ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৫২:১৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

ইতিহাসের অনন্য অধ্যায় সুপারস্টার গওহর জান

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

সুপারস্টার গওহর জান

সুপারস্টার গওহর জান

যখন বাজারে এক ভরি সোনার দাম ২০ টাকা তখন একটি গান গাইতে তিনি পারিশ্রমিক নিতেন ৩০০০ টাকা। চমকে উঠবেন না! তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ‘সুপারস্টার’ গায়িকা। গানের শেষে প্রত্যয়ের সিগনেচার কণ্ঠ "মাই নেম ইজ গওহর জান!"।শোনা যায় তিনি যখন সাফল্যের চুড়োয় তখন তিনি ফি-সন্ধ্যায় রেশমি পর্দা ছয় ঘোড়ার ফিটনে ময়দানে বেড়াতে বের হতেন । জনৈক বাঈজির এই ঠাঁটবাটে বিরক্ত হয়ে কোনও ইংরেজ রাজপুরুষ নাকি গওহরকে ১০০০ টাকা জরিমানা করেছিলেন। গওহর সেই টাকা কড়কড়ে নগদে কার্যত তাঁর মুখে ছুঁড়ে মারেন।
প্রকাশ্যে নাক সিঁটকোলেও, তথাকথিত অভিজাত লোকেদের তাঁর দরবারে হত্যে দিতে হত। আড়ালে অনেকেই তাঁকে বলতেন বাঈজি, কেউ মানসিকতায় উদার, শিল্পীর সম্মান জ্ঞাপন করেছেন। তাতে গওহর জানের কিছু যায় আসেনি। কারণ তিনি ইতিহাসের অধ্যায়। প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে গওহর জানের গান রেকর্ড করা হয়।দেশের প্রথম কোটিপতি সংগীত শিল্পী হওয়ার কৃতিত্বও তাঁর। গওহরের কথা বলার আগে চলুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। বেনারসের বাঈজি পাড়ায় সংগীত কত্থকে পারদর্শী মলকা জানের খ্যাতি লোকমুখে ছড়াতে সময় লাগে নি। একসময়ে তিনি চলে আসলেন বেনারস থেকে কলকাতা। কিন্তু কেন!
 ইংরেজ সৈনিক হার্ডি হেমিংস বিবাহ করেছিলেন রুক্মিনী নামের এক ভারতীয়কে। তাঁদের কন্যা অ্যাডলিন ভিক্টোরিয়া হেমিংস। ওই অ্যাডলিন বিবাহ করলেন রবার্ট উইলিয়াম ইওয়ার্ডকে। তবে একসময়ে নাচ-গানে দক্ষ ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে স্বামী রবার্টের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে । ওদিকে কন্য্যা সন্তানটিকে একা তাঁর পক্ষে মানুষ করা কঠিন হচ্ছে।সেই সময় খুরশিদের সঙ্গে আলাপ। মেয়ের নাম গওহর রাখলেন ভিক্টোরিয়া। নিজে হলেন ‘মলকা জান’। 
কলকাতায় নাচ গানে গওহরের হাতেখড়ি।
 ক্লাসিক্যাল হিন্দুস্তানি থেকে ভোকাল মিউজিক, কত্থকে তালিম নিলেন ।ধ্রুপদী নৃত্য, বাংলা কীর্তনের সঙ্গে শিখেছিলেন রবীন্দ্রসংগীত । ‘হমদম’ ছদ্মনামে লিখতেন গজলও। ১৮৮৭ সালে দ্বারভাঙা রাজের দরবারে প্রথম  আত্মপ্রকাশ,বেনারসেও দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেন। ১৯১০ সালে প্রথমবার গেলেন মাদ্রাজ।
ধীরে ধীরে সেই সময়ের সবচেয়ে দামি শিল্পীতে পরিণত হলেন। তখন বাজারে এক ভরি সোনার দাম যেখানে ২০ টাকা ছিল, একটি গান গাইতে ৩০০০ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন গওহর। 
শুধু অভিজাত শ্রেণী,রাজা মহারাজারা গওহরের গান শুনবে? তাঁর গান সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়।১৯০২ সালে 78rpm-এ প্রথম গওহরের গান রেকর্ড করা হয়, যা বাজারে ছাড়ে গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া। যে কারণে গওহর ‘দ্য গ্রামোফোন গার্ল’ নামেও পরিচিত। ৬০০টিরও বেশি গান গেয়েছেন গওহর।  মামলা লড়তে গিয়ে জমি-বাড়ি বিক্রি করতে হয় তাঁকে। গওহরের গাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য গান হল, ‘জবসে গয়ে মোরি সুদ’, ‘রস কে ভরে তোরে ন্যায়ন’, ‘মেরে দর্দ-ই-জিগর’, আজও যার নিত্য নতুন সংস্করণ উঠে আসে।
 গওহরের গাওয়া ভজন ‘রাধে কৃষ্ণ বোল মুখসে’ আজও জনপ্রিয়।প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে মামলা মোকদ্দমায় সর্বশান্ত হয়ে কলকাতার বাড়িটা একদিন চোখের জলে ছাড়তে হয়েছিল ভারতের গানের রানিকে। মহীশূরের রাজার ডাকে শেষমেশ চিরতরে কলকাতাই ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।১৯৩০ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান গওহর। তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় সংগীতের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও গওহর ভারতীয় সংগীতের সেই দাপুটে রানি। যাঁর নাম শুনলেও কানে বাজে সেই সিগনেচার কণ্ঠ "মাই নেম ইজ গওহর জান"।