ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৩২:২৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

বাংলাদেশের পাখি: আমাদের বন্ধু পাখি বুলবুলি

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:২১ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

বাংলাদেশের পাখি: আমাদের বন্ধু পাখি বুলবুলি

বাংলাদেশের পাখি: আমাদের বন্ধু পাখি বুলবুলি

বুলবুলি আমাদের অতি পরিচিত পাখি। আমাদের কাছের পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ওদের বসবাস মানুষজনের গা ঘেঁষে। তাই ঢাকা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের যে কোনো উন্মুক্ত প্রান্তরে এই পাখির সঙ্গে আমাদের দেখা হয় হরহামেশাই।

গেরস্থ বাড়ির উঠোন কিংবা বাগানে স্বাধীনাভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ওদের। দেখা যায় শহুরে বাড়ির আশপাশেও। আমাদের দেশে এমন কোনো বাগান নেই যেখানে বুলবুলি দেখা যায় না। ওরা গভীর অরণ্য পছন্দ করে না মোটেও। থাকছে পছন্দ করে মানুষের খুব কাছে।

বুলবুলির ইংরেজি নাম REDVENTED BULBUL or COMMON BULBUL  (রেডভেন্টেড বুলবুল বা কমন বুলবুল)। বৈজ্ঞানিক নাম Pycnontus  cafe।

স্ত্রী-পুরুষ একই রকম দেখতে। মাথা ও গলা চকচকে কালো। ওদের মাথার ওপর ছোট্ট কালো ঝুঁটি আছে। ঝুঁটিটি দেখলে মনে হয় যেন চুলে কদম ছাঁট দেয়া হয়েছে। কারো কারো আবার ঝুঁটি দেখা যায় না।

সারা শরীর এবং ডানা পাটকিলে রঙের। ডানা, পিঠের ওপরের অংশ ও বুকের প্রতিটি পালকের আগায় খুব সরু সাদা পট্টি নজরে পড়ে। লেজের ডগা পাটকিলে। এই পাটকিলে রঙ গাঢ় হয়ে এসে শেষপ্রান্তে সাদা। তল পেট ও লেজের তলের অংশ ফিকে সাদা। ডানারও কতোগুলো পালকের প্রান্তদেশ সাদা। তলপেটের শেষে লেজের তলা টুকটুকে লাল। চোখের ভেতরের অংশ গাঢ় পিঙ্গল। চঞ্চু ও পায়ের রঙ কুচকুচে কালো। চঞ্চু ছোট ও শক্ত।

বুলবুলিদের খাবার মেন্যুতে আছে বিভিন্ন রকম ছোট ছোট ফল, কিট-পতঙ্গ এবং ফুলের মধু। পুঁইশাকের পাকা দানা ও মটরশুটি ওদের খুব প্রিয় খাবার। তাই কৃষকের ভরা জমিতে এসব সবজি খেতে ওদের দলে দলে হামলা করতে দেখা যায়। তাল-খেজুরের রসও ওদের বেশ প্রিয়। শীতকালে খেজুর গাছে ঝোলানো রসের হাঁড়িতে বসে প্রায়ই আরাম করে রস চুরি করে খেতে পছন্দ করে ওরা।

সামাজিক পাখি বুলবুলি। তাই জোড়ায় জোড়ায় বা দল বেঁধে চলতে পছন্দ করে ওরা। ওদের ভালোবাসা বেশ গভীর। জোড়া ছাড়া ওদের দেখা যায় না বললেই চলে। বেলা শেষের গোধূলি লগনে বাগানের কোনো ঝাঁকড়া গাছে বা পুকুর পাড়ের কোনো ঝোপের মধ্যে এক সঙ্গে হয়ে কিচিরমিচির শব্দে ওরা পাড়া মাতিয়ে তোলে।

রাজধানীর আজিমপুর ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পুকুর পাড়ের একটি মাঝারি আকারের জবা ফুল গাছের ঝাড়ে শেষ বিকেলে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি বুলবুলিকে আমি দল বেঁধে এভাবে খেলতে দেখেছি বহুবার। গাছটির সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে আমি ওদের খেলা দেখেছি মুগ্ধ দৃষ্টিতে। ওই কলেজের পুকুর পাড়ের একটি কলা গাছের ঝোপের মধ্যে ওদের বাসা বুনতেও দেখেছি। কিন্তু পরে ঐ বাসায় কোনো ডিম দেখিনি।

বুলবুলি খুবই চঞ্চল স্বভাবের পাখি। স্থির হয়ে যেন বসতেই পারে না। তার ওপর আবার বেশ ঝগড়াটে এবং লড়াইবাজও বটে। এ কারণে এক সময় সারা ভারতবর্ষে বুলবুলি পালার রেওয়াজ ছিলো। বাংলাদেশেও এক সময় কক ফাইটের মতো বুলবুলিরও লড়াই দেখা যেতো। এখন ওসব আর চোখে পরে না।

বুলবুলি বেশ সাহসী পাখি। শত্রুর দেখা পেলে তাকে ছেড়ে কথা কয় না। শক্ত নখর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর ওপর। এই পাখি আবার বেশ ভালোভাবে পোষ মানে। হয় প্রভু ভক্ত। কুমিল্লার ভিড়াল্লা গ্রামে আমার নানা বাড়ির পাশের বাড়ির কামাল নামের একটি ছেলেকে আমি এক জোড়া বুলবুলি পালতে দেখেছি। ও এই পাখি দুটোকে একটি ছোট বাঁশের খাঁচায় নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়াতো গ্রাম জুড়ে। গ্রামের অন্যান্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শুধু পাখিগুলোকে দেখার জন্য ওর পিছু পিছু ছুটতো। কামাল পাখি দুটোকে এতো সুন্দর পোষ মানিয়েছিলো যে ছেড়ে দিলেও ওরা উড়ে যেতো না।

বুলবুলি খুব ভালো উড়তে পারে না বলে একটানা বেশি দূর উড়ে যায় না। তবে ওদের ওড়াটা বেশ দ্রুত। ওড়ার সময় ডানার ঝাপটার শব্দ বেশ স্পষ্ট শোনা যায়। ওড়াউড়ি করার চেয়ে সারাক্ষণ ওরা গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতেই অভ্যস্ত। মাটিতে ভালো করে হাঁটতে পারে না বলে মাটিতে নামে না বললেই চললে। কোনো খাবার মাটি থেকে তুলে নেয়ার প্রয়োজন হলেই কেবল মাটিতে নেমে আসে।

বুলবুলির গলার আওয়াজ বেশ আকর্ষণীয় ও স্পষ্ট। ওরা গান গায় না। তবে সারাদিনই বিরামহীনভাবে মিষ্টি এবং সুরেলা কণ্ঠে ডাকাডাকি করে ঘুরে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে।

ওদের প্রজননকাল বর্ষা মৌসুম। এ সময় কোনো ঝোপ বা ছোট গাছের ডালে শুকনো ঘাসের গোড়া, চুল, শুকনো পাতা বা গাছের ছাল দিয়ে বাসা তৈরি করে। বাসাটি দেখতে বাটির মতো। এ বাসায় ২ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ গোলাপি সাদা; তার ওপর বাদামির ছোপ থাকে। ডিম ফোটানো এবং বাচ্চা প্রতিপালনের কাজ দুজনে মিলেই করে।

কাক, চড়ুই, শালিকের মতো বুলবুলিও আমাদের আঙিনার পাখি। আমরা সকালে ঘুম ভেঙে উঠে বাড়ির উঠোনের গাছে গাছে বুলবুলির নাচন দেখে মুগ্ধ হই। আমাদের প্রকৃতিতে ওরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। এ দেশে ওরা বেশ ভালোই আছে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত দেশে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বুলবুলি পাখি চেনে না। শিল্প-সাহিত্য-কবিতা-গান-ছড়ায় সেই আদি যুগ থেকে বার বার উঠে এসেছে এই পাখির নাম। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গানে বলেছেন-‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিস নে আজি দোল’। আর শিশুরা মহানন্দে ছড়া কাটে-
বুলবুলি গো বুলবুলি
        আয় না খেলি চুল খুলি।
গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থেকে
        উদাস করিস আমায় ডেকে।
তোর গলার মিষ্টি সুরে
        মন যে আমার কেমন করে।
আয় না কাছে বুলবুলি
       গল্প করি মন খুলি।

আমাদের দেশে মোট আট রকমের বুলবুলি রয়েছে। ওদের মধ্যে রূপের দিক থেকে সবচেয়ে সুন্দর সিপাহি বুলবুলি।

লেখক : আহবায়ক, বাংলাদেশ বার্ড ওয়াচার সোসাইটি।