ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:২০:১১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সংসদে উচ্চকক্ষের প্রয়োজন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:১৯ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কিছু দুর্বলতার কথা তুলে ধরে উচ্চকক্ষের সংসদ গঠনের প্রস্তাব আপাতত বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিদ্যমান এক কক্ষের সংসদ ব্যবস্থাকেই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে সিপিডির গবেষকরা এমন মত দেন। 

তবে আলোচকদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চকক্ষের সংসদের পক্ষেও কিছু যুক্ত তুলে ধরেন। পরে অনুষ্ঠানের সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, এটা সিপিডির চূড়ান্ত কোনো মত নয়। সিপিডির গবেষণায় দ্বিকক্ষ সংসদের কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সিপিডি মতামত জানাবে। 
সংসদীয় সংস্কার ও জবাবদিহিবিষয়ক একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশনকে সিডিপির গবেষকরা বলেন, তারা যেন চূড়ান্ত ঐকমত্যের তালিকা থেকে উচ্চকক্ষ সংসদ গঠনবিষয়ক প্রস্তাবটি বাদ দেন।

সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম আহমেদ।  
সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার ধারণা যেমন– বাইক্যামেরালিজম, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব কার্যকর নয়। 

অধ্যাপক নিজাম আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দলীয় লোক নিয়োগ করতে পারে। আবার উচ্চকক্ষের তেমন ক্ষমতা নেই। নিম্নকক্ষ না চাইলে উচ্চকক্ষ কিছুই করতে পারবে না। আবার নিম্নকক্ষ চাইলে উচ্চকক্ষের আপত্তি থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন করা যাবে। তাহলে উচ্চকক্ষ রাখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। 

বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কয়েকটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিরোধীদলীয় এমপিদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ; রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; স্থানীয় সরকারকে আর্থিকভাবে আরও স্বনির্ভর করা; স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো; দলত্যাগ রোধে আইনি সংস্কারসহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবকিছুতেই ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। বিভিন্ন মতের মধ্যে ঐক্য খুঁজে নিতে হবে। শেখ হাসিনাও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার সুযোগ থাকায় তিনি দানবে পরিণত হয়েছিলেন। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা গেলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিস্ট হতে পারবে না। 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, আমাদের রাজনীতির কার্যকর পরিবর্তন দরকার। বিএনপি সেটা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগে সংসদে শুধু ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হতে দেখেছি। তবে বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে রাজি না। যে সুশীল সমাজের জন্য উচ্চকক্ষের কথা বলা হচ্ছে, দেশে সেই সুশীলরাও আজ বিভক্ত। এখন সবাই এমপি হতে চান। এমপির ক্ষমতা কমালে কেউ এমপি হতে চাইবেন না। 

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলিম বলেন, দ্বিকক্ষের সংসদ হলে জনপ্রতিনিধি বেশি থাকে। এতে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকে। দল স্বৈরাচার হতে পারে না। জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় যেসব দলের লোক এমপি হতে পারেন না, তাদের কোনো প্রতিনিধিত্বই সংসদে থাকে না। কিন্তু তারা তো অনেক ভোট পান। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ২০২৪ সালের আগে কখনও উচ্চকক্ষের আলোচনা শুনিনি। শেখ হাসিনার পতনের পর বিদেশ থেকে এসে কিছু লোক সরকারে ঢোকার পর উচ্চকক্ষের কথা শুনছি। সিপিবি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় উচ্চকক্ষের প্রয়োজন নেই। 

এনসিপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, একটি দলের কর্মসূচি ও আদর্শকে মাথায় রেখে বর্তমান সংবিধান করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধান তো একটি দলের জন্য না। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দলই ৫০ শতাংশ ভোট পাবে না। দেশে সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করা যাবে। পিআর চালু করলে চিরতরে স্বৈরাচার হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতন্ত্র দেখতে চায়। আগামী বছর নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন  আন্তর্জাতিক মানের একটি ভোটের আয়োজন করবে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বাড়বে। ইইউ বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্রের সঙ্গী হতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চায়। 

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে রওনক জাহান বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা দেওয়ার দরকার নেই। এবার যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা যেন বলেন আমরা গাড়ি চাই না। প্রার্থীরা প্রতিবছর তাদের সম্পত্তির হিসাব দাখিল করবেন। ওয়েবসাইটে সেটা দেওয়া থাকবে। এসব বিষয় সিপিডি দেখতে চায়।