ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৪:৩৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

চার দেয়ালের মাঝেই রাজধানীর শিশুদের বিনোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০১ পিএম, ২ জুন ২০১৭ শুক্রবার

শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও শিশু কল্যাণে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ, পুষ্টি, শিক্ষা ও বিনোদনের বিকল্প নেই। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ অভিভাবক নিজের বাসার ভেতরকেই শিশুদের বিনোদনের জায়গা বলে ভাবেন বা ভাবতে বাধ্য হন। শিশু অধিকারের অংশ হিসেবে সরকার থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ও বিনোদনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাই শিশু-কিশোর কল্যাণে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শিশু অধিকার সংরক্ষণ, শিশুর জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনাসহ শিশু নির্যাতন বন্ধ, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের বৈষম্য বিলোপ সাধনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিনোদনের জন্য বাইরের জগতে বেছে নেন না। ফলে শতাংশ শিশু ঘরের কোণেই চিত্তবিনোদন খুঁজে বেড়ান।

রাজধানীর শিশুদের শৈশবকাল এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব জানতে পরিচালিত গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, রাজধানীর জরিপভুক্ত এলাকার শিশুরা বিনোদনের জন্য বাসার বাইরের জগতকে প্রাধান্য দেন না। বাসায় থাকলেও একা একাই সময় কাটায় শিশুরা। ৯০ শতাংশ শিশু অভিভাবক বলেছেন, বিনোদনের জন্য বাসার উপরেই নির্ভর করতে হয় শিশুদের। ৭০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক বলেছেন ব্যস্ততার কারণে শিশুদের বাইরের ‘চাইল্ড জোন’গুলোতে নিয়ে যেতে পারেন না। ৭০ শতাংশের মতে, ঘরে থাকায় সময় কাটানো যেন ‘নগরজীবনের বাধ্যবাধকতা’। কারণ বাইরে কোথাও শিশুদের সময় কাটানোর উপায়ও তো নেই।

৫০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক বলেছেন- শিশুর চিত্তবিনোদনের বিষয়টি আলাদা ভাবে তারা ভাবেন না। শতভাগ অভিভাবকই বলেছেন রাজধানীতে শিশুদের বিনোদনের জন্য উপযুক্ত স্থান ও পরিবেশ নেই। এক্ষেত্রে রাজধানীর বিভিন্ন খেলার মাঠের বর্তমান হতশ্রী অবস্থা, পার্ক দখল, কিছু পার্কে নজরদারির অভাবে দিনেদুপুরেই চলা অসামাজিক কার্যক্রম, ভাল কোনো ইনডোর গেম জোন না থাকা প্রভৃতি বিষয়ও উল্লেখ করেছেন। তবে রাজধানীতে বর্তমানে বেশকিছু বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানায় চাইল্ড গেম জোন এবং বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চাইল্ড জোন তৈরি করা হয়েছে। এসবে ৪০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক সময় কাটানোর কথা বলেছেন। তবে একে অকেশনাল ৩০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক। মাত্র ১০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক বিনোদনের জন্য নিয়মিক চাইল্ড গেম জোনে যান। ইচ্ছা থাকলেও অভিভাবকদের ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেন না অনেক অভিভাবক। মোটা দাগে ভিডিও গেমস এবং মোবাইলে গেমস খেলে বা অন্য ভাবে বেশি সময় কাটানোর কথা বলেছেন অভিভাবকরা। এক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শিশু ভিডিও গেমস খেলে (অন্যান্য খেলার সাথে ভিডিও গেমস বেশে খেলে) সময় কাটায় বলে অভিভাবকরা বলেছেন। মোবাইলে গেমস খেলে (অন্যান্য খেলার সাথে মোবাইলে আসক্ত) ৩০ শতাংশ। টেলিভিশন দেখে (অভিভাবকরাই সময় কাটানোর জন্য বাচ্চাদের টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে দেন) ৬০ শতাংশ, পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটায় মাত্র ১০ শতাংশ (একা একা খেলে কথা বলে, কিন্তু সবার সাথে কথা বলে না), স্কুলে বাড়তি সময় দিয়ে খেলা করে এমন মাত্র ৮ শতাংশ শিশু। অথচ কয়েক বছর আগেও শিশুরা সবচেয়ে বেশি খেলাধুলা করতো এবং সময় কাটাতো স্কুলে ক্লাসের আগে এবং পরে। গল্পের বইয়ের বিষয়েও অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হয়। তবে সময় কাটানোর জন্য কোনো শিশু গল্পের বই পড়েছেন বা অভিভাবকরা গল্পের বই পড়িয়ে সময় কাটিয়েছেন এমন তথ্য কেউ জানাতে পারেননি। যদিও ফেব্রুয়ারি মাসে শিশুদের নিয়ে

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গিয়েছেন এমন ২৬ জন অভিভাবক পাওয়া গেছে জরিপে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, জরিপে মূলত ছয় বছরের নীচের শিশুদের বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে মোবাইল, গেমস, টেলিভিশন দেখা প্রভৃতি বিষয়গুলো এসব শিশুর সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে স্বাভাবিক বলেই মন্তব্য করেছেন অভিভাবকরা। এর চেয়ে বেশি বয়সের শিশু-কিশোররা সময় কাটায় মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউবের মাধ্যমে। রাজধানীর কিশোররা খুব একটা টেলিভিশন দেখেনা না বলেও জরিপে পাওয়া গেছে।

জরিপের ফলাফল নিয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মতামত গ্রহণ করা হয় বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী সালমা আলীর কাছ থেকে। তিনি উইমেননিউজকে বলেন, শিশুদের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে তাদের মানসিক গঠন বা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। শিশু-কিশোরদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো জরুরি।

তিনি বলেন, এখনকার অভিভাবকরা চান না তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে বের হোক। পথে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, এ ভয়ে তাদের একা বাইরে পাঠাতে ভরসা পান না অভিভাবকরা। রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলে খেলার মাঠ নেই। যার প্রভাবে শিশুরা ফ্ল্যাটে বা ঘরে বন্দি হয়ে পড়ছে। তাদের বিনোদনের একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র। টেলিভিশনের ‘কার্টুন’, ‘অ্যানিমেশন’, ‘ফেসবুক’, ‘টুইটার’- এসবের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে তাদের কচি বয়স। তিনি বলেন, এ প্রজন্মের শিশুদের শৈশব বদলে গেছে। তারা অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে শিশুরা সঠিক বা ভুলের পার্থক্য বুঝতে পারে না। অনেক সময় কোনো কিছু না বুঝেই তারা বড় ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তাই পরিবারের বড়দের উচিত শিশুদের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়া, তাদের সময় দেওয়া। তারা কখন কোথায় কীভাবে সময় ব্যয় করছে তার প্রতি নজর রাখা। ভালো-মন্দের ব্যবধান বুঝিয়ে দেওয়া এবং ভালোটাকে গ্রহণের মানসিকতা তৈরিতে সহযোগিতা করা। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২-এর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসক জেবুন নাহার বলেন, শিশুদের মানসিক গঠনে পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়া সবচেয়ে জরুরি।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা শিশুদের চিন্তায় সব সময় বুদ্ধিমত্তা, ভালোবাসা ও সরলতা বসবাস করে। এসব গুণ তাদের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব গড়তে সাহায্য করে। কিন্তু যান্ত্রিক এই শহরে শৈশবকালীন মনন ও মেধা বিকাশের সুযোগ অপর্যাপ্ত। প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ না থাকায় শিশুরা বন্দি হয়ে পড়েছে নিজের ঘরে। আর অনুকরণ করছে বড়দের কর্মকাণ্ড।

পুষ্টিবিদদের মতে, শিশু বয়সে খাদ্য সংযম করা একেবারেই ঠিক নয়। এতে তাদের শরীরে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে হরমোন, কিডনি এবং হার্টের সুস্থতার জন্য এ বয়সে এ ধরনের অভ্যাস ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদে শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বলেন, শিশুদের জন্য খেলাধুলা এবং শরীর চর্চা জরুরি। তাদের প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতে হবে। তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা তৈরি হলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যায়। ঠিকভাবে মেধা বিকশিত হয় না। মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদন তৈরিতে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ পরিচালনা করা হয় রাজধানীর পনের সড়কের পাশে অর্ধশত বাসভবনে। মোট ১০০ জনের মতামত গ্রহণ করা হয়। এপ্রিল থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। তবে জরিপে আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করার ক্ষেত্রে পূর্বের ছয় মাস (২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত) গণনা করা রয়েছে। মোট দশটি প্রশ্নের ভিত্তিতে পরিচালিত জরিপের আলোকে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।