ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ২:৪৪:২৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

রাজধানীর অলিগলিতে নেই লকডাউনের ছাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ৮ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

রাজধানীর অলিগলিতে নেই লকডাউনের ছাপ

রাজধানীর অলিগলিতে নেই লকডাউনের ছাপ

রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকলেও অলিগলিতে সাধারণ মানুষের চলাচল রয়েছে প্রায় স্বাভাবিক৷ প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ অথচ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে সবরকার, গতকাল তা আরো সাত দিনের জন্য বৃদ্ধিও করা হয়।

কোথায় লকডাউন?
মিরপুরের পীরেরবাগে মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটার পর গিয়ে দেখা গেল, স্বাভাবিক দিনের মতোই রাস্তায় মানুষ গিজগিজ করছে৷ কোথাও সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই৷ এ প্রতিবেদককে এক পথচারী জানান, ‘‘সরকারি ছাড়া বাকি সব অফিস আদালত খোলা৷ মানুষ বাসা থেকে বের না হলে কীভাবে হবে?’’ যদিও অনেক পথচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা অনেকেই বাসা থেকে বিনা প্রয়োজনে অথবা তুচ্ছ প্রয়োজনে বের হয়েছেন৷

চলছে ফুটবল খেলা দেখা
মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় গলির এক হোটেলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে সকালের নাস্তা করে সবাই টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখতে বসে গেছেন৷ কেন লকডাউনে এভাবে জটলা পাকিয়ে খেলা দেখছেন জানতে চাইলে কেউ কোনো উত্তর না দিয়েই চলে যান৷

‘কাম না করলে সরকার খাওয়াইব আমাগোরে?’
ঢাকার ফার্মগেট এলাকার পূর্ব রাজাবাজারে এক গলির ফুটপাথ ঘেঁষে বসেছেন জুতা মেরামতকারী আনন্দ দাস৷ লকডাউনে কেন দোকান খুলে বসেছেন জানতে চাইলে ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘‘করোনা হইলে কী, আমাগো প্যাট তো থাইমা থাকে না৷ বড় স্যারেরা ঘরে বইয়া বেতন পায়, আমগো কেউ এমনে খাওন দিবো না, কাম কইরাই খাওন লাগবো৷’’

শুনতে হয় কটু কথা
ঢাকার গ্রিনরোডের এক গলিতে টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের অপেক্ষা করতে দেখা গেল শতাধিক মানুষকে৷ কিন্তু সেখানে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি তেমনভাবে না পাওয়ায় প্রতিবেদক ছবি তুলতে গেলে একজন মন্তব্য করেন, ‘‘এই যে রিপোর্টার আইসে নেগেটিভ নিউজ করতে৷ কামের কাম কিছু পারে না, এইসব দেখায়া দ্যাশের মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট করতাসে খালি৷’’

প্রতিটি গলির মুখে জটলা
ঢাকার মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার এক গলিতে বিকেলে গিয়ে দেখা গেল সেখানে কিছুদূর পরপর কয়েকজন করে দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছেন৷ একই দৃশ্য দেখা গেল অন্যান্য গলিতেও৷ কেন বের হয়েছেন জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘‘বাসায় আর কতো থাকবো? বিরক্ত হয়ে বাসা থেকে বের হইসি৷’’

সাংবাদিক দেখলেই ছুট
ঢাকার আগারগাঁও এলাকার ৬০ ফিটের একাধিক স্থানে তরুণদের পাওয়া গেল যারা কয়েকজন একসাথে বসে মোবাইলে গেম খেলছেন৷ ছবি তুলতে দেখা মাত্র সবাই যে যার মতো ছুটে পালান৷ কথা বলার জন্য ডাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি৷

মুদি দোকানিদের গুরুতর অভিযোগ
ঢাকার ফার্মগেট এলাকার পূর্ব রাজাবাজারের প্লাজা সুপার স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মতিন বলেন, সরকার লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দিলেও তারা সেটা পারছেন না৷ গত ২ জুলাই দোকান খোলা রাখার অপরাধে দুপুরে তার এক কর্মচারীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ৷ কেন প্রতিবাদ করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু বললেই মার খেতে হবে৷

কেনাকাটার শেষ নেই
ঢাকার মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার এক গলিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সন্ধ্যার পরেও ভ্যানে করে বেচাকেনা চলছে৷ কেন এখনো দোকান খোলা জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান, মানুষ টুকটাক কিনতে আসছে তাই তিনিও দোকান খোলা রেখেছেন৷

টং দোকানে ভিড়
ঢাকার খামারবাড়ি এলাকার একটি পার্শ্বরাস্তায় বেশ কয়েকটি চায়ের টং দোকান খোলা রাখতে দেখা যায়৷ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে দেখা যায় খোশমেজাজে বসে চা খাচ্ছেন৷ অনেকের মাস্ক থুতনিতে, আবার কারো মাস্কই নেই৷

‘হাঁটতে বের হয়েছি’
ঢাকার ফার্মগেট এলাকার পূর্ব তেজতুরিবাজারের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নুরুল আমিনকে কেন কঠোর লকডাউনে বের হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী তাই হাঁটতে বের হয়েছেন৷ বাসার ছাদেও তো হাঁটা যায়, এ কথা বলার পর তিনি জানান, সেখানে হাঁটার সুযোগ নেই৷

মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষকে ঘরে কোনোভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না, যে-কোনো অজুহাতে তারা বাসা থেকে বের হচ্ছেন৷ এই অবস্থা চলমান থাকলে সরকার যে উদ্দেশ্যে লকডাউন দিয়েছে তা কতটুকু সফল হবে সেটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷

বাড়ানো হয়েছে পুলিশের নজরদারি
সাধারণ মানুষকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না দিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসিমউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘অলিগলির জটলা সরানোর জন্য পুলিশ পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে৷’’ সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ দেখলে অলিগলির জটলা কমে আসে কিন্তু তারা চলে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় মানুষ৷

প্রধান সড়কেও বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা
ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক ঘুরে এবং কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান সড়কসহ ছোটবড় সব সড়কে প্রতিদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে৷ এখন আর শুরুর দিকের মতো যান চলাচল আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সদস্য৷