ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৪৮:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

হিজড়াদের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন: আজমাল হোসেন মামুন

আজমাল হোসেন মামুন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০১ পিএম, ৮ জুন ২০২০ সোমবার

হিজড়াদের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন।  ছবি : সংগৃহীত

হিজড়াদের উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। ছবি : সংগৃহীত

আমাদের দেশে বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে হিজড়ারা অন্যতম। ওরা সবচেয়ে অবহেলিত। শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মক্ষেত্রে, চিকিৎসা সেবা থেকে তারা বঞ্চিত। এদের সংখ্যাও কম বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন মোটেই তাদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না।

বাংলাদেশে এদের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সর্বশেষ জারিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে হিজরা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩শ’ ৭৯ জন প্রকৃতির বিচিত্র কারণে হিজড়ারা বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হিজড়াদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ৩ ধরনের হয়ে থাকে। ১. নারীদের সকল বৈশিষ্ট্য থাকলেও নারী যৌনাঙ্গ থাকে না, ২. পুরুষের সকল বৈশিষ্ট্য থাকলেও পুরুষাঙ্গ থাকে না এবং ৩. উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তবে ওরা কর্মঠ হয়েও বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের এক অবহেলিত জনগোষ্ঠী।

কুসংস্কারবশত সামাজিকভাবে তাদের কোন কাজকর্মে নিয়োগ করা হয় না ও সবসময় এড়িয়ে চলার প্রবণতা লক্ষণীয়। যার কারণে হিজড়ারা সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সকলে মিলে সংঘবদ্ধ থাকতে ভালো বাসে এবং জীবিকার সন্ধানে ভব ঘুরে। যুগ যুগ ধরে হিজড়া জনগোষ্ঠীরা নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে দেশের আনাচে কানাচে একসাথে কয়েকজন বসবাস করে থাকে।

বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠী পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে শহরে এলাকা সমূহে চলে আসে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। শহরের রাজপথে হাত পেতে ২/১ টাকা চেয়ে অন্য হিজড়াদের মত জীবিকা নির্বাহ করে। সারাদিন সে যা আয় করে, তার একটা ভাগ হিজড়াদের সর্দারকে দিতে হয়। হিজড়াদের শাসন পদ্ধতি ভিন্ন প্রকৃতির। হিজড়াদের প্রতিটি এলাকায় একজন সর্দার থাকে। তারাই নিয়ন্ত্রণ করে হিজড়াদের। সর্দারের আদেশ ব্যতীত কোন দোকানে কিংবা কারো কাছে হাত পেতে টাকা চাইতে পারবে না। সর্দারই গ্রুপ করে টাকা তোলার এলাকা ভাগ করে দেয়। ৫/৬ জনের একটি করে গ্রুপ থাকে। প্রতিটি সর্দারের অধীনে এরকম ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ থাকে। প্রতিদিন সকালে সর্দারের সঙ্গে দেখা করে দিক-নির্দেশনা শুনে প্রতিটি গ্র“প টাকা তোলার জন্য বের হয়ে পড়ে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যে টাকা তোলা হয়, প্রতিটি দলই ওই টাকা সর্দারকে জমা দেয়। সর্দার তার ভাগ নেয়ার পর দলের সদস্যরা বাকি টাকা ভাগ করে নেয়। প্রতি সপ্তাহে হিজড়াদের সালিশী বৈঠক হয়। ১৫ থেকে ২০ সদস্যের সালিশী বৈঠকে সর্দারের নির্দেশ অমান্যকারী হিজড়াদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়। বেত্রাঘাতসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য টাকা তোলার কাজ বন্ধ করে দেয়ার মত শাস্তি প্রদান করা হয়। জরিমানা পর্যন্ত করা হয়ে থাকে। দণ্ডিত হিজড়াকে তার নির্ধারিত এলাকা থেকে তুলে এই টাকা পরিশোধ করতে হয়। হিজড়ারা সর্দারের শালিসকে মাথা পেতে গ্রহণ করে। কারণ, সর্দারকে অনেক সময় মা বলে সম্বোধন করে থাকে। সর্দারের সাথে অসৈজন্যমূলক আচরণ করে না। সবসময় সম্মান করে থাকে।

ইসলাম ধর্ম মতে, তাদের পিছনে নামায পড়া হারাম নয়। তবে মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। হিন্দু ধর্মের মতে, হিজড়া প্রতিবন্ধীরা মন্দিরে পৌরহিত্য করতে পারবে না। তবে মন্দিরে পুজো অর্চনা করতে পারবে বলে ‘শ্রী গৌড়বাণী’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ্যাম কিশোর দেবনাথ জানান। হিজড়ারা হচ্ছে এক ধরনের প্রতিবন্ধী। এরা শারীরিক দিক দিয়ে একেবারে পিছিয়ে। সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার তাদের রয়েছে। এদের প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারকে স্বীকৃত দেয়া উচিত।

হিজড়ারা বিধাতার অভিশাপ নয়। হিজড়া কেউ ইচ্ছে করে হয় না। এটা শারীরিক সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি জন্মগত সমস্যা। যে কোন শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই এই শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ  দরিদ্র ও অশিক্ষিত পরিবারেই হিজড়া সন্তানে জন্ম বেশি হয়। তবে উচ্চবিত্ত পরিবারেও যে হিজড়া সন্তানের জন্ম হয় না, তা নয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা হলে সুস্থ করা সম্ভব । তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যয়বহুল । বাংলাদেশে সংবিধানে সকল শ্রেণির নাগরিকের অধিকার রয়েছে। কিন্তু হিজড়ারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক হিজড়া ভোটার হয়ে প্রথমবারের মত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি সংগঠনও উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ ভারতের হিজড়াদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। বেশকিছুদিন আগে ভারতে একটি কলেজের অধ্যক্ষ পদে হিজড়াকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত জনেগো্ষ্ঠির মতে তাদের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা জরুরী। যারা শিক্ষিত নয়, তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

হিজড়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের  মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে সমাজে পরিচিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীর পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদেরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে সরকার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ মতে, বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।

২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের কর্মসূচির বরাদ্দ ছিল ৪,৫৮,৭২,০০০. ০০ (চার কোটি আটান্ন লক্ষ বাহাত্তর হাজার) টাকা। আরো ১৪ জেলা এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কক্সবাজার, রাজশাহী,  চাঁপাইনবাবগঞ্জ,  নীলফামারী, গাইবান্ধা, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার। ক্রমান্নয়ে এ কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫. ৫৬ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আরো বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ।

বর্তমানে সারাবিশ্বে (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে অনেক রাষ্ট্রে লক ডাউন চলছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কতৃক দেশব্যাপী লক ডাউন দিয়েছে বেশ কিছু জেলা। বন্ধ হয়েছে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেজন্য অন্যান্য শ্রমজীবী ও দিনমজুরের মত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বসবাসকারী হিজড়া জনগোষ্ঠিরা খুবই কষ্টে আছে। কারণ, তারা দোকানে দোকানে বা বাজারে গিয়ে টাকা উঠিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়া সম্প্রদায়ও আজ ঘরে বসে দিন গুনছে।

পরিশেষে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, হিজড়া জনগোষ্ঠীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন করা অসম্ভব। তাই ওদের উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারিভাবে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নাহলে ওরা যুগ যুগ ধরে অবহেলিত থাকবে। আসুন এই বিষয়ে আমরা তাদের উন্নয়নে কিছু অবদান রাখার চেষ্টা করি।

লেখক : আজমাল হোসেন মামুন, সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।