সেলিনা পারভীন : ‘শিলালিপি’তে এঁকেছিলেন বিজয়ের গান
মাজেদুল হক তানভীর | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০১:৩৫ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
ছবি : সংগ্রহ করা
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না।/দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে/শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না।’
এই অমর পঙক্তির চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতি আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের আজ মর্মন্তুদ একটি দিন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের আগের মুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনেই জাতি আজ স্মরণ করছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট এক হাজার ৭০ জন।
১৪ ডিসেম্বরে যেসব বুদ্ধিজীবীরা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে একমাত্র নারী সাংবাদিক ও কবি সেলিনা পারভীন।
জন্ম :
সেলিনা পারভীনের জন্ম ফেনীতে ১৯৩১ সালে। তার পিতা মো. আবিদুর রহমান শিক্ষকতা করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের ফেনীর বাড়ি দখল হয়ে যায়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি সাহিত্যের অনুরাগী হয়ে গল্প ও কবিতা লেখা শুরু করেন।
কর্মজীবন :
১৯৪৫ সাল থেকে পুরোদমে তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের হল পরিচালক হিসেবে চাকরি নেন। পরের বছর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে একজন রাজনীতিককে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। তিনি ‘ললনা’ পত্রিকায় কাজ করতেন বিজ্ঞাপন বিভাগে। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, টাকা তোলাসহ সব কাজ একাই করতেন। পত্রিকা অফিস থেকে বেতন হিসেবে অনেক সময় তেমন কিছুই পেতেন না।
ললনায় কাজ করার সময় ১৯৬৯ সালে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বের করেন শিলালিপি নামে একটি পত্রিকা। তিনি নিজেই এটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। শিলালিপি ছিল সেলিনার নিজের সন্তানের মতো। দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত শিলালিপি সকলেরই নজর কেড়েছিল। স্বাধীনতার পক্ষের পত্রিকা শিলালিপি। এই সুবাদে ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান :
১৯৬৯-এর রাজনৈতিক আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। নিজেও শরিক হন গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন কর্মকাণ্ডে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন ‘৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পল্টনের জনসভায় বা শহীদ মিনার থেকে বের হওয়া নারীদের মিছিলে যোগ দিতে। শরিক হতেন বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদসভাতেও। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সমাজতন্ত্রের প্রতিও আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। এরই মধ্যে শুরু হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেলিনা পারভীন ঢাকায় ছিলেন। তার বাসায় মাঝে-মাঝে রাত হলে কয়েকজন তরুণ আসতেন। এই তরুণদের সকলেই ছিলেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা। খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাওয়ার আগে এরা সেলিনা পারভীনের কাছ থেকে সংগৃহীত ঔষধ, কাপড় আর অর্থ নিয়ে যেতেন। শিলালিপির বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন।
চারিদিকে তখন চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, প্রতিরোধ। চারপাশে শুধু বুলেটের শব্দ আর বারুদের গন্ধ, চিৎকার, গোঙানি, রক্তস্রোত আর মৃত্যু। এরই মাঝে ললনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শিলালিপির ওপরও নেমে আসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর খড়্গ। হাশেম খানের প্রচ্ছদ করা একটি শিলালিপির প্রকাশিতব্য সংখ্যা নিষিদ্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। পরে প্রকাশের অনুমতি মিললেও নতুনভাবে সাজানোর শর্ত দেওয়া হয়। সেলিনা পারভীন বরাবরের মতো প্রচ্ছদ না নিয়ে তার ভাইয়ের ছেলের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে শিলালিপির সর্বশেষ সংখ্যা বের করেন। কিন্তু এর আগের সংখ্যার জন্যই সেলিনা পারভীন পাকিস্তানী ও তাদের দালালদের নজরে পড়ে যান—যেটাতে ছিল দেশবরেণ্য বুদ্ধীজীবীদের লেখা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লেখা। তাই কাল হলো। শিলালিপির আরেকটি সংখ্যা বের করার আগে নিজেই হারিয়ে গেলেন।
মৃত্যু :
১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। দেশ স্বাধীন হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। সাংবাদিক সেলিনা পারভীন তখন বাস করতেন সিদ্ধেশ্বরীতে। ১১৫ নম্বর নিউ সার্কুলার রোডে তার বাড়িতে থাকতেন তিনজন মানুষ। তার মা, পুত্র সুমন আর ভাই জনাব উজির। সেদিন শীতের সকালে তারা সবাই ছিলেন ছাদে। সেলিনা পারভীন সুমনের গায়ে তেল মাখিয়ে দিচ্ছিলেন। সুমন যখন ছাদে খেলাধুলা করছিল তখন সেলিনা পারভীন ছাদে চেয়ার টেনে একটি লেখা লিখছিলেন। শহরে তখন কারফিউ। রাস্তায় মিলিটারি। পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য বিমান থেকে চিঠি ফেলা হচ্ছে। হঠাৎ দূরে একটা গাড়ির আওয়াজ হলো। সেলিনাদের বাড়ির উল্টো দিকে খান আতার বাসার সামনে ফিয়াট মাইক্রোবাস ও লরি থামল। সেই বাসার প্রধান গেইট ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেল কিছু আল-বদর কর্মী। তাদের সবাই একই রঙের পোশাক পরা ও মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা। এক সময় সেলিনাদের ফ্ল্যাটে এসেও কড়া নাড়ে তারা। সেলিনা পারভীন নিজে দরজা খুলে দেন। লোকগুলো তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং এ সময় সেলিনা পারভীনের সঙ্গে লোকগুলোর বেশ কিছু কথা হয়। এরপর তারা সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায়।
মোহাম্মাদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে প্রায় ৩০ জনকে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত একটি ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন ঘাতকরা। বন্দিদের মধ্যে ছিলেন— শিক্ষক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ আরও অনেকে। সেখানে একমাত্র নারী বন্দি হিসেবে ছিলেন সেলিনা পারভীন।
১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রায়েরবাজারের বটতলায়। লম্বা রশি দিয়ে ৩০-৪০ জনকে সোজা লাইনে দাঁড় করিয়ে হাত বাঁধা হয়। পরিণতি বুঝতে পেরে সেলিনা পারভীন চিৎকার শুরু করেন। অনুরোধ করে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। তার চিৎকারে ঘাতকদের অসুবিধা হচ্ছিল। তাদের পরিকল্পনা মতো বন্দিদের হত্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না।তাই ঘাতকরা তখন তার মুখে বেয়ানেট চার্জ করে মুখ ফেড়ে দেয়।তিনি মাটিতে পড়ে যান আর ব্যথার আর্তনাদ ও গোঙানোর শব্দ শোনা যায়।ঘাতকরা তখন তার বুকেও বেয়ানট চার্জ করে। পরে তাকে গুলি করা হয়। এভাবেই নিভে যায় সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের জীবনের প্রদীপ।
এভাবেই একাত্তরে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে। ইতিহাসের এই বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের কুলাঙ্গারদের প্রতি আজ ঘৃণা জানাবে কোটি কোটি দেশপ্রেমিক বাঙালি।
লেখক : সাংবাদিক
- গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন কীভাবে নিবেন
- যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস
- ঈশ্বরদীতে আজ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি
- তীব্র গরমে তাপের সাথে সাপও বাড়ে যে কারণে
- শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরে কী কী হবে?
- ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম
- মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা
- প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌসের স্বর্ণজয়
- খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল
- অনেক প্রশংসা পাচ্ছি: তাসনিয়া ফারিণ
- কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
- থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
- ‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
- কেউ হিট স্ট্রোক করলে কী করবেন?
- সালমান আমার জীবন: ঐশ্বরিয়া
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি জন কিটস
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন