ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৭:০১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেন রিতু আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে হিটস্ট্রোকে একদিনে ১৭ মৃত্যুর রেকর্ড ঢাকাসহ ৫ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ আজ, প্রাথমিক খোলা বিপজ্জনক দাবদাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে ফিলিপিন্সে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিত

মেয়ের অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা হলেন উলকা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বিয়ে মানে নারীর জীবনের সব শখ-আহ্লাদ শেষ। আগে যা করার করেছো। বিয়ের পর সংসার সামলানোই মূল কাজ—সমাজে এমন ভাবনা বহন করে চলার মানুষের অভাব নেই। তবে আসলেই কি বিয়ে একজন নারীর স্বপ্নের দরজায় শেকল টেনে দেয়? উল্টোও তো হতে পারে। এই যেমন ফারহানা নাজনীন উলকা। সাধারণ একজন গৃহিণী থেকে যিনি হয়ে গেছেন উদ্যোক্তা। 

হেঁশেল ঘরে রোজ রান্না ঠিকই করেন উলকা। তবে তা কেবল পরিবারের সদস্যদের জন্য নয়। কখনো কখনো অন্যদের জন্যও। এই অন্যরা হলো তার ক্রেতা। অনলাইনে খাবার বিক্রি করেন এই নারী। 

 সংসার সামলানোর পাশাপাশি ব্যবসা সামলাচ্ছেন উলকা। তার উদ্যোগের নাম ‘উলকা’স কিচেন’। নাম শুনে সহজেই বোঝা যায় কাজের ক্ষেত্র আর ধরন। অনলাইন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে এই নারীকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেন যে মানুষটি তিনি তার বড় মেয়ে। ভিকারুননিসা স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা তাসনীম মুবাশশীরা দীবার প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। 


উলকা বলেন, ‘অনলাইন বিজনেসে আসাটা মূলত ২০২০ সালে। করোনা মহামারিতে যখন পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিল তখন। কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। তখন আমার বড় মেয়ে, আমার স্বামী আর ছোট ভাই উৎসাহ দেয় অনলাইন বিজনেসে আসার জন্য।’


‘ঐ সময়টা সবাই ঘর বন্দি। কেবল অনলাইন বিজনেসই ছিল মানুষের একমাত্র ভরসা। আমার রান্নার প্রতি ঝোঁক সেই স্কুলজীবন থেকেই। বড় মেয়ে বললো, মামনি তুমি তো তোমার এই খাবার নিয়েই কাজ করতে পারো অনলাইনে। বলেই থামেনি সে। ফেসবুকে আমাকে ব্যবসার জন্য পেজও খুলে দেয়। এভাবেই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।’— যোগ করেন তিনি। 

বিভিন্ন ধরনের ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করেন উলকা। তার পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্থডে কেক, ড্রিম কেক, জার কেক, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, আচার, মাওয়া গাজরের লাড্ডু, সিঙ্গাড়া, চিকেন কাটলেট, চিকেন নাগেট, ফ্রোজেন আইটেম, সেমাইয়ের বরফি, রসমালাই, বালুসাই মিষ্টি, চিকেন হাফ মুন পাই ইত্যাদি। আচারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত হয়েছে তার বানানো আলুবোখরার আচার। এছাড়াও কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তোয়ালেও বিক্রি করেন তিনি। 


ঘর থেকেই ব্যবসার শুরু উলকার। প্রথম ক্রেতা ছিলেন তার স্বামী। অফিসের গেট টুগেদার প্রোগ্রামের জন্য ৩ পাউন্ডের একটি কেক অর্ডার করেছিলেন। বর্তমানে সম্মানজনক আয় করেন এই উদ্যোক্তা। 

অনলাইন ব্যবসাকে অনেকেই বেশ সোজা মনে করেন। ঘরে বসে বিনা পরিশ্রমে আয় করা ভাবেন। আসলে তা নয়। এর পেছনে অনেক পরিশ্রম থাকে। উলকা বলেন, ‘একজন নারী ঘরে নিজের পরিবারের জন্য, নিজের আত্মীয়-স্বজনের জন্য কাজ করা আর বাইরের লোকের জন্য কাজ করা দুটো একদম আলাদা। নিজের পরিবারের জন্য কাজ করতে গেলে একটু ভালো বা খারাপ হলে সমস্যা নাই। কারণ নিজের লোক তো সবাই, কিছু মনে করবে না। কিন্তু কারও কাছ থেকে পেমেন্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক ভয় লাগে। যদি আমার কাজ ক্রেতার পছন্দ হয় তাহলে তো ভালোই। কিন্তু যদি পছন্দ না হয় তখন অপমানিত হতে হবে অনলাইন মার্কেটে।’

কাজ করতে গিয়ে ভালো আর খারাপ দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে উলকার। তবে ভালোর সংখ্যাই বেশি। গতবছর ESCAPE এর ট্রেনিং অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন এই উদ্যোক্তা। যেখানে সার্কভুক্ত দেশের নারীরা অংশগ্রহণ করেন। ট্রেনিং এর শেষ দিন একটি ট্রেড ফেয়ারের আয়োজন করা হয় যেখানে সবাই সবার পণ্য প্রদর্শনী এবং বিক্রির সুযোগ পান। উলকা বলেন, ‘ঐ মেলায় ফরেন নারী উদ্যোক্তারা আমার সেমাইয়ের বরফিটা খুব পছন্দ করেছিলেন। তারা পার্সেল করেও নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য। এটি আমার বড় পাওয়া বা অর্জন বলতে পারেন।’

ব্যবসার কাজে পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন উলকা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী সবসময়ই খুব সাপোর্টিভ একজন মানুষ। আর বড় মেয়ে আমার পেজের জন্য নিজের সর্বোচ্চ করে।’

নিজের উদ্যোগকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান উলকা। স্বপ্ন দেখেন ‘উলকা’স কিচেন’ একটি ছোটোখাটো রেস্টুরেন্টে রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।