ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ৮:২৩:৪৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক: প্রধানমন্ত্রী সবজির বাজারে স্বস্তি নেই যুদ্ধকে ‘না’ বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছি ভারী বর্ষণে মহাসড়কে ধস, চীনে ২৪ প্রাণহানি রাজবাড়ীতে ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল যোগাযোগ বন্ধ

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি: যেখানে শায়িত যোদ্ধারা

শ্যামল সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:২৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিস্থল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ সৈনিকরা চির নিদ্রায় শায়িত আছেন এখানে। 

১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধিক্ষেত্রে আসেন।

ইতিহাস বলছে, ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। 

এই সমাধিক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করে Commonwealth War Graves Commission (CWGC)। সেই শুরু থেকে আজঅব্দি তারাই এই সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করে আসছে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থণাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, ময়নামতি তখনকার সময়ে একটি ক্ষুদ্র গ্রাম হলেও তৎকালিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটিতে পরিনত হয়। এখানে স্থাপিত হয় বড় একটি হাসপাতাল। এছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমান ঘাঁটি, আর ১৯৪৪ সালে ইম্‌ফলে স্থানান্তরিত হবার আগে চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর। 

এই সমাধিক্ষেত্রে মোট ৭৩৬টি কবর আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই সে সময় হাসপাতালে মারা যাওয়া সৈনিক। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। 

বাহিনী অনুযায়ী এখানে সমাহিত আছেন ৩জন নাবিক, ৫৬৭জন সৈনিক এবং ১৬৬জন বৈমানিক। সে সময় মোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল।

যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিরা যেসব দেশের বাহিনিতে কর্মরত ছিলেন, সেগুলো হলো:

যুক্তরাজ্য    ৩৫৭ জন, কানাডা    ১২ জন, অস্ট্রেলিয়া ১২, নিউজিল্যান্ড ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১ জন, অবিভক্ত ভারত (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান)১৭৮ জন, রোডেশিয়া ৩ জন, পূর্ব আফ্রিকা ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকা ৮৬ জন, বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) ১ জন, বেলজিয়াম    ১ জন, পোল্যান্ড ১ জন, জাপান ২৪ জন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ও নিহতদের কাহিনি:
১৯৪১-১৯৪৫ সালে সংঘটিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪১ সালে বার্মার প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ব্রিটিশ ভারতীয় ও স্থানীয় সৈনিকদের দুটি দুর্বল ডিভিশনে সংঘটিত করা হয়, যার একটি বার্মার রেঙ্গুনের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথ রক্ষার জন্য এবং অন্যটি (যেটির সাথে পরে চীনা সেনাবাহিনী যুক্ত হয়) মধ্য বার্মাকে পূর্ব দিকের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য।

১৯৪১ সালে জাপানিদের আমেরিকার ওপর হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের শুরু। এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের অভিমুখে সমরাস্ত্র ও রসদ সরবরাহের পথ বার্মারোড বন্ধ করা। কিন্তু ১৯৩৭ সাল থেকেই জাপান, চীনে যুদ্ধরত ছিল। এই হামলায় ১৯৪২ সালের ডিসম্বরে কিছু সাফল্যও পায় জাপান। কিন্তু পরবর্তী ছয় মাস এটি প্রতিহতও হয়।

১৯৪৩ সালে দুটি আক্রমণাত্মক হামলা হয়। আকিয়াব এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। মূলত ১৯৪৪ সালের মে মাসের দিকে জাপানের মূল আক্রমণ শুরু হয়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর অনুমেয় আক্রমণ প্রতিহত করা ও আসামে অনুপ্রবেশ করে লোডো সড়ক এবং চীনে রসদ সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত বিমানক্ষেত্রগুলো বিধ্বস্ত করা। একে কেন্দ্র করে পরবর্তী তিনমাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এই সমাধিক্ষেত্রের প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর আছে। যার ভিতরের দেয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি ও বাংলায় লিখে একটি দেয়াল ফলক লাগানো রয়েছে। ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্থ পথ, যার দুপাশে সারি সারি কবর ফলক। সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক লক্ষ করা যায়। খ্রিস্টানদের কবর ফলকে ক্রুশ, মুসলমানদের কবর ফলকে আরবি লেখা রয়েছে। প্রশস্থ পথ ধরে সোজা  সামনের দিকে রয়েছে সিঁড়ি দেয়া বেদি। তার উপরে শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় পবিত্র প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুপাশে রয়েছে আরো দুটি তোরণ ঘর। এ সব তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পিছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরো বহু কবর ফলক। প্রতি দুটি কবর ফলকের মাঝখানে একটি করে ফুলগাছ শোভা পাচ্ছে। 

এছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে প্রচুর গাছ। সমাধিক্ষেত্রের সম্মুখ অংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমী একটি কবর রয়েছে। সেখানে একসাথে ২৩টি কবর ফলক দিয়ে একটা স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই স্থানটি ছিল মূলত ২৩ জন বিমানসৈনিকের একটি গণকবর, যেখানে লেখা রয়েছে: ‘These plaques bear the names of twenty three Airmen whose remains lie here in one grave’।