যা করে বসে। শোককাতর হয়ে টেলেগোনাস বাবার মৃতদেহ, অডিসিউসের স্ত্রী পেনেলোপী এবং অন্যপুত্র টেলেমেকাসসহ ইয়া দ্বীপে আসেন। সার্সি বিষ্ময়কর জাদু ওষধির সাহায্যে তার প্রেমিককে বাঁচিয়ে তোলেন। কৃতজ্ঞ অডিসিউস সার্সির মেয়ে ক্যাসিফোনের সঙ্গে বড় ছেলে টেলেমেকাসের বিয়ে দেন।

পরবর্তীতে শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করে টেলেমেকাস সার্সিকে হত্যা করেন। মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ক্যাসিফোনে হত্যা করেন টেলেমেকাসকে। এই সংবাদ শুনে দুঃখে প্রাণত্যাগ করেন অডিসিউস। এটি অবশ্য হোমারের অডিসিতে নেই। অডিসি অনুযায়ী অডিসিউসের মৃত্যু হয় অন্য এক সমুদ্র যাত্রায়।

অন্য কাহিনিতে আছে সার্সি পরবর্তীকালে ইয়া দ্বীপ ত্যাগ করে ইতালি চলে যান এবং দ্বীপটি ধ্বংস হয়ে যায়।
সার্সি সম্পর্কে আরেকটি কাহিনি জলদেবতা গ্লকাস ও ভয়ঙ্কর দানবী সাইলার সঙ্গে সম্পর্কিত। মত্স্যজীবী এক মানুষ থেকে দৈব ওষধি খেয়ে জলদেবতায় পরিণত হয়েছিলেন গ্লকাস।

তিনি সুন্দরী  উপদেবী সাইলার প্রেমে পড়েন। গ্লকাস সাইলার প্রেম লাভের জন্য সার্সির কাছে আসেন এমন একটি ওষুধের খোঁজে যা প্রয়োগ করলে সাইলা তার প্রেমে পড়বেন। কিন্তু সার্সি নিজেই রূপবান গ্লকাসের প্রেমে পড়ে তাকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু গ্লকাস এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সার্সির রাগ গিয়ে পড়ে সাইলার ওপর। ফলে সাইলাকে জাদু ওষুধ প্রয়োগ করে এক ভয়ঙ্কর দানবীতে পরিণত করেন সার্সি।

গ্রিক পুরাণে সার্সিকে কখনও উপদেবী, কখনও জাদুকরী, আবার কখনও দ্বীপ পরী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।