শোকগাথা : রাসেল বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব’
সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ১১:১০ এএম, ৬ আগস্ট ২০১৮ সোমবার
শেখ রাসেল! তখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর। দূরন্ত শৈশব হাতছানি দিয়ে ডাকছিল তাকে। চারদিকে ছুটাছুটি করা, দৌড়াদৌড়ি খেলা, রুপকথার ভেলায় চেপে অচীন দেশে পাড়ি দেওয়া। চলছিল সে রকম ভাবেই। বাবা তার দেশের কাজে ভীষণ ব্যস্ত, মিটিং, মিছিল, কখনো আবার বদ্ধ জেলখানায়। তারপরেও যতক্ষণ বাবাকে পাওয়া যেত বাবার বুকের গভীরে মুখ রেখে সাহস আর বীরত্বের উষ্ণতা নেওয়ার যখনই ছিল শিশুটির শ্রেষ্ঠ সময়, ঠিক তখনই ঘাতকের বুলেট স্তব্ধ করে দেয় তার দূরন্ত পথচলা।
এমন একটা চঞ্চল, নিষ্পাপ ছেলেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে ঘাতকের দল নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাব’। ঘৃণ্য ঘাতকরা নিয়ে যায় মৃত মায়ের কাছে। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’। সীমাররা কোন কথা শোনেনি।
বঙ্গবন্ধুর আদরের মানিক ছোট ছেলে শেখ রাসেল। ঘাতকরা মনে হয় জানোয়ারই হয়, মানুষ থাকলে তো এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাসেল বুঝত না রাজনীতির কিছুই, অথচ তাকেই কি না হতে হলো রাজনীতির বলি।
১৯৬০-৬১ সালের দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। এই বাড়িতেই ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম হয় শেখ রাসেলের।
রাসেল ছিল বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে, তাই পরিবারে আদর একটু বেশিই ছিল। তার বাবা তাকে ভালোবাসতেন খুব। বাসায় ফিরে ঘরে ঢুকে বাবা প্রথমেই খুঁজতেন রাসেলকে। রাসেল, রাসেল বলে ভরাট কণ্ঠে ডাক দিতেন তার নাম ধরে। রাসেলও বঙ্গবন্ধুকে প্রচণ্ড ভালোবাসত। বাবাকে কাছে পাওয়ার জন্য, বাবার কোলে চড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকত সব সময়। বাবার ডাক শোনার সাথে সাথেই এক দৌঁড়ে ছুটে আসত বাবার কাছে। অনেকক্ষণ পর বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরত, কিংবা উঠে পড়ত কোলে। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন পরম আদরে। বাবার চশমাটাকে দারুণ লাগত তার, তাই সেটা বাবার চোখ থেকে খুলে নিজের চোখে লাগিয়ে নিতে বেশ মজা লাগত ওর। গল্প শুনতে খুবই ভালোবাসত ছোট্ট শেখ রাসেল। বাবা অবসরে থাকলেই গল্প শোনানোর জন্য আবদার জুড়ে দিত। বাবা শুনাতেন একটি নিপীড়িত দেশ ও তার মানুষ এবং সংগ্রামের ইতিহাস, স্বাধীনতা অর্জনের গল্প। এসব গল্প শুনে হয়তো রাসেলেরও ইচ্ছা জাগত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার, যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করার। রাসেলও গল্প শোনাত তার বাবাকে। এত ব্যস্ততার মাঝেও বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতেন একজন প্রিয় পিতা। পিতা-পুত্রের আনন্দঘন আড্ডায় পুরো বাড়ি যেন স্বর্গ হয়ে উঠত।
‘শেখ রাসেল’ নামে একটি বই লিখেছেন শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা। দুজনেই বইটিতে তাঁদের ছোট ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, “আব্বা ওর জন্মের পরপরই জেলে চলে গেলেন। ৬ দফা দেওয়ার কারণে আব্বাকে বন্দি করল পাকিস্তানি শাসকরা। রাসেলের বয়স তখন মাত্র দেড় বছরের কিছু বেশি। কাজেই তার তো সব কিছু ভালোভাবে চেনার বা জানারও সময় হয়নি। রাসেল আমাদের সবার বড় আদরের; সবার ছোট বলে ওর আদরের কোনও সীমা নেই। ও যদি কখনও একটু ব্যথা পায় সে ব্যথা যেন আমাদের সবারই লাগে। আমরা সব ভাইবোন সব সময় চোখে চোখে রাখি, ওর গায়ে এতটুকু আঁচড়ও যেন না লাগে। কী সুন্দর তুলতুলে একটা শিশু। দেখলেই মনে হয় গালটা টিপে আদর করি।”
রাসেলের নামকরণের রয়েছে একটি মজার পটভূমি। বাবা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভীষণ পড়ুয়া। জেলে বসেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন তিনি। দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ছিল বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় একজন লেখক। বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝে শেখ রাসেলের মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের দার্শনিকতা। এসব শুনে রাসেলের ভক্ত হয়ে ওঠেন মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং নিজের ছোট সন্তানের নাম রেখে দেন রাসেল।
বাবা যখন জেলে থাকত বাড়িটা থাকত নীরব, রাসেলেরও থাকত মন খারাপ। তাই মা রাসেলের মন ভালো রাখার জন্য বুদ্ধি করে কিনে দেন একটা তিন চাকার সাইকেল। মায়ের কিনে দেওয়া সাইকেলটা নিয়ে সারাদিন খেলায় মেতে থাকত রাসেল। বাড়ির উঠোনের এ কোণ থেকে ও কোণে সাইকেল চালিয়ে বেড়াত সে।
প্রধানমন্ত্রী নিজের ছোট ভাই সম্পর্কে এই বইয়ে বলেছেন, “বাসার সামনে ছোট্ট একটা লন। সবুজ ঘাসে ভরা। আমার মা খুবেই যত্ন নিতেন বাগানের। বিকেলে আমরা সবাই বাগানে বসতাম। সেখানে একটা পাটি পেতে ছোট্ট রাসেলকে খেলতে দেওয়া হতো। একপাশে একটা ছোট্ট বাঁশ বেঁধে দেওয়া ছিল, সেখানে রাসেল ধরে ধরে হাঁটতে চেষ্টা করতো। তখন কেবল হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে। আমরা হাত ধরে হাঁটাতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু কিছুতেই হাঁটতে চাইতো না। ওর স্বাস্থ্য খুব ভালো ছিল। বেশ নাদুস-নুদুস একটা শিশু। আমরা ভাইবোন সব সময় ওকে হাত ধরে হাঁটাতাম। …আমাকে হাসুপা বলে ডাকত। কামাল ও জামালকে ভাই বলত আর রেহানাকে আপু। কামাল ও জামালের নাম কখনও বলতো না। আমরা অনেক চেষ্টা করতাম নাম শেখাতে, মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলতো ভাই। দিনের পর দিন আমরা যখন চেষ্টা করে যাচ্ছি- একদিন বলেই ফেলল ‘কামমাল’, ‘জামমাল’। তবে সব সময় ভাই বলেই ডাকত।”
খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাদের অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল এখনও বেঁচে আছে বাংলাদেশের সব শিশুর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে শেখ রাসেল পরিণত হয়েছে এক মানবিক সত্ত্বায়। মানবিক চেতনা সম্পন্ন মানুষরা শেখ রাসেলের বিয়োগ দুঃখ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফুটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শেখ রাসেল তুমি তো মরনি তুমি বেঁচে আছ হাজারও শিশুর প্রদীপ হয়ে। জ্বল জ্বল করে এখনও জ্বলছে তোমার আলো দিয়ে। এ আলো নিভাবে কে? এমন সাধ্য কারই বা আছে ?
- ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২০০
- পিঠা খেতে ঢাকা ছাড়লেন পরীমণি
- এআই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলেন রোনালদো
- কনার নতুন ছবি ঘিরে বিয়ের গুঞ্জন
- নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার ৫০ থানার ওসি বদলি
- ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট
- ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া
- পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
- বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত
- বিশৃঙ্খলায় ডুবছে গ্রোকিপিডিয়া
- লিভার ভালো রাখতে যে ৩ খাবার খাবেন
- আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল
- খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান
- ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’
- পুতিনকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানালেন মোদি
- নাসরিনের অধিনায়ক সানজিদা, সাবিনা-মাসুরারা অন্য ক্যাম্পে
- খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা
- বিয়ে নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন রাশমিকা
- হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা
- খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায়
- আজ মধ্যরাতে লন্ডনে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে
- ‘পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার’
- আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি গর্ব করবে : প্রধান উপদেষ্টা
- বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে
- তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা
- খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে সম্মতি কাতারের
- লিভার ভালো রাখতে যে ৩ খাবার খাবেন
- মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু
- বিশৃঙ্খলায় ডুবছে গ্রোকিপিডিয়া

