ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৭:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

রাজধানী ঢাকার বাতাস আবারও ‘অস্বাস্থ্যকর’

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ঢাকার বাতাস ফের ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ঢাকার বাতাস ফের ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ঢাকার বাতাস ফের ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় জনবহুল এই শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ছিল ১৭৮, যাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সূচক অনুসারে, দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ভারতের দিল্লি ১৯২ স্কোর নিয়ে প্রথম এবং আরব আমিরাতের দুবাই ১৬৮ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, লকডাউনে আগের তুলনায় বায়ুদূষণ কমেছে। লকডাউন কোনো সমাধান না। এটার প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। লকডাউনের সময়ে রাস্তায় অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ থাকা, যানবাহন বন্ধ থাকায় রাস্তার ধুলো ওড়া কমে যাওয়া, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ থাকার কারণে তুলনামূলকভাবে নির্মল বায়ু পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, গত বছরও আমরা দেখেছি, মার্চ-এপ্রিলে বায়ুদূষণ কমেছিল, জুন-জুলাইয়ে আবার বাড়তে শুরু করে। আগস্টে তা আগের অবস্থায় চলে যায়। গত বছর অক্টোবরে সেটা ২০১৯ সালের তুলনায় ১০ থেকে ১৬ শতাংশ বেড়ে যায়। এবারও লকডাউনে শিথিলতা আসার পর বায়ুদূষণ বাড়ছে বলে জানিয়েছে তিনি।

কল-কারখানা, যানবাহন, নির্মাণকাজ পুরোদমে চালু হলে আবার যে বায়ুদূষণ বাড়বে সেটি মনে করিয়ে অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, পুরনো গাড়িগুলো বায়ুদূষণের বড় উৎস। এসব গাড়ি বাদ দিয়ে পাবলিক বাসকে আমরা বাড়াতে বলছি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি কমিশন গঠনের কথা বলছি। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত রাজধানীর একটি ঢাকা। এমন একটি দেশের নাগরিকদের নির্মল বাতাস দেওয়ার জন্য একটি কমিশন যৌক্তিক দাবি।

তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো মেনে চললে বায়ুদূষণ কমানো যেতে পারে। রাস্তায় পানি দেওয়া, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে বহন করা- এগুলো মানতে হবে।

বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে। পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই তৈরি হয়। একিউআই নম্বর যত বাড়তে থাকে, বায়ুমান তত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়। একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। একিউআই ১০১ থেকে ১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ ছাড়িয়ে গেলে সেই বাতাসকে বিপজ্জনক ধরা হয়।

আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ঢাকার গড় একিউআই ছিল ১৬৮। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল চলতি বছর প্রথম দফা লকডাউন শুরু হয়। ঢিলেঢালা সেই লকডাউনের এক সপ্তাহে ঢাকার গড় একিউআই নেমে আসে ১৫৮ তে। পরে ১৪ এপ্রিল ‘কঠোর’ লকডাউন শুরু হলে গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসে ঢাকায়। ‘কঠোর’ লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে দেখা যায়, ঢাকার গড় একিউআই ছিল ১০৪। ওই সময়ে দৈনিক সর্বোচ্চ একিউআই ১১৪ উঠেছিল গত ১৫ এপ্রিল। ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা তিন দিন একিউআই ছিল একশ এর নিচে, যা গত ২ নভেম্বরের পর সাড়ে পাঁচ মাসে প্রথম রাজধানীর একিউআই একশর নিচে নেমে আসে। তবে এরপর আবার বাড়তে শুরু করে ঢাকার বাতাসের ধুলো। আইকিউএয়ারের হিসাবে ২১ এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকা ঢাকার একিউআই শনিবার ১৯৩ এ দাঁড়ায়।

আইকিউএয়ারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসকে ভয়াবহ করে তুলছে মূলত যানবাহন, শিল্প-কারখানা, নির্মাণ কাজ ও নির্মাণ কাজের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং ইটভাটার ধোঁয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণে যে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে, তাতে লাগাম টানতে দূষণের উৎসমুখ বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

ঢাকায় সাধারণত নভেম্বর থেকে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ এপ্রিলে কমে আসে। তবে এবার এপ্রিলের শুরুতেও ঢাকার ধুলো দূষণ ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বাতাসের মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে। পিএম ২.৫ এর জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহরের উঠে আসে। শহরের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপন করা ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়াকে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।

এ দিকে বায়ু দূষণ বন্ধে গত ২৪ নভেম্বর নয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট নয় দফা নির্দেশনা জারি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; ২. নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা; ৩. সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটাবে; ৪. রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; ৫. কালো ধোঁয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা; ৬. সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; ৭. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা; ৮ পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং ৯. মার্কেট/দোকানগুলোতে প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নেওয়া।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয় জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।