মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা: বিস্মৃত এক কবির সাতকাহণ
অপর্ণা আনন্দ | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা: বিস্মৃত এক কবির সাতকাহণ
বিভাগপূর্ব বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের কাব্যকীর্তির অপ্রতুলতায় পূর্ণতার মানসে হঠাৎ আলোর দ্যুতি নিয়ে আবির্ভূত হন কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা। তিনি স্বকালে মুসলিম কবিদের অকর্ষিত ঊষর কাব্যভূমে স্বীয় মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার অমিয় বারি সিঞ্চনে সজীব ও শ্যামলতায় প্রাণবন্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
দৃঢ় প্রত্যয় ও একনিষ্ঠতায় বিভাগপূর্ব বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের অস্তিত্বের সংকটকালে শেষপর্যন্ত তিনি নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। তার সৃষ্ট পথপরিক্রমায় পরবর্তী মুসলিম কবি সাহিত্যিকরা সাহিত্য সাধনার পরম্পরা ও প্রেরণার যোগসূত্রের সন্ধান পেয়েছিল।
বিশ শতকের সমাজ প্রেক্ষাপটে মুসলিম নারীর সাহিত্যচর্চা অকল্পনীয় ছিল সন্দেহাতীতভাবে। এক্ষেত্রে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ঘেরাটোপ ছিঁড়ে প্রথম নিজেকে অসূর্যস্পর্শা মুক্ত করলেন রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২), এরপরেই মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার (১৯০৬-১৯৭৭) অবস্থান। উচ্চশিক্ষিত না হয়েও আত্মস্বভাবজাত কবি সত্তার মৌলিকত্বে সমকালে প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকগণের দৃষ্টি আকর্ষক হতে পেরেছিলেন তিনি।
তিনি বাবা কর্মস্থল পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তার পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার নিয়ামতবাড়ি গ্রামে। তার বাবা খানবাহাদুর মোহাম্মদ সোলায়মান এবং মা সৈয়দা রাহাতুননেসা খাতুন ছিলেন সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাহমুদা ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা খান বাহাদুর সোলাইমান রাজশাহী বিভাগের ডেপুটি কালেকটর ছিলেন। তার পূর্বপুরুষ শেখ সাইফুল্লাহ জমিদারি নিয়ে কুষ্টিয়া অঞ্চলে আসেন।
কৈশোরে রচিত কবিতা ও রূপকথায় তার নাম পাওয়া যায় শ্রী রকিবননেছা মহম্মদা খাতুন। তাছাড়া সে সময়ে তার ডাক নাম ছিল বাতাসী।
তিনি পাশের এলাকার জমিদার কন্যা হওয়ায় কবিরগুরু স্নেহধন্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়াও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কাজী নজরুল ইসলাম-এর স্নেহধন্য হওয়ার সুযোগও তার ঘটেছিল।
তার কবিতায় মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার আন্তরিক প্রকাশ ঘটেছে। প্রকৃতির রূপবৈচিত্র তার কবিতায় প্রাণের স্পর্শ লাভ করেছে। অত্যন্ত অল্প বয়সে তার কবি প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। ষাটের দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও খ্যাতিমান মহিলা কবি।
১৯৩০-এর দশকের শুরুতে কবি হিসেবে মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার আত্মপ্রকাশ। তার প্রথম কবিতার বই ‘পসারিনী’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২-এ। এই বই সম্পর্কে সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের মন্তব্য : ‘বাংলা ভাষায় মুসলিম (মহিলা) কবির ইহাই প্রথম প্রকাশিত আধুনিক কবিতার বই। এতে তিনি প্রকৃতি, প্রেম ও বিরহ নিয়ে কতকগুলো কবিতা লিখেছেন’ স্বাধীনতার পরে তিনি আড়ালে চলে যান।
বিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের সামাজিক জাগরণে নারীর অবস্থান যারা নিশ্চিত করেছেন, তাদের অন্যতম ছিলেন মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা। এক্ষেত্রে স্বনামধন্যা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, শামসুন্নাহার মাহমুদ ও সুফিয়া কামাল-এর পর্যায়ভুক্ত ছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত না হলেও সৃজনশীল মন ও বুদ্ধিবৃত্তিক মনন দিয়ে তিনি স্বকালের স্বসমাজে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
মাহমুদা খাতুনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। আকৈশোর ছবি আঁকার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। পরবর্তীকালে তিনি স্বাস্থ্যরক্ষা ও রন্ধনশিক্ষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পারিবারিক পরিবেশ ছিল তার সাহিত্যচর্চার অনুকূলে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ নজিবর রহমান ছিলেন তার গৃহশিক্ষক। কায়কোবাদের অশ্রুমালা ও সমকালীন সাহিত্যপত্রে প্রকাশিত রচনাবলি তাকে প্রভাবিত করে। ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই তিনি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে থেকেছেন। এক সময় তিনি জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিঙেও কিছুকাল অবস্থান করেছেন। তাছাড়া দিল্লি, আগ্রা, আজমির প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেছেন।
মাহমুদা খাতুনের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি: পশারিণী (১৩৩৮), মন ও মৃত্তিকা (১৯৬০) এবং অরণ্যের সুর (১৯৬৩)। এছাড়া কিছু প্রবন্ধ ও ছোটগল্পও তিনি রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। তিনি মুখ্যত কবিতাই লিখেছেন। স্বভাবজাত প্রেরণায় মাহমুদা খাতুন অনবরত কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলি সমকালীন সাময়িক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তার কাব্যপ্রতিভা হয়তো তার কর্মখ্যাতির সমতুল্য ছিল না, কিন্তু নিষ্ঠা ও প্রয়াস তাকে রবীন্দ্রানুসারী কবিদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট আসনে সমাসীন করেছে।
মাহমুদা খাতুন সনেট এবং গদ্যছন্দেও কিছু কবিতা রচনা করেছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং মানুষ ও সমাজ তার কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে। কখনও সাময়িক প্রসঙ্গ হয়েছে তাঁর কবিতার বিষয়বস্ত্ত।
দুই মহাযুদ্ধের তান্ডবলীলা তাকে শান্তির অনিবার্যতায় আস্থাশীল করেছে। তাই শান্তির স্বপক্ষে তিনি আহবান জানিয়েছেন উদাত্ত কণ্ঠে। যেহেতু তার কাছে কবিতা ছিল ‘হূদয়ের বিশুদ্ধ উচ্চারণ’, সেহেতু তাঁর নিজের কবিতাও ছিল মৌলিক এবং এক প্রশান্ত গতিপথে প্রবহমান।
১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমী তাকে সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৯৭৭ সনের ২ মে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। এ সময় তার বয়স ছিল ৭১।
- ভারতে হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়!
- তানজানিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম
- এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না
- ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
- চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই
- ‘হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দিনে লক্ষাধিক মুরগি’
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু
- গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
- অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩
- হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
- থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ