ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৪:২৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

কর্মক্ষেত্রে নারী কতটা নিরাপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জামিলা আশরাফ (ছদ্ম নাম) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কাজে ফাঁকি দেন না মোটেও। সময়মতো অফিসে আসেন। দিনের কাজ শেষ করেই বাসায় ফেরেন। এর পরও তাকে কথা শুনতে হয়। উঠতে-বসতে বস কথা শোনান। অথচ যারা চরম ফাঁকিবাজ পুরুষ সহকর্মী, তাদের কিছু বলেন না। নানা অজুহাতে বস হাত ধরেন। এই যেমন ফাইল দেওয়ার সময়, কলম নেওয়ার সময়। 

মানসিকভাবে জামিলা ভেঙে পড়েছেন। কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। মুখ বুজে সহ্য করছেন সব। সংসারে সচ্ছলতার জন্য চাকরিটা তার খুব দরকার।

অর্থনীতিতে নারীর অবদান বাড়ছে। সাফল্যের কথাও শোনা যায়। তবে এই সাফল্য, অবদান বৃদ্ধির নেপথ্যে কর্মক্ষেত্রে নারী কতখানি ভালো আছেন, সেটি গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

গার্মেন্টকর্মী রাশেদা। সুপারভাইজর কাজ দেখানোর নামে শরীরে হাত দেন। আশপাশের পুরুষ সহকর্মীরা তা দেখেন। দাঁত বের করে হাসেন। রাশেদার তখন খুব মন খারাপ হয়। তার কথা, অভাবের সংসার। সব মেনেই কাজ করি। কিছু বললে চাকরিই চলে যাবে। রাশেদা বেতন কম পান। একই কাজ করে পুরুষ সহকর্মী বেতন বেশি নিয়ে যান। আকাশে-বাতাসে হাকাকার ছড়িয়ে পড়ে রাশেদার। কেউ তা শোনার নেই।

৭৪ শতাংশ নারী পোশাক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য হন। শতকরা ৮৪ দশমিক ৭ জনকে কারখানার ভেতর মৌখিক নির্যাতন ও গালাগালের শিকার হতে হয়। শতকরা ৭১ দশমিক ৩ জনের ওপর মানসিক নির্যাতন করা হয়। শতকরা ২০ জনের শারীরিক নির্যাতন অর্থাৎ তারা মারধরের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন শতকরা ১২ দশমিক ৭ জন। কর্মজীবী নারী ও কেয়ার বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

নির্মাণশ্রমিকের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাড়িঘর যেখানেই নির্মাণ হচ্ছে, সেখানেই তাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। ইটভাঙা, ইট ওঠানো, বালি তুলে অনত্র নেওয়া, সুড়কি আনা-নেওয়া, সিমেন্ট নিয়ে রডের মধ্যে ফেলাÑ এমন সব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তারা করেন। কঙ্কালসার দেহ, মলিন মুখ নিয়ে কর্মরত থাকেন। একটুও ফাঁকি দেন না। পুরুষের চেয়ে শারীরিক শক্তিতে যে তারা পিছিয়ে, তা বোঝাই যায় না। মমতাজ বেগমের হাতে কয়েকটি ১০০ টাকার নোট। নির্মাণশ্রমিক সে। কত মজুরি পান বলতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন ৩০০ টাকা। কাছেই একজন পুরুষশ্রমিককে ৫০০ টাকা মজুরি নিয়ে চলে যেতে দেখলাম। মমতাজ বেগমের হাহাকারভরা দীর্ঘশ্বাসের কারণটা বুঝতে আর বাকি রইল না। কাজ একই, মানুষভেদে দুই রকম মজুরি। প্রায় সারাদেশে এই অবিচার হচ্ছে। মজুরিবৈষম্যের শিকার নারীশ্রমিক।

গায়ের রঙ দুধে-আলতা, লম্বা ছিপছিপে, এমবিএ পাস করার পর পরই পারসোনাল অ্যাসিসট্যান্ট পদে চাকরি পান নাইমা। পরিবারের সবাই কী যে খুশি! প্রথম কয়েকদিন ভালোই গেল। বস বয়সী মানুষ, ছেলেমেয়েরাও বড়। নাইমা নিশ্চিন্তই ছিলেন। অন্তত হয়রানির ভয় নেই। একদিন নাইমার হাত ধরে বস বলেন, চলো বাইরে খেতে যাই। আরেকদিন দরজা আটকিয়ে গল্প। সবশেষে কুপ্রস্তাব। নাইমাকে ইজ্জত বাঁচাতে চাকরি ছেড়েই দিতে হয়।

সুমনা বড় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। মার্চেন্ডাইজার। অন্যভাবে তিনি নির্যাতিত। যে কাজ পুরুষ সহকর্মীদের দিনে করার কথা, তারা তা সন্ধ্যার পর শুরু করেন। সুমনাকে বসে থাকতে হয় সারাদিন গাধার মতো খাটুনির পরও। কারণ ওই সহকর্মীদের কাজের সঙ্গে তার কাজের লিংক আছে। কিছু বললেও কাজ হয় না। এত তাড়া দেখান কেন, আমরাও তো বাসায় যাব- এমন কথা শুনতে হয়।

নির্যাতিত নারী কাউকে বলেন না। হৃদয়ে ক্ষত বয়ে বেড়ান। কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, মজুরিবৈষম্য, ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে জানা গেছে- ২২ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার।